জোরপূর্বক গুম তদন্তে নিরপেক্ষ মেকানিজম প্রতিষ্ঠার আহবান ৪ মানবাধিকার সংস্থার

জোরপূর্বক গুম তদন্তে নিরপেক্ষ মেকানিজম প্রতিষ্ঠার আহবান ৪ মানবাধিকার সংস্থার

ইন্টারন্যাশনাল ডে অব দ্য ভিকটিমস অব এনফোর্সড ডিজঅ্যাপেয়ারেন্সেস বা জোরপূর্বক গুমের শিকারদের আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে জোরপূর্বক সব গুমের ঘটনা তদন্তে নিরপেক্ষ মেকানিজম প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ৪টি মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা। এ বিষয়ে তারা যৌথ বিবৃতি দিয়েছে। এসব সংস্থাগুলো হলো এশিয়ান ফেডারেশন এগেইনস্ট ইনভলান্টারি ডিজঅ্যাপেয়ান্সেস (আফাদ), ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস (ফিদা) মায়ের ডাক ও অধিকার।

বিবৃতিতে তারা ৬ দফা সুপারিশ করেছে। এতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছে, জোরপূর্বক সব গুম বন্ধ করতে হবে। যেসব ব্যক্তিকে গুম করা হয়েছে তাদেরকে অবিলম্বে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। জোরপূর্বক গুমের সব ঘটনা তদন্তে নিরপেক্ষ মেকানিজম প্রতিষ্ঠা বা গঠন করতে হবে। মানবাধিকারের পক্ষের কর্মীদের বিরুদ্ধে, গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে, নাগরিক সমাজের কর্মীদের বিরুদ্ধে যেকোনরকম প্রতিশোধ নেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। ভিকটিম এবং তাদের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এসব ঘটনায় জড়িত সব ব্যক্তিকে জবাবদিহিতায় আনতে হবে।

জোরপূর্বক গুম থেকে সব ব্যক্তিকে সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক কনভেনশন অনুমোদন করতে হবে। জোরপূর্বক গুমকে অপরাধ হিসেবে দেখিয়ে দেশের ভিতরেই আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আইন করতে হবে এবং তার বাস্তবায়ন করতে হবে।

ওইসব সংগঠন জোরপূর্বক গুমের শিকার ভিকটিম এবং জীবিতদের প্রতি সম্মান জানিয়েছে এবং তাদের পরিবারের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, পরিবারগুলো একই রকম দাবি করেছেন যে, তাদের প্রিয়জনকে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা তুলে নিয়ে গেছে। এ বিষয়ে তথ্যপ্রমাণ ও পরিবারগুলোর দাবি থাকা সত্ত্বেও অব্যাহতভাবে জোরপূর্বক সব গুমের অভিযোগ অব্যাহতভাবে প্রত্যাখ্যান করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। জোরপূর্বক গুমে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের জড়িত থাকার বিষয়ে বার বার মানবাধিকারের পক্ষ এবং নিরপেক্ষ জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক পরিষদের মনিটরিং মেকানিজম বার বার উদ্বেগ প্রকাশ করছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, সরকারের বিরুদ্ধে যেকোন সমালোচনাকে বন্ধ করতে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে জোরপূর্বক গুমকে। এর মধ্য দিয়ে ভীতির এক পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এই অপরাধের শিকারে যারা পরিণত হয়েছেন তার মধ্যে আছেন সরকারের রাজনৈতিক বিরোধী পক্ষ এবং ভিন্নমত পোষণকারী, যারা সরকারের সমালোচক। ভিকটিমদেরকে তাদের অন্যান্য মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে তাদের ওপর নির্যাতন চালানোর কথা না থাকলেও নির্যাতিত হতে হচ্ছে। এ ছাড়া অন্যান্য নিষ্ঠুর আচরণ করা হয়। অমানবিক অথবা অবমাননাকর আচরণ করা হয় তাদের সঙ্গে অথবা শাস্তি দেয়া হয়। তাদেরকে সুষ্ঠু বিচার থেকেও বঞ্চিত রাখা হয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জোরপূর্বক গুমের বিষয়ে বেশির ভাগ ঘটনায় দায়ী করা হয় আইন প্রয়োগকারী এজেন্সি, বিশেষত র‌্যাব এবং পুলিশের ডিবি শাখাকে। সম্প্রতি মিডিয়ার রিপোর্টে প্রকাশ পেয়েছে যে, বাংলাদেশের গোয়েন্দা এজেন্সি পরিচালিত গোপন বন্দিশালায় আটক রাখা হয় ভিকটিমদের। জোরপূর্বক গুমের বিষয়ে তথ্য চেয়ে এ বছর মার্চে ইউএন ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এনফোর্সড অর ইনভলান্টারি ডিজঅ্যাপেয়ারেন্সেস (ডব্লিউজিইআইডি) সহ জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা অনুরোধ জানায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতি। একই সঙ্গে গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের বিরুদ্ধে ভীতি প্রদর্শন ও হয়রানির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য দিতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া ২০১৩ সালের ১২ই মার্চ বাংলাদেশ সফরের আনুষ্ঠানিক অনুমতি চেয়ে আবেদন করে ডব্লিউজিইআইডি। তারও কোনো জবাব দেয়নি বাংলাদেশ। এসব ব্যর্থতা জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক ম্যাকানিজমের সঙ্গে অসহযোগিতার সমতুল্য।

এ বছর ১৪ থেকে ১৭ই আগস্ট বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিক সফর করেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার মিশেল ব্যাচেলে। সফর শেষে বিবৃতিতে তিনি জোরপূর্বক গুমের উদ্বেগজনক অভিযোগ সহ মানবাধিকার লংঘনের মারাত্মক সব অভিযোগে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি জোরপূর্বক গুম, নির্যাতন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা স্বীকার করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। একই সঙ্গে নিরপেক্ষ এবং স্পেশালাইজড মেকানিজমের মাধ্যমে পক্ষপাতিত্বহীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। -মানবজমিন