নয়াপল্টনসহ দশ বিভাগে বিএনপির সমাবেশ চলছে

নয়াপল্টনসহ দশ বিভাগে বিএনপির সমাবেশ চলছে

আওয়ামী লীগ সরকারের দমন-পীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি, বিদ্যুৎ ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য কমানোসহ ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশ শুরু হয়েছে। সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দিবেন। আজ শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টায় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত এবং জাতীয় ও দলীয় সংগীতের মাধ্যমে দশটি বিভাগীয় শহরে সমাবেশ শুরু হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, আজ শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১০টার পর থেকে রাজধানীর মালিবাগ, মগবাজার, যাত্রাবাড়ি, পুরানা পল্টন এলাকা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নয়াপল্টন এলাকায় আসতে শুরু করে নেতাকর্মীরা। একইভাবে রাজধানীর বাইরে বিভাগীয় শহরগুলোতে সকাল ১০টার পর মিছিল নিয়ে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় সমাবেশ স্থল। বেলা ১১টার পর থেকে স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, রংপুর, ফরিদপুর, বরিশাল, ময়মনসিংহ এলাকায় আমাদের প্রতিনিধির কাছ থেকে এসব তথ্য জানা যায়।

এদিকে বিএনপির কর্মসূচির কারণে রাজধানীর পুরানা পল্টন থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে করে রাজধানীতে যানজট তৈরি হয়েছে।

এ ছাড়া যুগপৎ আন্দোলনে শরিকদলগুলোও নিজ নিজ দল বা জোটের ব্যানারে একই দাবিতে কর্মসূচি পালন করছে।

শরিক দলগুলোর কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে: গণতন্ত্র মঞ্চ-জেএসডি সভাপতি আ স ম রবসহ গণতন্ত্র মঞ্চ নেতৃবৃন্দ জাতীয় প্রেস ক্লাব সকাল ১১ টা ৩০ মিনিটে কর্মসূচি পালন করবে। ১২ দলীয় জোট- জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দারসহ জোট নেতৃবৃন্দ বিজয় নগর পানির ট্যাংক পাম্প সংলগ্ন এলাকায় সকাল ১১ টায়। জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট- এনপিপি চেয়ারম্যান ডক্টর ফরিদুজ্জামান ফরহাদসহ জোট নেতৃবৃন্দ পুরানা পল্টন আলরাজী কমপ্লেক্স প্রিতম ভবনের উল্টো দিকে সকাল ১১ টায়। গণফোরাম ও পিপলস পার্টি- গণফোরাম সভাপতি মোস্তফা মহসিন মন্টুসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দ গণফোরাম দলীয় অফিস প্রধান সড়কের সামনে মতিঝিল নটরডেম কলেজের উল্টো দিকে বিকাল ৪ টায়। গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য-সাম্যবাদী দল সাধারণ সম্পাদক হারন চৌধুরীসহ নেতৃবৃন্দ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সকাল ১১ টায়। এলডিপি- এলডিপি মহাসচিব ডক্টর রেদোয়ান আহমদসহ নেতৃবৃন্দ কাওরান বাজার এফডিসি সংলগ্ন এলডিপি অফিসের সামনে বিকাল ৩ টায় কর্মসূচি পালন করবে।

এছাড়া বিএনপি কুমিল্লা বিভাগ-কুমিল্লা টাউন হল ময়দান দুপুর ২টায়। এতে প্রধান অতিথি বিএনপি স্হায়ী কমিটি সদস্য ডক্টর খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

রাজশাহী বিভাগ-রাজশাহী সোনা মসজিদ মোড় দুপুর ২টায়। প্রধান অতিথি-বিএনপি স্হায়ী কমিটি সদস্য মির্জা আব্বাস।

খুলনা বিভাগ- খুলনা সিটি করপোরেশন সামনে সোসাইটি মোড় দুপুর ২টায়। প্রধান অতিথি- বিএনপি স্হায়ী কমিটি সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

বরিশাল বিভাগ- বরিশাল জেলা স্কুল মাঠ দুপুর ২টায়। প্রধান অতিথি- বিএনপি স্হায়ী কমিটি সদস্য ডক্টর আব্দুল মঈন খান।

চট্টগ্রাম বিভাগ-চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি অফিসের সামনে দুপুর ২টায়। প্রধান অতিথি-বিএনপি স্হায়ী কমিটি সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

ময়মনসিংহ বিভাগ-ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট মাঠ দুপুর ২টায়। প্রধান অতিথি-বিএনপি স্হায়ী কমিটি সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

সিলেট বিভাগ-সিলেট রেজিস্ট্রার মাঠ দুপুর ২ টায়।প্রধান অতিথি-বিএনপি স্হায়ী কমিটি সদস্য সেলিমা রহমান।

ফরিদপুর বিভাগ- ফরিদপুর কমলপুর হাইস্কুল মাঠ দুপুর ২ টায়।প্রধান অতিথি-বিএনপি ভাইস-চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু।

রংপুর বিভাগ-রংপুর মহানগর বিএনপি অফিস সামনে দুপুর ২ টায়, প্রধান অতিথি-বিএনপি ভাইস-চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান।

এর আগে একই দাবিতে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত ২৪ ডিসেম্বর ৯ বিভাগীয় শহরে এবং ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণমিছিল, ১১ জানুয়ারি অবস্থান কর্মসূচি এবং ১৬ জানুয়ারি বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ-সমাবেশ করে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে না যাবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা আমাদের দাবি আদায়ে হবে, ততদিন আন্দোলন চলমান থাকবে ‘

মির্জা ফখরুল বলেন, ’ফ্যাসিষ্ট, স্বৈরাচারি কোনো সরকার এমনি এমনি চলে যায় না। তাদেরকে সরাতে হয়। আমরা আন্দোলনের মাধ্যমেই এই স্বৈরাচার সরকারকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবো। গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেবো।’

বিএনপি নির্বাচনের বছরকে সামনে রেখে দেশের বিভাগে বিভাগে সমাবেশ শুরু করেছিল গত বছর অক্টোবরে। বিভিন্ন বিভাগে পরিবহণ ধর্মঘটের মধ্যে সমাবেশ শেষে ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশ করে দলটি। স্থান নির্বাচন ও অবস্থানের ঘোষণার মধ্যে যা তখন রাজনীতিতে উত্তাপ তৈরি করেছিল। ঢাকা বিভাগীয় সবাবেশেকে কেন্দ্র করে সেই উত্তাপ নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ৭ ডিসেম্বর সংর্ঘষে রূপ নেয়। বিএনপির অফিসে সংঘর্ঘ, পরে কার্যালয়ে পুলিশি অভিযান, সিনিয়র নেতাদের গ্রেপ্তারে পিছু হটে বিএনপি। এরপর ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর গোলাপবাগে ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়।

বিভাগে বিভাগে সমাবেশ কর্মসূচির প্রায় দুই মাসের মধ্যে এবার ১০ দফা দাবি আদায়ে একযোগে সব বিভাগে একই দিনে সমাবেশ করছে বিএনপি। দলটির ১০ সাংগঠনিক বিভাগীয় ইউনিটে এ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। যা যুগপৎ আন্দোলনের চতুর্থ কর্মসূচি।