‘কমিউনিস্ট পার্টি আর নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবে না’

‘কমিউনিস্ট পার্টি আর নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবে না’

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, বাংলাদেশের কামিউনিস্ট পার্টি অতীতে অনেক ভুল করেছে। এ ভুলের খেসারত আজও দিতে হচ্ছে। আমরা আর ভুল করব না। কমিউনিস্ট পার্টি আর নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবে না।

শনিবার ফরিদপুরে এক সমাবেশে এসব কথা বলেন সিপিবির এই নেতা। মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি)।

ছাত্র ইউনিয়নের সাত দশক (১৯৫২-২০২২) পূর্তি উপলক্ষে অভিভাবক সংবর্ধনা, স্মৃতিচারণ ও আলোচনা সভার আয়োজন করে ‘বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন সংগ্রামের সাত দশক উদযাপন পরিষদ’। শনিবার দুপুরে ফরিদপুর উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয় ‘এসো মিলি মুক্তির পতাকাতলে’ আহ্বানকে সামনে রেখে।

অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য দিতে গিয়ে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, আমরা এখন থেকে যা করব স্বাধীনভাবে করব। নির্বাচন করব স্বাধীনভাবে। একবারে জিততে না পারি দুইবারে, দুইবারে জিততে না পারি তিনবারে, তবে বামপন্থীদের ক্ষমতায় আসতে হবে। দেশে শোষণহীন সমাজব্যবস্থা কায়েম করতে এর কোনো বিকল্প নেই।

‘আমরা বীরের জাতি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও এ কথা সত্য, আমরা আমাদের বীরত্বের ফল ধরে রাখতে পারি না’-মন্তব্য করে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম শত ফুল ফোটানোর জন্য। অন্যের কাছে হাত পাতার জন্য যুদ্ধ করিনি। সবাই চাকরি পাবে এবং মাস শেষে বেতন পাবে এমন একটি দেশের স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম। কিন্তু দেশ আজ লুটেরা শ্রেণির দখলে চলে গেছে। তারা টাকা লুট করে বিদেশে পাঠাচ্ছে। গত ১১ বছরে ১৬ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে।

মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, অনেকে বলেন শেখ হাসিনার পেনাল্টি কখনো মিস হয় না। কেননা, শেখ হাসিনা পেনাল্টি মারে গোলবারের দুই ফুট দূর থেকে এবং বল ঠেকানোর জন্য কোনো গোলকিপার থাকে না। এই সরকারের পায়ের নিচে কোনো মাটি নেই। এ সরকার জানে নির্বাচন করলে তারা হারবে। তাই বিএনপির সঙ্গে ৬০-৪০ আসনের জন্য দড় কষাকষি করছে। তবে অবাধ নির্বাচন হলে এ সরকার টিকতে পারবে না।

তিনি ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ভেজাল মুক্তিযোদ্ধার মতো ভেজাল ছাত্র ইউনিয়ন হলে কাজ হবে না। মন ও মননে মানবিকতা থাকতে হবে। তবেই সকলের মনে মানবিকতার মূল্যবোধ ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হবে।

সিপিবি নেতা বলেন, দেশে উন্নয়নের কথা বলে মানুষকে ভেল্কি দেখানো হচ্ছে। অতীতে আইউব খান, ব্রিটিশ, মোগলরাও একই কাজ করেছে। সেদিন এক নারী আমাকে বলছিল ‘বড় লোকের জন্য স্যাটালাইট আর আমাদের হালুয়াটাইট’।

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম আরও বলেন, সিপিবিসহ সব বাম শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। পাশাপাশি সমাজে সকল বামপন্থী চেতনার লোকদের একতাবদ্ধ করতে হবে। সিপিবির কার্ড হোল্ডারদের অহংবোধ আছে। তারা মনে করে, তারাই সেরা। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, কোনো আন্দোলনে কার্ড হোল্ডারদের চাইতে অকার্ড হোল্ডারদের ভূমিকা বেশি।

সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রবীণ ন্যাপ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা চিত্ত রঞ্জন ঘোষ। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন গোপালগঞ্জ সিপিবির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু হোসেন, ক্ষেত মজুর সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আব্দুল মালেক সিকদার, জেলা উদীচীর সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মোতালেব, প্রকৌশলী শর্মিষ্ঠা সাহা, সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নিমাই গাঙ্গুলী ও রফিকুজ্জামান প্রমুখ।

শুরুতে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সভার কাজ শুরু হয়। অনুষ্ঠানের মাঝে মাঝে বিপ্লবী গান পরিবেশন করে জেলা উদীচীর শিল্পীরা। পরে সকলকে আপ্যায়ন করা হয়।