রেলে অনিয়ম: পুলিশের বাধায় কমলাপুর প্ল্যাটফর্মে অবস্থান ঢাবি শিক্ষার্থীর

রেলে অনিয়ম: পুলিশের বাধায় কমলাপুর প্ল্যাটফর্মে অবস্থান ঢাবি শিক্ষার্থীর

বাংলাদেশ রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা পরিবর্তনে ছয় দফা দাবি পূরণে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েও (আলটিমেটাম) কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো আশ্বাস পাননি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি। তাই আলটিমেটামের সময়সীমা শেষ হওয়ার পর শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

ওই ঘোষণার পর কমলাপুর রেলস্টেশনে ঢুকতে গেলে রেলওয়ে পুলিশের সঙ্গে মহিউদ্দিন ও তাঁর সঙ্গীদের ধাক্কাধাক্কি হয়েছে। পরে প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের ফটকের সামনে অবস্থান নিয়েছেন মহিউদ্দিনসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী।

ছয় দফা দাবিতে ৭ জুলাই থেকে কমলাপুর স্টেশনে টানা অবস্থান নিয়ে থাকা মহিউদ্দিন দুদিন আগে রেল কর্তৃপক্ষকে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন। এ সময়েও কোনো আশ্বাস না পেয়ে আজ বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটার দিকে কমলাপুর রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মের সামনে সহযোগীদের নিয়ে অবস্থান নিয়েছেন তিনি।

বেঁধে দেওয়া সময়সীমা শেষ হওয়ার পর আজ বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় জড়ো হন মহিউদ্দিন ও তাঁর সহযোগী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের একদল শিক্ষার্থী। পরে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে দাঁড়িয়ে কমলাপুরে সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণা দেন মহিউদ্দিন। এরপর বেলা চারটার দিকে টিএসসি থেকে হেঁটে শাহবাগে যান মহিউদ্দিন ও তাঁর সহযোগীরা। পরে শাহবাগ থেকে বাসে করে তাঁরা কমলাপুর রেলস্টেশনে পৌঁছান সাড়ে চারটার দিকে।

রেলস্টেশনের সামনে মহিউদ্দিন উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় রেল পুলিশের এক দল সদস্য সেখানে অবস্থান করছিলেন।

এ সময় মহিউদ্দিন বলেন, ‘আমার ছয় দফা দাবির শুধু একটা অভিযোগের রায় হয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে। কিন্তু আমি চাই স্থায়ী সমাধান, টেকসই সমাধান। প্রতিটি মানুষের জন্য সুবিচার নিশ্চিত করতে চাই। ৪৮ ঘণ্টায় রেল কর্তৃপক্ষ দাবির বিষয়ে কোনো আশ্বাস দিতে পারেনি। তাদের আর কোনো সময় দেওয়া যাচ্ছে না। এবার হিসাব-নিকাশ করতে এসেছি।’

মহিউদ্দিন আরও বলেন, ‘রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যে লুটপাট করেছেন, তাঁদের কী কী হবে, তা কল্পনা করুন। আমরা সহিংসতা চাই না। রেল কর্তৃপক্ষ ভালোয় ভালোয় ছয় দফা দাবি মেনে নিন। এই ছয় দফা সারা বাংলাদেশের মানুষের দাবি। রেল জনগণের সম্পদ, কারও বাপ-দাদার সম্পত্তি নয়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হুমকি দেওয়া হয়েছে। কারও গায়ে হাত দিলে সেই হাত আমরা ভেঙে দেব। আমি শুধু একটা আশ্বাস চাই, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্বাস।’

সর্বস্তরের জনগণকে রেলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হওয়ার আহ্বান জানান মহিউদ্দিন। বলেন, ‘কালকের মধ্যে দেশের প্রতিটি স্টেশনে সবাই দাঁড়িয়ে যাবেন। সেখানে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করবেন। আপনাদের কোনো ভয় নেই। আদালত আমাকে ডেকেছেন, কিন্তু এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত আমাকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। আদালত ডাকলে আমি অবশ্যই যাব।’

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার পর মহিউদ্দিন ও তাঁর সহযোগীরা রেলস্টেশনের ভেতরে ঢুকতে গেলে রেল পুলিশ ও আনসার সদস্যরা তাঁদের বাধা দেন। কিছুক্ষণ ধাক্কাধাক্কির পর তাঁরা বাধা পেরিয়ে রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মের সামনে চলে যান। প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের জায়গা থেকে কিছুটা সামনে তাঁরা মেঝেতে বসে পড়েন। এ সময় রেলওয়ের দুর্নীতির বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দিতে থাকেন তাঁরা। বেলা পৌনে ছয়টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় এ অবস্থান কর্মসূচি চলছিল।

গত ১৩ জুন বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইট থেকে ঢাকা-রাজশাহী রুটের ট্রেনের আসন বুক করার চেষ্টা করেন মহিউদ্দিন। কিন্তু মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশ থেকে ভেরিফিকেশন কোড (যাচাইকরণ কোড) দিয়ে তাঁর পিন কোড (গোপন কোড) ছাড়াই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেওয়া হয়। মহিউদ্দিন ট্রেনের কোনো আসন পাননি, এমনকি কেন টাকা নেওয়া হলো, সে বিষয়ে কোনো ডকুমেন্টও (রসিদ) তাঁকে দেওয়া হয়নি। সেদিন কমলাপুর রেলস্টেশনে সার্ভার কক্ষে অভিযোগ জানালে সেখান থেকে তাঁকে ‘সিস্টেম ফল’ করার কথা বলা হয় এবং ১৫ দিনের মধ্যে টাকা না পেলে আবার যেতে বলা হয়। কিন্তু ওই মুহূর্তে ওই কক্ষে থাকা কম্পিউটার অপারেটর ৬৮০ টাকার আসন ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করেন বলে অভিযোগ মহিউদ্দিনের।

মহিউদ্দিন জানান, ওই ঘটনার বিষয়ে ১৪ ও ১৫ জুন দুবার তিনি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করেন। কিন্তু সেখান থেকে কোনো জবাব বা শুনানির জন্য ডাক না পেয়ে ৭ জুলাই থেকে তিনি কমলাপুর রেলস্টেশনের টিকিট কাউন্টারের সামনে অবস্থান ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচি শুরু করেন। অবস্থানের তৃতীয় দিনে ৯ জুলাই পুলিশ সদস্যরা তাঁকে বাধা দেন। তখন থেকে তিনি গণস্বাক্ষর বন্ধ রেখে শুধু অবস্থান কর্মসূচি করতে থাকেন। ১০ জুলাই পবিত্র ঈদুল আজহার দিনও কমলাপুরে অবস্থান করেন তিনি। তাঁর অভিযোগ ও আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর গতকাল বুধবার সহজ ডট কমকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করেছে।