আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস

৬৬ জনও ফিরবেন, অপেক্ষায় স্বজনেরা

৬৬ জনও ফিরবেন, অপেক্ষায় স্বজনেরা

শুরু থেকেই গুমের ঘটনাগুলো সরকার অস্বীকার করে আসছে। এমনকি জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ বাংলাদেশে গুমের শিকার হওয়া ৭৬ জনের যে তালিকা দিয়েছে, সেই তালিকা নিয়েও নানা প্রশ্ন তুলেছে সরকার। তালিকায় নাম থাকা অনেকের ভূমধ্যসাগরে সলিলসমাধি হয়েছে—গত ফেব্রুয়ারি মাসে এমন মন্তব্যও করেছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

তবে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলেত ঢাকা সফরে আসার পর সরকার তাঁকে বলেছে, ওই তালিকার ৬৬ জন নানা কারণে ‘পলাতক’ বা নিখোঁজ। সরকার তাঁদের খুঁজে পাচ্ছে না। আর ১০ জনের খোঁজ পাওয়া গেছে।

জাতিসংঘের তালিকায় থাকা ৭৬ জনের মধ্যে গুম হওয়া যে ১০ জনের খোঁজ পাওয়া গেছে বলে সরকার মিশেল ব্যাশেলেতকে জানিয়েছে (১৪ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে), তাঁদের মধ্যে ৬ জনের সঙ্গে গতকাল সোমবার কথা বলেছে প্রথম আলো। এর মধ্যে পাঁচজন বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে তাঁদের আটক করা হয়েছিল। তবে একজন বলেছেন, তিনি নিজ ইচ্ছায় ৯ মাস সিলেটে হজরত শাহজালাল (রহ.)–এর মাজারে ছিলেন। পরিবারের কাউকে এ বিষয়ে তিনি কিছু জানাননি, যোগাযোগও করেননি।

খোঁজ পাওয়া বাকি চারজনের মধ্যে একজন সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা হাসিনুর রহমান। তিনি সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে (ইউটিউবে প্রচারিত) বলেছেন, তাঁকে দুবার গুম করা হয়েছিল এবং ‘আয়নাঘরে’ বন্দী রাখা হয়েছিল। উল্লেখ্য, সম্প্রতি প্রকাশিত একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের তথ্যচিত্রে বলা হয়েছে, গুম হওয়া ব্যক্তিদের ‘আয়নাঘর’ নামের গোপন কোনো জায়গায় আটকে রাখা হয়।

খোঁজ পাওয়া বাকি তিনজনের মধ্যে দুজন এখন বগুড়া কারাগারে বন্দী। আরেকজনের বাড়ি যশোরে। তবে এখন তিনি ‘আড়ালে’ থাকছেন।

গুম হওয়ার পর ফিরে আসা পাঁচজন পৃথকভাবে বলেন, মাসের পর মাস এমন ঘরে তাঁদের আটকে রাখা হয়েছিল, যেখানে সূর্যের আলো ঢুকত না।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, যে ১০ জনের খোঁজ পাওয়া গেছে তাঁরা হলেন মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, শামীম উদ্দীন প্রধান, মোহাম্মদ আখতার হোসেন, মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান (নাহিদ নামে পরিচিত), মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল ফারুক (রশিদ নামে পরিচিত), মোহাম্মদ আলতাফ হাওলাদার, হাসিনুর রহমান, মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন, জায়েদুর রহমান ও সাইদুর রহমান কাজী। তাঁরা ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসের মধ্যে গুম হয়েছিলেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ সরকারকে গুমের শিকার হওয়া ৭৬ জনের তালিকা দিলেও এই সংখ্যা তার কয়েক গুণ বেশি বলে বিভিন্ন সময় জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। এর মধ্যে এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের হিসাবে ২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে পাঁচ শতাধিক মানুষ গুম হয়েছেন।

তাঁদের কেউ ফিরে এসেছেন, কারও মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আর গত বছর হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) এক প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশে বলপূর্বক নিখোঁজের শিকার ৮৬ জন এখনো নিখোঁজ। ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত ১১৫ জনের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছিল এইচআরডব্লিউ।

গুমের ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সে জন্য জাতিসংঘ ২০১০ সালের ২৩ ডিসেম্বর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর দি প্রোটেকশন অব অল পারসনস ফ্রম এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স বা জোরপূর্বক অন্তর্ধান থেকে সব ব্যক্তির সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক উদ্যোগ নামে একটি সনদ গ্রহণ করে। সে সনদে বলা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনো ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর তা অস্বীকার করা, বিচারব্যবস্থার কাছে সোপর্দ না করা বা যদি তাঁর খোঁজ না পাওয়া যায়, তবে সেটিকেই গুম বলে। গুম প্রতিরোধে জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক দিবস আজ ৩০ আগস্ট।

গুমের শিকার হওয়া ৭৬ জনের তালিকা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা নিয়ে অভিযোগ এলে আমরা তদন্ত করি। তবে জাতিসংঘ যে ৭৬ জন গুম হয়েছে বলে জানিয়েছে, তাঁদের অনেকে পরিবারের সঙ্গে বাড়িতেই আছেন, অনেকের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে বলে পালিয়ে আছেন। কয়েকজনের বিষয়ে তদন্ত চলছে। কেউ অপরাধ করলেই তাঁকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেপ্তার করে, অন্যথায় নয়।’

সরকার বলছে তিন কারণে মানুষ ‘নিখোঁজ’ হয়
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলেতকে সরকার বলেছে, বাংলাদেশে তিন কারণে মানুষ ‘নিখোঁজ’ হয়। প্রথমত, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপরাধে জড়িত হওয়ার পর শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য। দ্বিতীয়ত, কেউ ব্যবসায় লোকসান করলে। তৃতীয়ত, পারিবারিক কারণে। ১৪ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মিশেল ব্যাশেলেতের কাছে উপস্থাপন করা এক ভিডিওতে এ বক্তব্য তুলে ধরে সরকার।

তবে গুমের বিষয়টি স্বীকার না করা এবং এ নিয়ে সরকারের বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেছেন মানবাধিকারকর্মীরা। তাঁরা বলছেন, এমন মনোভাব দেখিয়ে গুমের শিকার হওয়া পরিবারগুলোর প্রতি উপহাস করছে সরকার। একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছে গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, ‘রাষ্ট্র যদি মনে করে ওই মানুষগুলো গুম হননি, তাঁরা পালিয়ে আছেন মামলার ভয়ে, তবে রাষ্ট্রের উচিত এসব অভিযোগ খণ্ডন করা। গুম হওয়া ব্যক্তিদের সবার সামনে উপস্থিত করা, না হলে ভুক্তভোগী পরিবার বা জনমনে যে সন্দেহ রয়েছে, রাষ্ট্রই এসবের জন্য দায়ী, তা দূর হবে না। রাষ্ট্র কেন তাঁদের খুঁজে বের করে না? তাহলে কি আমরা ধরে নেব রাষ্ট্র ব্যর্থ হয়েছে?’

গুমের শিকার হওয়া যে ৭৬ জনের তালিকা জাতিসংঘ দিয়েছে, এর মধ্যে অন্তত ৩১ জন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত তিনজন। অন্যান্য দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নয়জন। সাবেক সেনা কর্মকর্তা দুজন। শিক্ষার্থী দুজন।

ফিরে আসা ব্যক্তিরা যা বললেন
নরসিংদীর সিদ্দিকুর রহমান ছাত্রদলের রাজনীতি করতেন। ২০১৭ সালের ৭ জুন তাঁকে তুলে নেওয়া হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তুলে নেওয়ার প্রায় সাড়ে আট মাস পর ২০১৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তাঁকে টাঙ্গাইলে র‌্যাবের একটি ইউনিটের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সেখানে অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাঁকে টাঙ্গাইল কারাগারে পাঠানো হয়। সেখান থেকে পরে নরসিংদী কারাগারে স্থানান্তর কর হয়। ২০১৮ সালের ২৭ মে তিনি জেল থেকে জামিনে মুক্ত হন।

সিদ্দিকুর বলেন, নিখোঁজ হওয়ার আগে তাঁর বিরুদ্ধে নয়টি মামলা ছিল, এখন তাঁর মামলার সংখ্যা ১৬। তুলে নেওয়ার পর ২৫২ দিন তাঁকে কোথায় রাখা হয়েছিল, সেটি জানেন না। তবে এই যে ঘরে আটকে রাখা হয়, সেখানে সূর্যের আলো পৌঁছাত না।

প্রায় একই ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে রাজশাহীর আবদুল্লাহ আল ফারুকের। তিনি বলেন, ‘আমি সামান্য একজন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। আমাকে শত্রুতা করে র‌্যাবের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল।’

২০১৭ সালের ১৮ জুলাই থেকে ২০১৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অন্ধকার একটি কক্ষে রাখা হয়েছিল ফারুককে। তিনি বলেন, ‘আমি সূর্যের আলো দেখিনি। আমি আওয়ামী লীগের একজন কর্মী, আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। এরপরও আমাকে তুলে নিয়ে গেছে।’

রংপুরের মোহাম্মদ আখতার হোসেন পীরগাছা রেলস্টেশন জামে মসজিদের খাদেম ছিলেন। ২০১৬ সালের ৩ মে সাদাপোশাকধারী কয়েকজন লোক তাঁকে আটক করে নিয়ে যায়। আখতারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা ছিল।

আখতার হোসেন বলেন, ডিবি পরিচয়ে তাঁকে তুলে নিয়ে যায় কয়েকজন। দুই মাস তাঁকে একটি কক্ষে আটক রাখা হয়েছিল। তাঁর ধারণা, সেই কক্ষ ছিল মগবাজারের কাছে।

যশোরের আলতাফ হাওলাদার ফিরে এসেছেন তুলে নেওয়ার ২৮ দিন পর। ২০১৮ সালের ১৪ আগস্ট অস্ত্রধারী কিছু লোক তাঁকে আটক করে নিয়ে যায়। তিনি বলেন, র‌্যাব পরিচয়ে তাঁকে তুলে নেওয়া হয়েছিল। ২৬ দিন যশোরে এবং ২ দিন খুলনার একটি ক্যাম্পে তাঁকে আটক রাখা হয়েছিল।

বগুড়ার শামীম উদ্দিন প্রধান নিখোঁজ হন ২০১৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি। সেই বিভীষিকাময় দিনগুলোর কথা আর তিনি বলতে চান না।

আর গাইবান্ধার রফিকুল ইসলাম বলেছেন, তাঁর খুব ইচ্ছা ছিল সিলেটে গিয়ে মাজারে একটা বড় সময় কাটানোর। তাই তিনি হজরত শাহজালাল ও শাহপরানের মাজারে সময় কাটিয়েছিলেন। পরিবারকে কেন জানাননি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরিবারকে জানালে যেতে দিত না।’

খোঁজ পাওয়া মো. ইকবাল হোসাইন সরকার ও জায়েদুর রহমান নারায়ণগঞ্জের বায়তুস শরিফ জামে মসজিদের সামনে থেকে আটক হন। তাঁরা এখন বগুড়া কারাগারে বন্দী।

বগুড়া কারাগারের জেল সুপার মুনির আহমেদ বলেন, ওই দুজন জঙ্গিবাদ, অস্ত্র ও বিস্ফোরক মামলায় কারাগারে বন্দী।

খোঁজ পাওয়া ১০ জনের মধ্যে ১ জন যশোরের সাইদুর রহমান কাজী। তিনি আওয়ামী লীগের কর্মী। তাঁর বিষয়ে পুলিশের বিশেষ শাখার একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সাইদুর এখন পলাতক। তাঁর বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা রয়েছে।

প্রতীক্ষা যাঁদের ফুরায় না
জাতিসংঘের তালিকায় থাকা ৭৬ জনের মধ্যে এখনো খোঁজ নেই ৬৬ জনের। এর মধ্যে ২০ জনের পরিবারের সঙ্গে গত রোববার ও গতকাল কথা বলেছে প্রথম আলো।

জাতিসংঘের ৭৬ জনের তালিকার সর্বশেষ নামটি পাহাড়ি নেত্রী কল্পনা চাকমার। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন রাঙামাটির বাঘাইছড়ির নিজ বাড়ি থেকে তিনি অপহৃত হন। ২৬ বছরেও তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়নি।

কল্পনা চাকমার ভাই কালিন্দী কুমার চাকমা বলেন, ‘আমরা প্রতিবাদ করে যাচ্ছি, যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তুলে না নিয়েও থাকে, সরকারেরই তো উচিত কেউ নিখোঁজ হলে তাঁর খোঁজ দেওয়া। আমরা অপেক্ষায় রইলাম।’

২০১৬ সালের ১৬ জানুয়ারি থেকে নিখোঁজ রাজধানীর রামপুরা থানা ছাত্রলীগের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন। তাঁর মা সালেহা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলেকে রাজনৈতিক কারণেই তুলে নিয়ে গেছে। ছেলের শোকে ওর বাবা মারা গেছেন, আমিও হয়তো ছেলেকে না দেখেই মারা যাব। কিন্তু কেন যেন মন বলে আমার ছেলে বেঁচে আছে। সরকারকে অনুরোধ করব একটু খুঁজে দেখতে, তাদেরই তো কর্মী ছিল।’

বাগেরহাটের হাবিবুর রহমান নিখোঁজ রয়েছেন ২০১১ সালের ৬ জুলাই থেকে। তাঁর স্ত্রী মাহমুদা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘চোখের সামনে তাঁকে মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যেতে দেখেছি। সেটাই ছিল শেষ দেখা। সে পালিয়ে থাকলে কি একবারও আসত না আমাদের কাছে? আমার স্বামীর সঙ্গে মাছের ঘের নিয়ে প্রতিবেশীদের দ্বন্দ্ব ছিল। তারা তাকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। আমি এখন পাঁচ ছেলেমেয়ে নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটাই। স্বামীকে তো দেবে না, সরকার যদি অন্তত একটু সাহায্য করত, তবু কিছুটা কষ্ট লাঘব হতো।’

২০১৩ সালের ১১ ডিসেম্বর গুম করা হয় রাজধানীর সূত্রাপুর থানা ছাত্রদলের সভাপতি সেলিম রেজাকে। তাঁর বোন রেহানা বানু বলেন, ‘আমার ভাই বিএনপি করতেন, এটাই তাঁর দোষ।’

কুমিল্লার লাকসাম উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সাংসদ সাইফুল ইসলাম (হিরু) ও লাকসাম পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি হুমায়ূন কবীর পারভেজ গুম হন প্রায় ৯ বছর আগে। ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর রাতে কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের হরিশ্চর এলাকা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে তাঁদের আটক করা হয়।

পারভেজ হুমায়ূন কবীরের স্ত্রী শাহনাজ বেগম বলেন, ‘সন্তানের শোকে শ্বশুর মারা গেছেন। এখন শুধু ভরসা করে আছি আল্লাহর ওপর।’

গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনেরা ২০১৪ সালে ‘মায়ের ডাক’ নামের একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। স্বজনদের ফেরত পেতে এই সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় মানববন্ধন, সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে। মায়ের ডাকের আহ্বায়ক হাজেরা খাতুন। তাঁর ছেলে ঢাকার বিএনপির নেতা সাজেদুল ইসলাম গুম হন ২০১৩ সালে।

সাজেদুলের মা হাজেরা খাতুন এখন গুরুতর অসুস্থ। তিনি বলেন, ‘সবাই জানে কে তাঁকে নিয়ে গেছে, তারপরও বিচার পাচ্ছি না। মন্ত্রীরা বলছেন, আমাদের সন্তানেরা লুকিয়ে আছে। লুকিয়ে থাকলে আপনারা খুঁজে আনেন। অপরাধ করলে শাস্তি দেন। তবু আমাদের ছেলেদের ফিরিয়ে দিন। অন্তত মৃত্যুর আগে ছেলের মুখটা দেখে মরতে চাই।’-প্রথম আলো