রোহিঙ্গা সংকটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে চেষ্টা অব্যাহত রাখবে বিদেশি মিশনগুলো

রোহিঙ্গা সংকটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে চেষ্টা অব্যাহত রাখবে বিদেশি মিশনগুলো

রোহিঙ্গা সংকট এবং এর কারণগুলোর দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে চেষ্টা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের হাইকমিশন ও দূতাবাসগুলো। শেষ দফায় বাংলাদেশে প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গার আশ্রয় নেওয়ার পাঁচ বছর পূর্তিতে আজ বৃহস্পতিবার এক যৌথ বিবৃতিতে তারা এ ঘোষণা দেয়।

যেসব দেশের হাইকমিশন ও দূতাবাস এ যৌথ বিবৃতি দিয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, স্পেন, সুইডেন ও সুইজারল্যান্ড এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

বিবৃতিতে এসব দেশ বলেছে, পাঁচ বছর পরও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশের সমর্থনে সংহতি জানিয়ে দৃঢ়তার সঙ্গে পাশে আছে। তারা রোহিঙ্গা সংকট এবং এর কারণগুলোর দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে অব্যাহতভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাবে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা, সুরক্ষা ও শিক্ষা নিশ্চিত করতে আমরা বাংলাদেশ সরকার, জাতিসংঘ এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে কাজ করে যাব। বাংলাদেশে অবস্থানকালে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, অর্থবহ ও মর্যাদার সঙ্গে বসবাসের বিষয়কে আমরা গুরুত্ব দিই এবং সেই সঙ্গে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে মিয়ানমারে তাঁদের প্রত্যাবাসনের জন্য প্রস্তুত করার প্রচেষ্টাকে সমর্থন জানাই।’

কক্সবাজারের স্থানীয় মানুষ, যাঁরা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়েছেন, তাঁদের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখার কথাও জানিয়েছে বিদেশি মিশনগুলো।

মিয়ানমারে ২০১৭ সালের আগস্ট ও সেপ্টেম্বরের ভয়ংকর ঘটনাপ্রবাহ প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গাকে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য করে। এ প্রসঙ্গে বিবৃতিতে মিশনগুলো বলেছে, ‘বাস্তুচ্যুতির মুখেও রোহিঙ্গাদের ঘুরে দাঁড়ানোর অবিশ্বাস্য মানসিকতা ও তাঁদের সাহসিকতা আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখি।’

রোহিঙ্গাদের সাদরে গ্রহণ ও অব্যাহতভাবে তাঁদের থাকতে দেওয়ায় বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের প্রতি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ থাকার কথাও জানিয়েছে স্বাক্ষরকারী হাইকমিশন, দূতাবাস ও সংস্থাগুলো।

বিবৃতিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তারা রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগের বিষয়টি তুলে ধরা অব্যাহত রাখবে। যত দ্রুত সম্ভব পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে রোহিঙ্গারা যাতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে স্বেচ্ছায়, নিরাপদে, মর্যাদার সঙ্গে ও স্থায়ীভাবে ফিরতে পারে—বর্তমান সংকটে এ ধরনের সমাধানে কাজ করে যাবে তারা।

মিয়ানমারজুড়ে দেশটির সামরিক বাহিনী কর্তৃক ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিদেশি মিশনগুলো। তারা বলেছে, ‘আমরা মিয়ানমারে দায়মুক্তির সংস্কৃতির অবসান ঘটানোর আহ্বান জানাই। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত ভয়ংকর কর্মকাণ্ডের জন্য আমরা আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতার পদক্ষেপের প্রতি আমাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছি।’

রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী কিছু ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে। এ ছাড়া এতে বলা হয়, ‘মিয়ানমারে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সংঘটিত সামরিক অভ্যুত্থানে সৃষ্ট রাজনৈতিক ও মানবিক সংকট সমাধানে আমরা চাপ প্রয়োগও অব্যাহত রাখব। এই সমাধানপ্রক্রিয়ায় অবশ্যই রোহিঙ্গাদেরও অন্তর্ভুক্তি থাকতে হবে।’