রোহিঙ্গাদের অপকর্মে অতিষ্ঠ স্থানীয়রা

রোহিঙ্গাদের অপকর্মে অতিষ্ঠ স্থানীয়রা

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নির্যাতন ও বলপ্রয়োগে বাস্তচ্যুত রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে আশ্রয় দেওয়া গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গারা খুনাখুনিতে লিপ্ত হচ্ছে।

মাদক ব্যবসা, অপহরণ ও ছিনতাইসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে তারা স্থানীয় বাসিন্দাদের জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে কক্সবাজারের প্রায় আট হাজার একরের বেশি বনভ‚মি ধ্বংস হয়েছে। পরিবেশেরও বিপর্যয় ঘটেছে।

২৫ আগস্ট বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আসার পাঁচ বছর পূর্ণ হচ্ছে। তাদের ফেরত পাঠাতে কোনো উদ্যোগই কাজে আসেনি। আদৌ রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো যাবে কি না, তা নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ-মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার কথা মুখে বললেও ক্যাম্পে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের মদদ দিচ্ছে। যাতে আন্তর্জাতিক মহলে রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী হিসাবে প্রমাণ করে প্রত্যাবাসন ঠেকানো যায়। গত পাঁচ বছর রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল­াহসহ শতাধিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। যদিও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার তথ্যমতে, পাঁচ বছরে ক্যাম্পে ১২০টির বেশি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।

নির্যাতনের মুখে প্রাণভয়ে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয়। এর আগে থেকে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাসহ মোট রোহিঙ্গার সংখ্যা দাঁড়ায় ১১ লাখের বেশি। পাঁচ বছরে ক্যাম্পে ১ লাখের বেশি শিশু জš§ নিয়েছে।

রোহিঙ্গা নেতা হামিদ হোসেন বলেন, দীর্ঘ সময় প্রত্যাবাসন না হওয়ার কারণে অনেক রোহিঙ্গা ভুলতে বসেছে তাদের একটি দেশ আছে। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে বলে তার বিশ্বাস হয় না। তিনি বলেন, ক্যাম্পে এখন যে খুনাখুনিসহ বিশৃঙ্খলা ঘটছে, এর পেছনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মদদ রয়েছে। ইয়াবা ব্যবসায়ী রোহিঙ্গারা প্রায় সবাই মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সোর্স হিসাবে কাজ করছে।

রোহিঙ্গা অধ্যুষিত উখিয়া পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, শুধু আমার এলাকায় ৮ লাখের বেশি রোহিঙ্গার বাস। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গারা দল বেঁধে বাড়ি ঘেরাও করে স্থানীয়দের তুলে নিয়ে মারধর করছে। অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করছে। তাদের কারণে স্থানীয়রা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। তিনি আরও বলেন, আগের চেয়ে হাজার গুণ বেশি ইয়াবার বিস্তার ঘটেছে। রোহিঙ্গাদের কারণে শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়ার পাশাপাশি স্থানীয়রা কর্ম হারিয়ে বেকার হয়ে পড়ছে।

কক্সবাজার পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) রফিকুল ইসলাম জানান, ২০১৭ থেকে ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত ৯৯টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। খুনাখুনি, অপহরণ, ধর্ষণ, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, মানব পাচার, অগ্নিসংযোগসহ ১৪ ধরনের অপরাধের সঙ্গে রোহিঙ্গা জড়িয়ে পড়েছে। এসব কারণে ১ হাজার ৯০৮টি মামলা হয়েছে। অবশ্য বিভিন্ন সংস্থা ও স্থানীয় তথ্যমতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১২০টির বেশি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের কিছু নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে উসকে দিয়ে ও সহযোগিতা করে ক্যাম্পে খুনাখুনি করাচ্ছে। কারণ তারা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় রোহিঙ্গারা সন্ত্রাসী। আবার রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয়রা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে এবং মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে।