তাদের ইলেকশনে আনতে হবে, এত আহ্লাদ কেন: শেখ হাসিনা

তাদের ইলেকশনে আনতে হবে, এত আহ্লাদ কেন: শেখ হাসিনা

বিএনপির সঙ্গে সমঝোতায় বিভিন্ন গোষ্ঠী সরকারকে চাপ দিচ্ছে—এমন ইঙ্গিত করে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন তাদের সঙ্গে বসতে হবে। তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তাদের খাতির করতে হবে। তাদের ইলেকশনে আনতে হবে। এত আহ্লাদ কেন, আমি তো বুঝি না।

বাংলাদেশে কি আর মানুষ নেই? বিদেশিদের কাছে গিয়ে কান্নাকাটি করে। সেখানে থেকে এসে রিকোয়েস্ট করে, কোনোমতে তাদের একটু জায়গা দেওয়া যায় কি না? জায়গা দেবে কি না, সেটা ভাববে জনগণ। সে সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশের জনগণ। তারা আবার সেই সন্ত্রাসের যুগে ফেরত যাবে, নাকি আজকে বাংলাদেশের যে উন্নয়ন হচ্ছে, সেই উন্নয়নের যুগে থাকবে, এ সিদ্ধান্ত তো জনগণকে নিতে হবে।’

গ্রেনেড হামলা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণসভায় এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা। আজ রবিবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ সভা হয় সকাল সাড়ে ১০টায়।

আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা তো জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছি। কেউ যদি ইলেকশন করে; ইলেকশন করবে কীভাবে? যে দলের নেতাই নেই, সাজাপ্রাপ্ত অথবা পলাতক, তারা ইলেকশন করবে কী, আর কীভাবে ভোট পাবে? ভোট কাকে দেখে দেবে—এটাই তো প্রশ্ন। তারপরও অনেক চক্রান্ত আছে। এখনো যেমন নানা রকমের চক্রান্ত। ইলেকশন সামনে এলেই শুরু হয়। কিন্তু এ দেশের মানুষের ওপর আমার আস্থা আছে। বিশ্বাস আছে।’

আজ ভাষণের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী ২১ আগস্ট নিহত নেতা–কর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেন। বক্তৃতার সময় তিনি কয়েকবার আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা স্প্লিন্টার নিয়ে বেঁচে আছে, প্রত্যেকেই কিন্তু কষ্ট ভোগ করছে। যত বয়স বাড়ছে, ততই তাদের শরীরের যন্ত্রণা বাড়ছে। আমি সকলের খোঁজ রাখি। বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট থেকে তাদের সাহায্য করি। আমার যতদূর সাধ্য, করে দিয়েছে। আমি কাউকে ফ্ল্যাট কিনে দিয়েছি। কাউকে জমি কিনেছি। ঘর করে দিয়েছি। মাসোহারার ব্যবস্থা করে দিয়েছ। প্রতি মাসে ওষুধ কেনার টাকা দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু তারা যা হারিয়েছে, সেটা তো ফেরত দিতে পারব না। তাদের শরীরের যন্ত্রণা তো প্রশমন করতে পারব না।’

আওয়ামী লীগ প্রতিশোধের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না—এমনটি জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই যে কষ্টগুলো নিয়ে মানুষ বেঁচে আছে, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বারবার আঘাতের শিকার হচ্ছে, কিন্তু আমরা সরকারে এসে তো রিভেঞ্জ (প্রতিশোধ) নিতে যাইনি। আমরা তো ওদের ঘরবাড়ি দখল করতে যাইনি। হাতুড়ি দিয়েও পিটিয়ে মারিনি। কারাগারেও রাখিনি। কিছুই করিনি।’

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সম্পৃক্ততার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়ার বক্তৃতাগুলো অনুসরণ করবেন। কোটালীপাড়া বোমা পুঁতে রাখার আগে বলেছিল, আওয়ামী লীগ শত বছরেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার আগে—শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, বিরোধী দলের নেতাও কোনো দিন হতে পারবে না। এগুলোর তো রেকর্ড আছে।

এই বক্তৃতা আগাম দিল কীভাবে যে বিরোধী দলের নেতা হতে পারব না। তার মানে আমাকে হত্যা করবে—এ পরিকল্পনা তারা নিয়ে ফেলেছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এ–জাতীয় হত্যাকাণ্ড হতে পারে না। লক্ষ্য তো ছিল আমাকে হত্যা করা, আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করা। আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া চেষ্টা করেছিল। এরপর একাত্তরে চেষ্টা করা হয়েছিল। জিয়াউর রহমান চেষ্টা করেছিল। আজকে গুম–খুন নিয়ে কথা বলে। আমি তো মনে করি, আমাদের আওয়ামী লীগের যত নেতা-কর্মী আছে, ওই জিয়ার আমলে যাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর যাদের হত্যা করা হয়েছিল, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আসা দরকার যে তারা কী করেছিল।’