ভারত থেকে কিছু আনার রেওয়াজ নেই প্রধানমন্ত্রীর: গয়েশ্বর

ভারত থেকে কিছু আনার রেওয়াজ নেই প্রধানমন্ত্রীর: গয়েশ্বর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে গেছেন। কিছু আনার রেওয়াজ নাই।

আনতেও পারবেন না। হয়তোবা কিছু দিতে গেছেন। বিনিময়ে বলেছেন, আমি আরও কিছুদিন থাকি। আপনারা আমারে একটু দয়া করুন। মানুষের ধারণাটা কিন্তু এ রকম।’

বুধবার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে এক শোকমিছিল বের করে যুবদল। মিছিল শুরুর আগে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এসব কথা বলেন। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি ঘিরে ১ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষকালে গুলিতে নিহত হন যুবদল কর্মী শাওন প্রধান। এ হত্যার প্রতিবাদে এই কর্মসূচি আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা যুবদল।

শোকমিছিলের এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে নয়াপল্টন ও এর আশপাশের এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বিভিন্ন স্থানে রাখা হয় সাঁজোয়া যান, প্রিজন ভ্যান। নেতা-কর্মীরা কালো পতাকা হাতে নিয়ে এই কর্মসূচিতে অংশ নেন।

শোকমিছিলে ‘গুলি করে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না’, ‘লড়াই লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই’, ‘দিয়েছি তো রক্ত—আরও দেব রক্ত’, ‘শাওনের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’ ইত্যাদি স্লোগান দেওয়া হয়। নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে মিছিল শুরু হয়ে ফকিরাপুল পেট্রলপাম্প ঘুরে আবার নয়াপল্টনে এসে শেষ হয়।

এদিকে শোকমিছিল শুরুর আগে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে একটি পিকআপ ভ্যানে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করে সমাবেশ হয়। এ সময় গয়েশ্বর চন্দ্র তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্ক প্রসঙ্গে টেনে বলেন, ‘বিশ্বের সব গণতান্ত্রিক দেশের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব থাকবে আজীবন। কিন্তু গোলামি না। আমরা বন্ধুত্ব চাই, কর্তৃত্ব চাই না। সেটাই আমাদের অপরাধ। সেটাই জিয়াউর রহমানের অপরাধ ছিল। খালেদা জিয়ার অপরাধ ছিল। খালেদা জিয়া বলছিলেন, “বিদেশে আমাদের বন্ধু আছে, প্রভু নাই।”’

নানা টালবাহানা করে সরকার পার পেলেও এবার সরকারের সেই সুযোগ নেই উল্লেখ করে গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, ‘সরকারের বিরুদ্ধে দলমত–নির্বিশেষে সবাই ঐক্যবদ্ধ। কেউ হয়তো প্রকাশ করছে, কেউ প্রকাশ করছে না। এই সরকারকে যেতে হবে। ভারত ইচ্ছা করলেও সুজাতা সিংহের মতো আরেকজনকে পাঠিয়ে এ দেশে নির্বাচন করবে, আর তাদের (আওয়ামী লীগ) সরকারে রাখবে, সেই শক্তি ভারতের কতটুকু আছে, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ, ভারত একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এবং গণতান্ত্রিক বিশ্বে সে যদি এখানে এ ধরনের দৃশ্যমান গণতন্ত্রের বিপক্ষে ও ফ্যাসিবাদের পক্ষে দাঁড়ায়, তাহলে গণতান্ত্রিক বিশ্বের বিবেক নড়ে উঠবে। সে ক্ষেত্রে ভারতের সাবধান হওয়ার ব্যাপার আছে।’

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নেবে, কে সরকারে আসবে কে আসবে না।’ সরকারের পতন কীভাবে ঘটাতে হয়, সেই অভিজ্ঞতা বিএনপির রয়েছে দাবি করে গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, ‘সেই অভিজ্ঞতা এবার কাজে লাগানো হবে। ধাপে ধাপে আন্দোলন হবে। এই সরকার যেহেতু জনগণ–সমর্থিত নয়, তাই প্রশাসনের কয়েকটা ঘুষখোর-দুর্নীতিবাজ লোক তাকে বেশি দিন মাঠে নিয়ে চলতে পারবে না। তাকে বিদায় নিতে হবে। বিদায় যদি ভালোভাবে নেয় এক কথা, আর যদি খারাপভাবে নেয়, তার পরিণতির দায় তাকেই নিতে হবে।’

ক্ষমতাসীন দলকে হুঁশিয়ার করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘শেখ হাসিনা যদি ভাবেন কয়েকটা লাশ ফেলে সরকারে থাকবে, তা ভুল হবে। বাতি নেভার আগে হঠাৎ জ্বলে উঠে। সব ফ্যাসিবাদ, সব স্বৈরাচারের পতন যখন আসে, তার আগে সে একটু নড়েচড়ে বসে। এখান থেকে বোঝা যায়, এই নড়াই শেষ নড়া, এরপর তার পড়ে যাওয়ার পালা।’

প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রের কোনো সমস্যার সমাধান করতে ভারতে গেছেন, জনগণের ধারণা এমন নয় বলেও মন্তব্য করেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের আহ্বায়ক শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের আহ্বায়ক গোলাম মাওলার সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য দেন।