নয়াপল্টনে পুলিশের হামলার পর আটক বিএনপির ৩০০ নেতা-কর্মী

নয়াপল্টনে পুলিশের হামলার পর আটক বিএনপির ৩০০ নেতা-কর্মী

১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশকে সামনে রেখে নয়াপল্টনে দলীয় অফিসের সামনে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করছিলো দলটি নেতা-কর্মীরা। আর সে কর্মসূচিতে কোন কারণ ছাড়াই আচমকা হামলা চালায় পুলিশ আর তাতে বন্দুক হাতে দেখা গেছে বহিরাগতদেরকেও।

বুধবার বিকালে পুলিশের হামলার পর বিএনপি কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় রাজধানীর নয়াপল্টন। সংঘর্ষে মকবুল আহমেদ নামে একজন নিহত এবং অর্ধশত বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থক আহত হন। এর মধ্যে ২৬ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

বিএনপি বলছে, নিহত মকবুল আহমেদ রাজধানীর পল্লবী থানার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা।

নিজেরাই হামলা করে উল্টো নয়াপল্টনের বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখান থেকে দলটির কেন্দ্রীয় নেতা আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস ও ছাত্রদলের সাবেক নেতা আবদুল কাদের ভূঁইয়াসহ কয়েক শ নেতা-কর্মীকে আটক করে পুলিশ। বিকেল সাড়ে চারটা থেকে রাত সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত চলে আটক অভিযান। পুলিশ কার্যালয়ের ভেতরে তল্লাশি চালায়, যা শেষ হয় রাত নয়টায়। ৩০০ নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়।

বুধবার রাতেই চলমান পরিস্থিত নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নয়াপল্টনে নেতা-কর্মীদের ওপর পুলিশের হামলা, গুলি ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার সারা দেশে জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি।

বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ রাত সাড়ে ১১টায় বলেন, ঢাকার সমাবেশকে বানচাল করার উদ্দেশ্যে পুলিশ উসকানি দিয়ে হামলা চালিয়েছে। একজনকে মেরে ফেলেছে। অনেককে আহত করেছে। তিনি বলেন, দেশে যে পুলিশি রাষ্ট্র কায়েম হয়েছে, এ ঘটনার তার প্রমাণ এবং পুলিশ যে যা ইচ্ছা তাই করতে পারে সেটার নজির সৃষ্টি করল।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, নয়াপল্টনের কার্যালয়ে পুলিশ অভিযান শুরু করলে নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন কক্ষে দরজা লাগিয়ে ভেতরে অবস্থান নেন। এ সময় বাইরে থেকে দরজা ভাঙার শব্দ শোনা যায়। পরে পুলিশ দরজা ভেঙে নেতা-কর্মীদের বের করে নিয়ে যায়। নয়াপল্টনের রাস্তায় পড়ে থাকা অন্তত অর্ধশত মোটরসাইকেল ভ্যানে করে পুলিশকে নিয়ে যেতে দেখা যায়।

রাত ৮টার দিকে মির্জা ফখরুল ইসলাম দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে চলে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের বলেন, ‘পুলিশ আমাদের কার্যালয়ে থেকে সিসি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক নিয়ে গেছে যাতে হামলার কোনো আলামত না থাকে। শুধু তাই নয়, তারা অফিসের মধ্যে ঢুকে সবকিছু ভাঙচুর করেছে। দলের প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র নিয়ে গেছে। একাত্তরের হানাদার বাহিনীর মতো বিএনপি নেতা কর্মীদের ওপর হামলা করেছে।’

এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মাহমদুর রহমান মান্না ও সাইফুল হকসহ গণতন্ত্র মঞ্চের একদল নেতা নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পুলিশ বিজয়নগর নাইটিঙ্গেল মোড়ে তাদের আটকে দেয়। এর আগে এবি পার্টির সদস্যসচিব মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দলকেও সেখান থেকে ফেরত দেওয়া হয়।

সংঘর্ষে কতজন আহত হয়েছেন, তা নির্দিষ্ট করে জানা যায়নি। তবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, নয়াপল্টনে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত মকবুলসহ ২৬ জনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাদের মধ্যে এক পুলিশ ও দুই বিএনপির নেতাকে ভর্তি করা হয়। বাকিরা জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়ে চলে যান। আহত ব্যক্তিদের প্রায় সবার শরীরে কমবেশি ছররা গুলির চিহ্ন রয়েছে। এর বাইরে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালেও অনেককে নেওয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

আহতদের মধ্যে ছাত্রদলের ঢাকা মহানগর পশ্চিম শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রবিন খানের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।

এ ছাড়া একজন সাংবাদিকও আহত হন বলে জানা গেছে। পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে নয়াপল্টনে সাংবাদিকদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)।

বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ নয়াপল্টনে নাকি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হবে-এ নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বিএনপির পক্ষ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন শহীদউদ্দিন চৌধুরী। তাকেও আটক করা হয়। আটক করে নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। পুলিশ কমিশনার আলোচনার জন্য তাকে যেতে বলেছিলেন। এ জন্য তিনি দলীয় কার্যালয় থেকে বের হন। এর পর তাকে ডিবি পুলিশ আটক করে নিয়ে যাচ্ছে।

বিএনপির নেতাদের অভিযোগ, ঢাকার সমাবেশ বানচাল করার জন্য ক্ষমতাসীন দল গত কয়েক দিন ধরে নানা হুমকি-ধামকি দিচ্ছিল। নয়াপল্টন সমাবেশ করার জন্য আবেদন করলেও তারা বিএনপিকে জোর করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাঠানোর চেষ্টা করছিল। শুরু থেকেই এ নিয়ে তাদের সন্দেহ জেগেছে। এখন বিএনপি যাতে সমাবেশ করতে না পারে, তার জন্য তিন দিন আগে বিনা কারণে পুলিশ দিয়ে নৃশংস ঘটনা ঘটানো হয়েছে।

এই অবস্থায় ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ এবং পরবর্তী করণীয় বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক করে ঠিক করা হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

এ পরিস্থিতিতে সমাবেশ করা কী সম্ভব? এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘১০ ডিসেম্বরের সমাবেশকে কেন্দ্র করেই তো এগুলো হচ্ছে। তারা (সরকার) সমাবেশটা নষ্ট করার চেষ্টা করছে।’