দেশে পেট্রলের মজুদ আছে ১৩ দিনের, অকটেন ১১ দিনের

দেশে পেট্রলের মজুদ আছে ১৩ দিনের, অকটেন ১১ দিনের

জ্বালানি তেলের চাহিদা পূরণে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। এরই মধ্যে পেট্রল ও অকটেনের মজুদ দিন দিন কমে আসছে বলে ধারণা দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা দেশের মজুদকৃত জ্বালানি তেলে এক মাস চাহিদা পূরণ করা যাবে জানালেও, বর্তমান মজুদ ও দৈনিক জ্বালানি তেল বিক্রির পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দেশে পেট্রলের মজুদ আছে ১৩ দিনের এবং অকটেনের ১১ দিনের।

মূলত ডলার সংকটে ব্যাংকে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে না পারা এবং বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের উচ্চমূল্য এই সংকট তৈরি করেছে। এ কারণে পরিকল্পনা অনুযায়ী জ্বালানি তেল আমদানি ব্যাহত হচ্ছে বিপিসির। আগস্ট মাসের ৩ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন জ্বালানি তেলের চাহিদার বিপরীতে বিপিসি ১৯ জুলাই পর্যন্ত মাত্র ১ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল আমদানির ঋণপত্র খুলতে পেরেছে।

জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে দেশে ডিজেলের মজুদ আছে ৪ লাখ ৫ হাজার মেট্রিক টন, ফার্নেস অয়েল প্রায় ৮২ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন। অকটেন মজুদ আছে ১৪ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন, জেড ফুয়েল ৫৮ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন, পেট্রল প্রায় ১৭ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন এবং কেরোসিন আছে ১৩ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন।

এ প্রসঙ্গে বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ বলেন, 'জ্বালানি তেল দেশের অগ্রাধিকারভিত্তিক পণ্য। তাই এ ব্যাপারে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে জ্বালানি তেল নিয়ে কেউ কেউ গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করছে। বিপিসি এ ব্যাপারে সতর্ক আছে। জ্বালানি তেল নিয়ে যেন কেউ অবৈধ মজুদ গড়ে তুলতে না পারে।'

সরবরাহ স্বাভাবিক আছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতির মধ্যেও বিপিসির আন্তর্জাতিক এবং অভ্যন্তরীণ সরবরাহ লাইন স্বাভাবিক আছে। বর্তমানে দেশে ২০ দিনের পেট্রল, ৩৪/৩৫ দিনের ডিজেল এবং ৪০ দিনের অকটেন মজুদ আছে। জ্বালানি তেল আমদানি স্বাভাবিক রাখতে সরকার সচেষ্ট।'

বিপিসির কর্মকর্তারা জানান, দেশে ডিজেলের মজুদ ক্ষমতা ৬ লাখ মেট্রিক টনের বেশি। অকটেন মজুদ ক্ষমতা ৪৬ হাজার মেট্রিক টন, পেট্রল ৩২ হাজার মেট্রিক টন, কেরোসিন ৪২ হাজার মেট্রিক টন। আর ফার্নেস অয়েল মজুদ রাখা যায় ১ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন।

বিপিসির নিয়ন্ত্রণাধীন পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল কোম্পানির বিভিন্ন ডিপোতে এবং ইস্টার্ন রিফাইনারিতে এসব জ্বালানি তেল সংরক্ষণ করার জন্য ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এই মজুদ ক্ষমতা দিয়ে দেশে ৪৫ দিনের জ্বালানি তেলের চাহিদা পূরণ করা যায়। যদিও জ্বালানি নীতিমালায় দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ৬০ দিনের মজুদ ক্ষমতা গড়ে তোলার বিষয়টি উল্লেখ আছে।

এদিকে চলতি মাসের ২৫ দিনের জ্বালানি তেল বিক্রির পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বর্তমানে দেশে দৈনিক ডিজেলের চাহিদা প্রায় ১৩ হাজার ৪৫৩ মেট্রিক টন। ফার্নেস অয়েলের চাহিদা দৈনিক ২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। অকটেন চাহিদা ১ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন। পেট্রলের চাহিদা ১ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন। এছাড়াও জেড ফুয়েল দৈনিক ১ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন করে বিক্রি হয়েছে।

বিপিসির শীর্ষ কর্মকর্তারা এক মাসের জ্বালানি মজুদের কথা বললেও জ্বালানি তেল মজুদের পরিমাণ ও দৈনিক বিক্রির পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ থেকে উঠে আসছে ভিন্ন চিত্র। তাছাড়া বিভিন্ন ডিপোতে যে পরিমাণ জ্বালানি তেল মজুদ আছে তার ১০ শতাংশ (তলানি) পাম্পযোগ্য নয়। সেই হিসেবে দেশে মজুদ অকটেন দিয়ে ১১ দিনের এবং মজুদকৃত পেট্রল দিয়ে আর ১৩ দিনের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে।

সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনে ডিজেলের ব্যবহার বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার আগে অর্থাৎ গত ১৭ জুলাই ডিজেলের বিক্রি হয়েছে ২০ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন। সরকারি এই ঘোষণার পর একদিনের ব্যবধানে ডিজেল বিক্রি কমেছে প্রায় ৭ হাজার ২০০ মেট্রিক টন।

বিপিসির কর্মকর্তারা আরও জানান, চলতি বছরের জুন মাসে বিপিসি থেকে বিদ্যুৎ সেক্টরে ডিজেল সরবরাহ করা হয়েছে ২ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন। ফার্নেস অয়েল সরবরাহ করা হয়েছে ৫ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন। ২০২০-২১ অর্থবছরের জুন মাসে বিদ্যুৎ সেক্টরে ডিজেল সরবরাহ করা হয়েছিল ৫ লাখ মেট্রিক টন।

জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিপিসির পরিকল্পণা অনুযায়ী আগামী আগস্ট মাসে ডিজেল আমদানি করা হবে সাড়ে ৩ লাখ মেট্রিক টন, অকটেন আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে ৫০ হাজার মেট্রিক টন এবং জেড ফুয়েল আনা হবে ৫০ হাজার মেট্রিক টন।

কিন্তু চলতি মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত ডিজেল আমদানির জন্য বিপিসি বিভিন্ন ব্যাংকে মাত্র ৩টি ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পেরেছে। এই ৩টি এলসির বিপরীতে প্রায় ১ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল আমদানি করা হবে।

বিপিসির কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, ব্যাংকগুলো ডলার সংকটের অজুহাতে ঋণপত্র খুলছে না।

জ্বালানি তেল আমদানি প্রসঙ্গে বিপিসির পরিচালক (অপারেশন ও বাণিজ্য) খালিদ আহম্মেদ বলেন, বিদেশি কোম্পানিগুলোর সাথে বিপিসির চুক্তি অনুযায়ী জ্বালানি তেলের সরবরাহ লাইন এখনো স্বাভাবিক আছে। সরকার চাইছে দেশে জ্বালানি তেলের ব্যবহার ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কমাতে। এই লক্ষ্যে আমরা (বিপিসি) কাজ করছি। ইতোমধ্যে সরকার বিদ্যুৎ সেক্টরে জ্বালানি তেলের ব্যবহার কমিয়েছে। পরিবহণ সেক্টরেও জ্বালানি তেলের ব্যবহার কমানোর পরিকল্পনা আছে।-দ্য ডেইলি স্টার