৩৮ হাজার নদী দখলদারের নাম প্রকাশ নিয়ে রহস্য

৩৮ হাজার নদী দখলদারের নাম প্রকাশ নিয়ে রহস্য

নদীমাতৃক দেশে নদীর দীর্ঘশ্বাস। দখলদারদের কবলে নিত্য সর্বনাশ। দেশের ৪৮টি নদ-নদীর দখলদারদের চিহ্নিত করতে ২০১৮ সালে নেয়া ৩৩ কোটি টাকার একটি সমীক্ষা প্রকল্প। যা যৌথভাবে বাস্তবায়ন করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। গেল ডিসেম্বরে দেয়া হয় প্রকল্প প্রতিবেদন। উঠে আসে প্রায় ৩৮ হাজার দখলদারের নাম।

প্রকল্পের শর্ত অনুযায়ী, তালিকাটি ওয়েবসাইটে প্রকাশের কথা থাকলেও তা আটকে দিয়েছে বর্তমান কমিশন। প্রতিষ্ঠানটির আগের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমানের সময় হওয়া ওই তালিকাকে গলদপূর্ণ বলছেন বর্তমান চেয়ারম্যান।

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, এর আগের কমিশন পানি আইনকে অনুসরণ করে দখলদারদের চিহ্নিত করেছে। কিন্তু অবৈধ দখলদারদের চিহ্নিত করতে সিএস, আরএসের ম্যাপ ধরে কাজ করতে হবে।

তবে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদারের অভিযোগ, কারও অভিযোগ ছাড়াই, স্বপ্রোনোদিত হয়ে তালিকা প্রকাশে গড়িমসি করছে বর্তমান কমিশন।

তিনি বলেন, বর্তমান কমিশন চেয়ারম্যান একদিনও কোনো প্রজেক্টে যাননি। তাহলে তিনি কিভাবে এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন। প্রজেক্টে যারা ছিলেন দখলদারদের অনেকে তাদের এলাকার। অনেকক তারা চেনেন, জানেন। তাই তালিকা প্রকাশে গড়িমসি হচ্ছে।

দখলদারদের তালিকা সংশোধনে পাঠানো হয়েছে জেলা প্রশাসকদের কাছে। তবে, ডিসিদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ না করার অভিযোগ নাকচ করেছেন নদী সমীক্ষার প্রকল্প পরিচালক ইকরামুল হক।

তিনি বলেন, এ কথা সত্য নয়। ইএনও, ডিসি, এডিসি সবার সঙ্গেই কথা হয়েছে। ওই রিপোর্ট নিয়ে তাদের সঙ্গে ওয়ার্কশপ করেছি।

ওয়েবসাইট থেকে তালিকাটি মুছে ফেলা হয়নি। বরং আপাতত পাসওয়ার্ড দিয়ে সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। এমন প্রমাণ দিয়ে পরিবেশবাদীদের একহাত নেন বর্তমান চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, অনেকে এই কমিশনকে বিতর্ক করার চেষ্টা করছে। আমরা তাদের কমিশনে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছি।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, পরিবেশবাদীদের দিকে আঙ্গুল তোলার আগে তার নিজের পদ্ধতিকে দেখতে হবে। কমিশন বলছে এটা সিএস আইন অনুযায়ী হয় নাই পানি আইন অনুযায়ী হয়েছে। পানি আইনের সঙ্গে সিএস, আরএসের বিরোধ কোথয় সেটা তো আমরা বুঝতে পারছি না।

নদী রক্ষা কমিশন বলছে, প্রতিটি জেলার ডিসি, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পরিবেশ কর্মকর্তাদের দপ্তর ঘুরে প্রতিবেদনটি সংশোধনে সময় লাগতে পারে ৩ মাস। তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের শঙ্কা এত আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতায় হয়তো আলোর মুখ দেখবে না নদী দখলকারীদের তালিকা।