নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশে সহিংসতা ও নিপীড়ন বেড়েছে : হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশে সহিংসতা ও নিপীড়ন বেড়েছে : হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশে বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যদের ওপর সহিংসতা ও দমনপীড়ন বেড়েছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। সংস্থাটির প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট ২০২৩’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে এ উদ্বেগের কথা উঠে আসে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, রোহিঙ্গা শরণার্থীরা নিরাপদে ও স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারছে না। তারা দুঃসহ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলী বলেন, আন্তর্জাতিক চাপে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। কিন্তু উল্টো তারা দমন-পীড়ন বাড়িয়ে দিয়েছে। দাতাগোষ্ঠী এবং স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারদের জোর দেয়া উচিত যাতে বাংলাদেশিরা আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতিতে নির্ভয়ে নিজেদের মত প্রকাশ করতে এবং তাদের নেতা নির্বাচন করতে পারে।

আন্তর্জাতিক এ মানবাধিকার সংগঠনটি তাদের ৭১২ পৃষ্ঠার ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট ২০২৩-এর ৩৩তম সংস্করণে বিশ্বের ১০০টি দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে। প্রতিবেদনটির সূচনা-প্রবন্ধে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের নির্বাহী পরিচালক তিরানা হাসান বলেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধকে ঘিরে বিশ্বের সংঘবদ্ধতা আমাদেরকে অসাধারণ সম্ভাবনার কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। এতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারগুলো মানবাধিকারের বাধ্যবাধকতা উপলব্ধি করতে পারছে। ছোট, বড়, সব দেশের উচিৎ মানবাধিকার রক্ষার নীতিতে অটল থাকা এবং মানবাধিকার রক্ষায় একযোগে কাজ করা।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ও এর কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং বলপূর্বক গুমের ঘটনা কমে গেছে। কিন্তু মানবাধিকার সংস্থাটির অভিযোগ, সরকার র‌্যাবের সংস্কারের পরিবর্তে তাদের ওপরে নিষেধাজ্ঞার অভিযোগগুলো খারিজ করে দিয়েছে।

পাশাপাশি গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবার ও মানবাধিকারকর্মীদের ভয়ভীতি দেখানো শুরু করেছে।

রিপোর্টে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের সরকার কঠোর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে গ্রেপ্তার অব্যাহত রেখেছে। গত বছরের নভেম্বরে বিরোধীদলীয় নেত্রী সুলতানা আহমেদকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। সুলতানা আহমেদের বিরুদ্ধে র‌্যাবের অভিযোগ, তিনি গত বছরের সেপ্টেম্বরে এক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করেছিলেন। বিরোধী দল বিএনপি দাবি করেছে, তাদের দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সরকার অন্তত ২০ হাজার মামলা দিয়েছে, যার বেশির ভাগ মামলাই অজ্ঞাতনামা। এই মামলাগুলোকে আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারা রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্যদের বাড়িতে অভিযান চালানোর জন্য ওয়ারেন্ট হিসেবে ব্যবহার করেছেন। এ ধরনের আচরণকে প্রকাশ্য রাজনৈতিক হয়রানি এবং ভীতি প্রদর্শন বলে অভিহিত করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

মানবাধিকার সংস্থাটির দাবি, বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশের ভিন্নতাবলম্বীদেরও ছাড়ছে না ক্ষমতাসীন সরকার। গত বছরের নভেম্বরে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট ফেসবুকে ‘রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার’ অভিযোগে প্যারিসে বসবাসরত বাংলাদেশের ব্লগার পিনাকী ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে ডিএসএ-এর অধীনে মামলা দিয়েছে। এ ছাড়া ওই একই সময়ে ঢাকাতেও দুজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। জাতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিদেশে থাকা ভিন্নমতাবলম্বীদের একটি তালিকা তৈরি করেছে যারা ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ কার্যকলাপ করছে। কর্তৃপক্ষ প্রবাসী ভিন্নমতাবলম্বীদের আত্মীয়দের টার্গেট করা বৃদ্ধি করেছে।

সরকার মানবাধিবার সংস্থাগুলোর ওপরেও চাপ সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। সংগঠনটি বলেছে, মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ এর নিবন্ধন নবায়ন করেনি সরকার।