ইসি রাজনৈতিক বিরোধের সালিশি সংস্থা নয়: জাসদ

ইসি রাজনৈতিক বিরোধের সালিশি সংস্থা নয়: জাসদ

নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক বিরোধের সালিশি সংস্থা নয় বলে মন্তব্য করেছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ। এ ছাড়া নির্বাচনে ধর্মের ব্যবহার কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে দলটি।

রবিবার রাজধানীর আগারগাঁয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপের লিখিত বক্তব্যে এসব কথা জানায় জাসদ। বক্তব্য পাঠ করেন দলটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু।

জাসদের দাবি, নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ বা বর্জনের বিষয়টি একান্তই তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত।

লিখিত বক্তব্যে জাসদ বলেছে, ‘কোনো রাজনৈতিক দলের কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ বা বর্জনের বিষয়সহ কোনো রাজনৈতিক বিতর্কেই নির্বাচন কমিশনের জড়িত হওয়া বা মতামত, বক্তব্য, মন্তব্য দেওয়া উচিৎ নয়। নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক বিরোধে সালিশি সংস্থা নয়।’

জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বে ১৬ জনের একটি প্রতিনিধি দল ইসির সঙ্গে সংলাপে বসে। এ সংলাপে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার স্বাক্ষরিত লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘জাসদ মনে করে, সংবিধান ও আইন অনুযায়ী জাতীয় নির্বাচন ও স্থানীয় সরকারসমূহের নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠানের কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব সংবিধান ও আইন অনুযায়ী জাতীয় নির্বাচনসহ সকল নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে প্রস্তুত থাকা।’

‘জাসদ মনে করে, নির্বাচন নিয়ে সংবিধান ও আইন বহির্ভূত কোনো অসাংবিধানিক ও আইনসম্মত নয় এমন কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য বা প্রস্তাবকে নির্বাচন কমিশনের প্রশ্রয় দেওয়া উচিৎ নয়। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ মনে করে, কিছু ব্যক্তি বিদেশি কূটনৈতিক বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের কাজে অযাচিতভাবে নাক গলিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের উচিৎ এ ধরনের কূটনৈতিক শিষ্টাচার ও অযাচিত নাক গলানোকে প্রশ্রয় না দেওয়া।’

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘জাতীয় নির্বাচনসহ অন্যান্য নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের জন্য কমিশনের এখতিয়ার, ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব নিয়ে কোনো সাংবিধানিক, আইনগত ও প্রশাসনিক ঘাটতি বা দুর্বলতা থাকলে তা দূর করার জন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশসহ অন্যান্য নির্বাচনি আইনে কোনো পরিবর্তনের প্রয়োজন বা চাহিদা থাকলে নির্বাচন কমিশনের উচিৎ, তা সুনির্দিষ্টভাবে আইনসভায় অর্থাৎ জাতীয় সংসদের কাছে উত্থাপন করা। কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তিও এমন প্রয়োজনবোধ করলে তা আইনসভায় অর্থাৎ, জাতীয় সংসদের কাছে সুনির্দিষ্টভাবে উত্থাপন করতে পারেন।’

বক্তব্যে বলা হয়, ‘জাসদ বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থায় ইভিএম পদ্ধতি সংযোজনকে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে স্বাগত জানায়। ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণে বাস্তবে কিছু সমস্যা চিহ্নিত হয়েছে। কিছু প্রশ্ন ও বিতর্কও তৈরি হয়েছে। জাসদ ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণের অভিজ্ঞতা থেকে চিহ্নিত সমস্যাসমূহ সমাধান করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ জানাচ্ছে। একইসঙ্গে ইভিএম পদ্ধতিতে কারিগরিভাবে ত্রুটিমুক্ত ও বিশ্বাসযোগ্য কাজ করার পাশাপাশি ব্যালট পদ্ধতিতেও ভোট গ্রহণের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।’

‘বর্তমানে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি, সংযোজন, বিয়োজন, সংশোধনের সমগ্র প্রক্রিয়াটি জটিল ও সময়সাপেক্ষ’ উল্লেখ করে এই প্রক্রিয়াকে আরও সহজ এবং দ্রুতগতিসম্পন্ন করার দাবি জানায় জাসদ।

এ ছাড়া গণপ্রতিনিধত্ব আদেশের কঠোর প্রয়োগ করে ধর্মভিত্তিক ও ধর্মীয় পরিচয়ে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল এবং এ ধরনের দলকে নিবন্ধন না দেওয়ার দাবি জানায়।

এদিকে, নির্বাচনী ব্যয়সীমা যৌক্তিকীকরণ ও আইনের ফাঁকফোঁকর গলিয়ে অবৈধ অর্থের ব্যবহার বন্ধের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানায় দলটি।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘জাসদ মনে করে, নির্বাচন কমিশন প্রয়োজন বোধ করলে নির্বাচনকালে জনপ্রশাসনের কাজে প্রতিরক্ষা বাহিনীকে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটদের অধীনে ব্যবহার করতে পারবে।’