পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা নামল ৬ ডিগ্রিতে

পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা নামল ৬ ডিগ্রিতে

আজ (মঙ্গলবার) পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ শমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রের্কড করা হয়েছে। যা সারা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এবং চলতি মৌসুমে পঞ্চগড়েও সর্বনিম্ন। গত ১৫ দিনের মধ্যে গতকাল এবং আজ মঙ্গলবার সবচেয়ে বেশি কড়া রোদ অনুভূত হবার কারণে মানুষের দুর্ভোগ কিছুটা কমে এসেছে।

পঞ্চগড়ে সকাল থেকে কড়া রোদে শীতার্ত মানুষগুলো ছিল বেশ ফুরফুরে। গতকাল সোমবার সকাল ৯টায় চলতি শীত মৌসুমে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার। আবহাওয়া অফিসের তথ্যানুযায়ী ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস মানে মাঝারী শৈত্যপ্রবাহ। তাদের হিসেবে টানা কয়েকদিন মৃদু শৈত্যপ্রবাহের পর দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে মাঝারী ও রংপুর এবং রাজশাহী বিভাগের অন্যান জেলাগুলোর ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।

গত কয়েকদিন কুয়াশা না থাকলেও পঞ্চগড়ে ছিল কনকনে উত্তরের শীতল বাতাস। তবে গতকাল সোমবার ভোররাত থেকে শুরু হয় ভারি কুয়াশা। সকাল পর্যন্ত ভারী কুয়াশা ঝরতে থাকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির ফোঁটার মতো। সেই সঙ্গে ছিল উত্তরের কনকনে শীতল বাতাস। এতে চরম দুর্ভোগে পড়ে জেলার দুস্থ ও খেটে খাওয়া লোকজন। কনকনে শীত সাধ্যমত গরম কাপড় গায়ে জড়িয়েই তারা বেরিয়েছে কাজে। অনেকে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে সকাল ৯টায় সূর্যের মুখ দেখা যাওয়ার পর থেকে সারাদিনই ছিল কড়া রোদ।

অনেকদিন পর কড়া রোদের উষ্ণতা উপভোগ করে পঞ্চগড়ের শীতার্ত মানুষগুলো। যে যার মত করে শীতের কাপড়গুলোও রোদে শুকিয়ে নেয়।

উত্তরের সীমান্ত জনপদ পঞ্চগড়ে শীতের তাণ্ডব দেশের সকল রেকর্ড ভেঙ্গেছে। ঘন কুয়াশা এবং পাহাড় থেকে নেমে আসা হিমেল হাওয়া বইতে থাকায় সীমান্ত এই জনপদের মানুষের জীবন যাত্রাকে স্থবির করে ফেলেছে। অব্যাহত শীতে সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রা প্রায় অচল হতে বসেছে। বিশেষ করে ছিন্নমূল এবং খেটে খাওয়া মানুষজন পড়েছে বিপাকে। একদিকে কর্মহীন হয়ে পড়া, অপর দিকে শীত জনিত বিভিন্ন রোগ বালাই মানুষকে অসহায় করে ফেলেছে। বিশেষ করে শিশু এবং বয়স্ক মানুষদের দুর্ভোগ চরমে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন ঠাণ্ডা জনিত রোগে আক্রান্ত শিশু ও বয়স্কদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

পঞ্চগড় শহরের নির্মাণ শ্রমিক আবুল হোসেন হোসেন জানায়, কাজ কর্ম একেবারেই কমে গেছে পরিবার পরিজন নিয়ে সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। গত ১৫ দিন ধরে ঠাণ্ডার কারণ তেমন কোনো কাজ মিলছে না।

হরেক মালের ব্যবসায়ী বাবু মিঞা জানায়, শীতের মধ্যেই সাইকেলে করে মালামাল নিয়ে গ্রামে যেতে হচ্ছে কিন্ত তীব্র শীত এবং ঘন কুয়াশার কারণে টিকে থাকায় মুশকিল বেচাকেনাও নেই।

পঞ্চগড় সদর আধুনিক হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ মোঃ মনোয়ারুল ইসলাম জানায়, ডায়রিয়া ও শীত জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তাদের চিকিৎসা এবং সুরক্ষিত রাখার পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। তবে রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় অধিকাংশ রোগীকে মেঝেতে ভর্তি করতে হচ্ছে।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রেরের কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান বলছেন পুরো ডিসেম্বর ধরে তেঁতুলিয়ায় যে তাপমাত্রা বিরাজ করছে তা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। জানুয়ারিতে একাধিক শৈত প্রবাহ বয়ে যাওয়ার আশ রয়েছে। তখন তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রিতে নেমে যেতে পারে।

পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মোঃ জহুরুল ইসলাম জানান, প্রতি বছর শীত প্রবন এই এলাকার মানুষের কথা ভেবে সরকারিভাবে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সুরক্ষিত রাখা হয়। এ বছর একই সঙ্গে করোনা এবং শীত মোকাবেলা করতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যে সরকারিভাবে যে পরিমাণ শীতবস্ত্র পাওয়া গেছে তা শীতার্ত মানুষের মাঝে বন্টন করা হয়েছে। নতুন করে বরাদ্দ চেয়ে বার্তা প্রেরণ করা হয়েছে।