জনগণকে প্রতিপক্ষ বানালে পরিণতি শুভ হবে না: বিএনপি মহাসচিব

জনগণকে প্রতিপক্ষ বানালে পরিণতি শুভ হবে না: বিএনপি মহাসচিব

প্রশাসনের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জনগণকে প্রতিপক্ষ বানাবেন না। এর পরিণতি শুভ হবে না। জনগণ থেকেই আপনারা এসেছেন। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় আপনাদের বেতন চলে, সংসার চলে। সুতরাং জনগণকে সম্মান করুন। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেবেন না। বেআইনি নির্দেশ মেনে কথায় কথায় গুলি করবেন না। আজকে র‌্যাবের ওপরে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। যদি আইন না মেনে মানবাধিকার লঙ্ঘন করতে থাকে তাহলে যে কোনো বাহিনীর ওপরেও নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে।

রবিবার রাজধানীর উত্তরার পলওয়েল কনভেনশন সড়কে বিএনপি মহানগর উত্তর পূর্ব জোনের উদ্যোগে জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং পুলিশের গুলিতে ভোলায় নুরে আলম, আব্দুর রহিম ও নারায়নগঞ্জে শাওন প্রধান হত্যার প্রতিবাদে এই সমাবেশ হয়। উত্তরার বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে এই সমাবেশে অংশ নেয়।

সমাবশেকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে এই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছিলো। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও এদিন উত্তরায় সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের পাল্টাপাল্টি এ অবস্থানে এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। বিএনপির সমাবেশ থেকে এক কিলোমিটার দুরে উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরে নবাব হাবিবুল্লাহ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনের সড়কে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও লাঠিসোঁটা হাতে সমাবেশ করে। এছাড়া বিভিন্ন রাস্তার মোড়েও লাঠিসোটা নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের অবস্থান নিতে দেখা দেখা দেয়। এরকম পরিস্থিতিতে সমাবেশের স্থান পরিবর্তন করে আব্দুল্লাহপুর এলাকায় যায় বিএনপি। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতার কারণে তেমন অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি। যদিও বিএনপির সভামঞ্চ থেকেও সমাবেশে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। সমাবেশে আসার সময় পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির নেতারা।

মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে দেশে মানবাধিকার নেই, গুলি করে হত্যা করা হয়, গুম করে নিয়ে যায় সাদা পোশাকধারীরা। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। দেশের মানুষ গর্জে উঠেছে। দলের অনেক নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। গত এক মাসে তিনজন নেতাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। দেশের গণতন্ত্রের জন্য আমরা কেউ প্রাণ দিতে দ্বিধা করবো না। আমাদের দাবি একটাই, এই দেশে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনা। আমরা আমাদের অধিকার ফিরে পেতে চাই, ভোটের অধিকার ফিরে পেতে চাই, আমাদের বাঁচার অধিকার ফিরে চাই, আমরা শান্তিতে বাস করতে চাই। আমরা একটা মুক্ত সমাজে বাস করতে চাই, একটা সমৃদ্ধ দেশে বাস করতে চাই। আমরা এই চোর-ডাকাত আওয়ামী লীগের হাত থেকে মুক্তি চাই।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের দাবি একটাই-এই দেশে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনা। এই গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে খুব পরিষ্কার কথা বলতে চাই, এই ব্যর্থ সরকার যারা এদেশেকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে তাদেরকে এই মুহুর্তে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বাতিল করতে হবে এবং সরকারকে পদত্যাগ করে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই আওয়ামী লীগ সরকার একে একে সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে ধবংস করেছে। পার্লামেন্টকে একটা রাবার স্ট্যাম্প পার্লামেন্ট করেছে। এটা এখন গৃহপালিত পার্লামেন্ট। এখানে কোনো বিরোধী দল কাজ করে না, এখানে দেশের মানুষের সমস্যা নিয়ে আলাপ হয় না। জিনিসপত্রের দাম বাড়ে, তেলের দাম বাড়ে, করোনার চিকিৎসা-এসব নিয়ে এই পার্লামেন্টে আলোচনা হয় না। এখানে শুধু একজনের তোষামোদি, এক ব্যক্তির তোষামোদি হয়। আজকে বিচার বিভাগকে তারা (সরকার) দলীয়করণ করে ফেলেছে। এই বিচার বিভাগের কাছে মানুষ ন্যায় বিচার পায় না।

মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, জয়নুল আবদিন ফারুক, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, নাজিম উদ্দিন আলম, কামরুজ্জামান রতন, কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপু, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, মহানগর দক্ষিণের রফিকুল আলম মজনু, তাবিথ আউয়াল প্রমুখ বক্তব্য প্রদান করেন।