পোলাপাইন পাঠাইছি, ওরা যা করার করবে: ঢাকায় ব্যবসায়ীকে ছাত্রলীগ নেতার হুমকি

পোলাপাইন পাঠাইছি, ওরা যা করার করবে: ঢাকায় ব্যবসায়ীকে ছাত্রলীগ নেতার হুমকি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রলীগের এক নেতার বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসের বাইরে চাঁদাবাজি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। চাঁদার টাকা আদায়ে রাজধানীর বঙ্গবাজারের এক পানি ব্যবসায়ীকে ফোন করে হুমকি-ধমকি দিয়েছেন তিনি। এ-সংক্রান্ত একাধিক কলরেকর্ড সমকালের হাতে এসেছে। অভিযুক্ত ইমদাদুল হাসান সোহাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, ছাত্রলীগ নেতা সোহাগ ১০-১২ দিন ধরে তাঁকে ফোন করছেন। শুধু তিনিই নন, তাঁর অনুসারীদের দিয়েও ফোন করাচ্ছেন। ফোন ধরলেই তাঁরা হুমকি-ধমকি দেন এবং হলে গিয়ে দেখা করতে বলেন। সোহাগ কেন দেখা করতে বলেছেন, সেটা জানতে দু'দিন আগে তিনি তাঁকে ফোন করেন; পরিচয় দেওয়া মাত্রই সোহাগ উচ্চস্বরে গালাগাল ও হুমকি দেওয়া শুরু করেন। তিনি বলেন, তিনি তাঁকে দেখতে চান। গুলিস্তান আসার জন্য অনুরোধ করলে সোহাগ ক্ষিপ্ত হয়ে আরও গালাগাল করেন। এ সময় বারবার হলে গিয়ে দেখা করতে বলেন। এ ছাড়া গত মঙ্গলবার রাতে দুই অনুসারী পাঠান তাঁর খোঁজ করতে। তাঁরা তাঁকে না পেয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালান। পানির বোতলগুলো ভাঙচুর করেন।

একটি কলরেকর্ডে সোহাগকে বলতে শোনা যায়, 'আপনি কোথায়, ভাই। আপনাকে একটু দেখব। আপনাকে দেখার শখ হইছে আমার।' সোহাগকে গুলিস্তান যেতে অনুরোধ করলে তিনি ওই ব্যবসায়ীকে বলেন, 'আমার এখন আপনার সঙ্গে দেখা করতে গুলিস্তান যেতে হবে? আমার অত দরকার নাই। আপনার দরকার হইলে আপনিই আমার কাছে কত আসবেন! আনন্দ বাজারে ব্যবসা করে আপনি কত বড় কুতুব হইছেন, সেইটা আমি দেখব। তুই আসলে আসবি, না আসলে থাকবি। তোর সাথে পরিচিত হবো আমি।'

কী দরকার জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'তোরে কি আমার ফোনে বলতে হবে? আচ্ছা, তুই আমারে আর ফোন দিস না। পোলাপাইন পাঠাইছি, ওরা যা করার করবে।'

আরেকটি কলরেকর্ডে সোহাগের এক অনুসারীকে বলতে শোনা যায়, 'আপনি বোঝেন না সে (সোহাগ) কী চায়? তারে টাকা দেবেন না ঠিক আছে, কিন্তু আপনার ছোট ভাইদের তো দেবেন। ছোট ভাইরা তো পড়ালেখা করে, তাদের খরচ আছে না?'

ওই ব্যবসায়ী ছাড়াও হল এলাকার বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হয় সমকালের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁরা অভিযোগ করেন, চাঁদার টাকার জন্য বিভিন্ন সময় তাঁদের হলে ডেকে নিয়ে মারধর করে টাকা আদায় করেছেন সোহাগ ও তাঁর অনুসারীরা। ভুক্তভোগীরা আরও দাবি করেন, চাঁদার টাকা না দিতে পারলে দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় হলের ছাত্ররা খাবার হোটেলে খেয়ে টাকা দেন না। টাকা চাইলেই মারধর করেন।

আনন্দ বাজার বণিক সমিতি সূত্র জানায়, প্রতি মাসে অমর একুশে হল ছাত্রলীগকে ৩০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এরপরও তাঁরা বিভিন্ন সময়ে ব্যবসায়ীদের হয়রানি-অপদস্থ করেন।

এর আগে গত বছরের মার্চে আনন্দ বাজারের দোকান মালিকদের কাছে এককালীন ১০ লাখ এবং প্রতি মাসে ১ লাখ টাকা করে চাঁদা দাবির অভিযোগ ওঠে অমর একুশে হল ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে।

অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা সোহাগ বলেন, ওই ব্যবসায়ীর কাছে চাঁদা দাবি করিনি। তাঁর সঙ্গে আমার একটা দরকার ছিল, এ কারণে তাঁকে দেখা করতে বলি। কলরেকর্ডে কোথাও বলিনি যে, টাকা দিতে হবে। কলরেকর্ডে গালাগালের বিষয়ে তিনি বলেন, যখন তাঁর সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলাম, তখন তিনিও আমার সঙ্গে উচ্চস্বরে কথা বলেন। তখন উত্তেজিত হয়ে হয়তো কিছু কথা বলে ফেলেছি।

ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদাবাজির অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, তদন্তসাপেক্ষে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অমর একুশে হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ইসতিয়াক এম সৈয়দ বলেন, এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ দিলে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।