আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা হামলা চালিয়েছে, দাবি পরিবারের

যুবদল নেতাকে বাসায় না পেয়ে বাবাকে পিটিয়ে হত্যা

যুবদল নেতাকে বাসায় না পেয়ে বাবাকে পিটিয়ে হত্যা

রাজধানীর ওয়ারীতে যুবদলের এক নেতাকে বাসায় ঢুকে না পেয়ে ভাঙচুর ও তার বৃদ্ধ বাবাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। বুধবার গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটে।

নিহতের নাম মো: মিল্লাত হোসেন (৬৫)। তার ছেলে ফয়সাল মেহবুব মিজু ওয়ারী থানা যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক। ওয়ারীর ৩০ নম্বর গোপী মোহন বসাক লেনে তাদের বাসা। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা এ হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন ফয়সাল মেহবুব মিজু।

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নিহতের লাশের পোস্টমর্টেম সম্পন্ন হয়েছে। তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন পেয়েছেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।

জানা যায়, বুধবার দিবাগত রাত আনুমানিক সাড়ে ১২টায় ওয়ারী গোপী বসাক লেনের মিজুর বাসায় প্রবেশ করে ৩০-৪০ জনের দুর্বৃত্ত দল। তাদের সকলের মুখে মাস্ক পড়া ছিল। বাসায় ঢুকে তারা যুবদলের এ নেতাকে খুঁজতে থাকেন। তাকে না পেয়ে বাসার মালামাল ভাংচুর করতে থাকে। অপরদিকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে।

বাসায় প্রবেশ করা দুর্বৃত্তদের পরিচয় এবং ছেলেকে খোঁজার কারন জানতে এগিয়ে মিজুর বয়োবৃদ্ধ বাবা এবং পরিবহণ ব্যবসায়ী মিল্লাত হোসেন (৭০)। এ সময় দুর্বৃত্তরা মিল্লাত হোসেনের ওপর চড়াও হয়। তিনি প্রতিবাদ করলে দুর্বৃত্তরা মিল্লাত হোসেনকে পেটাতে শুরু করে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। মিল্লাত হোসেনের মাথা ফেটে রক্ত বের হতে থাকে। এ সময় দুর্বৃত্তরা বাসা থেকে বের হয়ে চলে যায়। পরিবারের সদস্যরা মিল্লাত হোসেনকে উদ্ধার করে দ্রæত আজগর আলী হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানেই তিনি মারা যান। ঘটনার সাথে জড়িত দুর্বৃত্তরা আওয়ামীলীগ কিংবা এর অঙ্গ সংগঠনের ক্যাডার বলে অভিযোগ করেছেন মিল্লাত হোসেনের পরিবারের সদ্যরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার রাত ১২টার দিকে একদল দুর্বৃত্ত স্লোগান দিতে দিতে যুবদল নেতা মিজুর বাসায় যায়। কিছুক্ষণ পরই চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ শোনা যায়। পরে এলাকাবাসী ওই বাসায় গিয়ে মিল্লাত হোসেনকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় আজগর আলী হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা এ হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন নিহত মো: মিল্লাত হোসেনের ছেলে ফয়সাল মেহবুব মিজু। তিনি বলেন, রাত ১২টার পর পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী এ হামলা চালানো হয়। অর্ধশতাধিক আওয়ামী লীগের লোক আমাকে মারার জন্য বাসায় যায়। কিন্তু তারা আমাকে না পেয়ে বাসায় ভাঙচুর চালায়। তারা বাসা থেকে বের হওয়ার সময় আমার বাবাকে কিছু একটা দিয়ে মাথার পেছনে আঘাত করে। ফলে অনেক রক্তক্ষরণ হয়। রক্তে পুরো ঘর ভেসে গেছে। আমার বাবা একজন সাধারণ মানুষ। কখনো কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। এ সময় তার এক চাচাকেও তুলে নেয়ার অভিযোগ করেন যুবদলের সাবেক এ নেতা। তিনি বলেন, তার এখনো কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।

প্রতিহিংসার রাজনীতির শিকার হয়ে তার বাবা মারা গেছেন দাবি করে তিনি বলেন, জানি এই হত্যাকাণ্ডের বিচার পাব না। তবু আমি আমার বাবার হত্যার বিচার চাই। যারা আমার নিরপরাধ বয়স্ক বাবাকে হত্যা করেছে, এ দুনিয়ায় বিচার না পাইলে আল্লাহ একজন আছেন, তিনি অবশ্যই শেষ বিচার করবেন। কী দেশে আছি, মধ্যরাতে কেউ কারো বাসায় গিয়ে এভাবে হামলা চালায়? মানুষ খুন করে? আমাদের কি সুষ্ঠু সুন্দরভাবে পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকার বা রাজনীতি করার অধিকার নেই?