লুট করতেই বিদ্যুতের দাম বারবার বাড়াচ্ছে সরকার: খন্দকার মোশাররফ

লুট করতেই বিদ্যুতের দাম বারবার বাড়াচ্ছে সরকার: খন্দকার মোশাররফ

জনগণের কাছ থেকে টাকা লুট করতেই সরকার বিদ্যুতের দাম বারবার বাড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

জ্বালানির দাম বাড়ানোর ক্ষমতা সরকারের নিজের কাছে নেওয়ার পর এক মাসের ব্যবধানে দুই বার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর দিকটি দেখিয়ে তিনি বলেছেন, “আজকে তাদের হাতে টাকা নাই। এদেশের সাধারণ মানুষ থেকে লুট করে টাকা নেওয়ার জন্য বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করছে, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করছে, পানির দাম বৃদ্ধি করছে। অথচ সরকার জনগণকে বিদ্যুৎ দিতে পারে না, গ্যাস দিতে পারে না, পানি দিতে পারে না। এদেশের মানুষের অবস্থা আজকে অত্যন্ত দুর্বিষহ।”

মঙ্গলবার দুপুরে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডের কাছে ‘নীরব পদযাত্রা’র তৃতীয় কর্মসূচির শুরুতে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

সোমবার বিদ্যুৎ বিভাগ পাইকারিতে গড়ে ৮ দশমিক ০৬ শতাংশ এবং খুচরায় ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ফেব্রুয়ারি মাসের জন্য বিদ্যুতের নতুন মূল্যহার নির্ধারণ করেছে। এর ফলে খুচরায় গ্রাহক পর্যায়ে গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ভারিত গড়ে দাঁড়াবে ৭ টাকা ৮৫ পয়সা, যা আগে ৭ টাকা ৪৮ পয়সা ছিল। আর ভারিত গড়ে পাইকারি বিদ্যুতের প্রতি ইউনিটের দাম ৬ টাকা ২০ পয়সা থেকে বেড়ে হচ্ছে ৬ টাকা ৭০ পয়সা।

খন্দকার মোশাররফ বলেন, “দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিও একই কারণ। তারা আজকে পণ্য আমদানি করতে পারছে না। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের স্টিমার এসে বসে আছে। টাকা দিতে পারে না বলে মাল খালাস করতে পারে না। বড় বড় কথা বলে।

“কারা নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রবমূল্য বৃদ্ধি করছে? আওয়ামী লীগের সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা- যারা বিদেশে টাকা পাচার করে; আজকে এদেশে দুর্ভিক্ষের অবস্থা সৃষ্টি করেছে, অর্থনীতি ধ্বংস করে দিয়েছে।”

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতির সূচকে বাংলাদেশের অবনমনের বিষয়টি দেখিয়ে খন্দকার মোশাররফ বলেন, “আপনারা দেখেছেন এত লেখালেখি হচ্ছে, বিদেশিরা চাপ দিচ্ছে; তারপরেও গত কয়েক মাসে দেখেন কী পরিমাণ দুর্নীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। আপনারা হয়ত জানেন, সারা পৃথিবীর বুকে এই দুর্নীতির একটা পরিলেখক আছে- সেই পরিলেখকে আমরা সর্বনিম্ন ১৩ নম্বরে ছিলাম। সেটা আরো এক ধাপ কমে আজকে দেখা গেল ১২-তে নিচে নেমে এসেছে।”

খন্দকার মোশাররফ বলেন, “সরকারের এত নির্যাতনের পরেও বিএনপি ঘরে বসে যায়নি, এদেশের জনগণও বসে যায়নি। বরং আপনাদের (সরকার) বিদায় করার জন্য রাস্তায় নেমেছে। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি, রাস্তায় আছি। আওয়ামী লীগ ভীত হয়ে আমাদের পদযাত্রা নিয়ে নানা সমালোচনা করছে।

“আমরা বলতে চাই, আপনাদের সময় শেষ। আগামী দিনের বাংলাদেশে হবে- বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের বাংলাদেশ। অতএব আপনারা বিদায় নেওয়ার জন্য প্রস্তুত নিন। আমরা কিন্তু আপনাদের বিদায়ের অগ্রিম শোভাযাত্রার এই পদযাত্রা করছি। আপনারা এটাকে যা-ই মনে করেন না কেন, আপনাদের বিদায়ের এটা হচ্ছে আমাদের এই শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা।”

তিনি বলেন, “বেশি সময় নাই। আমরা অতি দ্রুত এই সরকারকে বিদায় দিতে সমর্থ হব। এজন্য আমাদের মধ্যে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।”

সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান ও সদস্য সচিব আমিনুল হকও বক্তব্য রাখেন।

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ১০ দফা দাবিতে দুপুর আড়াইটায় ঢাকা মহানগর উত্তরের উদ্যোগে গাবতলী বাস স্ট্যান্ড থেকে মাজার রোড দিয়ে মিরপুর ১ নম্বর হয়ে ১০ নম্বর গোল চত্বর পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার পথে দেড় ঘণ্টার ‘নীরব পদযাত্রা’ করে বিএনপির নেতাকর্মীরা।

এই পদযাত্রায় গাবতলী-মিরপুর এলাকার বিভিন্ন ওয়ারর্ডের নেতা-কর্মী ছাড়াও মহিলা দল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী অংশ নেয়।

কর্মসূচিতে অন্যদের মধ্যে অংশ নেন বিএনপির আবদুল আউয়াল মিন্টু, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, হাবিবুর রহমান হাবিব, আবদুস সালাম আজাদ, নাজিম উদ্দিন আলম, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, মীর সরাফত আলী সপু, ডা. রফিকুল ইসলাম, সাইফুল আলম নিরব, রিয়াজ উদ্দিন নসু, এস এম জাহাঙ্গীর, মহানগর উত্তরের মুন্সি বজলুল আসিত আনজু, ফেরদৌসী আহমেদ মিষ্টি, এস এ ছিদ্দিক সাজু, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, নায়াবে ইউসুফ, ফরিদা ইয়াসমীন, যুব দলের মামুন হাসান, মোনায়েম মুন্না, শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের এস এস জিলানি, রাজিব আহসান, শ্রমিক দলের মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাইফ মাহমুদ জুয়েল।

রাজধানীর গাবতলী-মিরপুরের ব্যস্ততম সড়কে পদযাত্রা উপলক্ষে ব্যাপক মানুষের সমাগমে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।

বিএনপির পদযাত্রা উপলক্ষে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

চারদিনের এই পদযাত্রা কর্মসূচির প্রথম দিন গত শনিবার বাড্ডার সুবাস্তু টাওয়ার থেকে মালিবাগের আবুল হোটেল পর্যন্ত, সোমবার যাত্রাবাড়ী থেকে জুরাইন রেলগেইট পর্যন্ত পথযাত্রা করে বিএনপি। আর বুধবার শেষ দিনে এই কর্মসূচি হবে মুগদা থেকে মালিবাগ পর্যন্ত।