১৪৫ টাকা মজুরি মানেন না চা-শ্রমিকেরা

১৪৫ টাকা মজুরি মানেন না চা-শ্রমিকেরা

চা-শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১৪৫ টাকা নির্ধারণ করার পর চলমান অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন। ধর্মঘটের অষ্টম দিনে আজ শনিবার সরকারের সঙ্গে বৈঠকের পর বিকেল চারটার দিকে এই ঘোষণ দেন চা-শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল। এর তিন ঘণ্টা না যেতেই সাধারণ চা-শ্রমিকদের রোষানলে পড়ে এবং বিভিন্ন ভ্যালি কমিটির সমর্থন না পেয়ে আবার ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে চা-শ্রমিক ইউনিয়ন। সন্ধ্যা সাতটার দিকে নিপেন পালের ঘোষণাতেই ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার কথা জানানো হয়েছে।

দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট ডেকেছিলেন চা-শ্রমিকেরা। ধর্মঘটের অষ্টম দিনে আজ সরকারের পক্ষ থেকে শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী, মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য মো. আবদুস শহীদ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকে বসেন চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। বৈঠকে চা-শ্রমিকদের মজুরি ১২০ টাকা থেকে ২৫ টাকা বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্বাসে সরকারের এই প্রস্তাব শ্রমিকেরা মেনে নিয়েছেন বলে জানান নিপেন পাল।

তবে সন্ধ্যা সাতটার দিকে সিদ্ধান্ত উল্টে যায়। প্রথম আলোকে নিপেন পাল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে আমরা সম্মান জানাই। ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার পর বিভিন্ন চা-বাগান থেকে পঞ্চায়েত কমিটি ও ভ্যালি কমিটির নেতারা আমাদের ফোন দিয়ে জানান, ১৪৫ টাকা মজুরি মেনে নেবেন না জানিয়ে শ্রমিকেরা বাগানে বাগানে আন্দোলন শুরু করেছেন। শ্রমিকেরা বৈঠকের সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। তাই আমরা শ্রমিকদের কথা চিন্তা করে ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিচ্ছি।’

এদিকে বিকেল চারটায় যখন ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা আসে, তখনই ওই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করেন বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের মনু ধলাই ও লস্করপুর ভ্যালির নেতারা। তাঁরা তখনই ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। ধর্মঘট প্রত্যাহার করার খবর শুনে ঢাকা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের চৌমোহনায় অবস্থান নেন চা-শ্রমিকেরা। সেখানে শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ ও চুনারুঘাটের চা-শ্রমিকেরা রাস্তায় বসে স্লোগান দেন। সেখানে উপস্থিত চা-শ্রমিক নারী নেত্রী খায়রুন আক্তার বলেন, ‘ইউনিয়নের নেতারা কাউকে কিছু জিজ্ঞেস না করে কীভাবে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন? আমরা শ্রমিকেরা চাঁদা দিই, সেই চাঁদায় তাঁরা নেতাগিরি করেন। আমাদের যৌক্তিক আন্দোলন তাঁরা প্রত্যাহার করতে পারেন না। আমরা সেটা মেনে নেব না।’

লস্করপুর ভ্যালির সাধারণ সম্পাদক অনিরুদ্ধ বাড়াইক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের লস্করপুর ভ্যালির ২৩টি চা-বাগানের বাগান পঞ্চায়েত নিয়ে আমরা বসেছিলাম। তাঁরা সবাই ১৪৫ টাকা মজুরিতে ধর্মঘট প্রত্যাহারে অস্বীকৃতি জানান। আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটির মাত্র ৪ জন লোক আমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা না করে এভাবে ১৪৫ টাকায় রাজি হলেন কীভাবে বুঝলাম না। ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে আমাদের আন্দোলন চলছে, চলবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ধর্মঘট ছাড়ছি না।’

মনু ধলাই ভ্যালির সভাপতি ধনা বাউরি বলেন, ‘আমাদের শ্রমিকেরা ১৪৫ টাকা মজুরি মানছেন না। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলে দিতে চাই, যদি বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে থাকে তাহলে আমরাও স্বাধীন হয়ে বাঁচতে চাই। আমাদের কেন মানসিকভাবে নির্যাতন করছেন?’ তিনি বলেন, করোনাকালে যখন সবকিছু বন্ধ ছিল, তখনো আমাদের শ্রমিকেরা করোনার ভয় কাটিয়ে কাজ করে গেছেন। আমাদের শ্রমিকেরা কত কষ্ট করে কাজ করেন। আমরা এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমাদের ২৩টি চা-বাগানে কাজ বন্ধ থাকবে। দাবি আদায়ে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদকের আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা আমরা প্রত্যাহার করলাম।’

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কেন্দ্রীয় কমিটি প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছি। এখন শ্রমিকেরা যদি সেটা মেনে না নেন, আমরা তাঁদের কীভাবে বোঝাব? চা-শ্রমিকেরা আমাদের প্রাণ, তাঁরা আমাদের নেতা বানিয়েছেন। তাঁদের সিদ্ধান্তের গুরুত্ব আমাদের দিতে হবে। আমরা শ্রমিকদের পাশে আছি। সারা দেশে ধর্মঘট চলবে।’

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা বলেন, ‘আমাদের বৈঠকে ডেকে নিয়ে একধরনের চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে। আমাদের শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেই আন্দোলন প্রত্যাহার করার ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়েছিলাম।’