ডাটা সুরক্ষা আইন পাস হলে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ছাড়তে বাধ্য হবে: পিটার হাস

ডাটা সুরক্ষা আইন পাস হলে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ছাড়তে বাধ্য হবে: পিটার হাস

খসড়া ডাটা সুরক্ষা আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ পুনর্ব্যক্ত করেছেন ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। সেই সঙ্গে ডাটাকে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে পরিচালনা ও মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় সচেষ্ট থাকার তাগিদ দিয়েছেন। খসড়া এ আইন পাস হলে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

রবিবার বিকালে রাজধানীর ইএমকে সেন্টারে বাংলাদেশে অনলাইন স্বাধীনতা ও ব্যবসায় বিনিয়োগ- শীর্ষক এক আলোচনায় রাষ্ট্রদূত একথা উল্লেখ করেন

মার্কিন দূতাবাস আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, জনসংযোগ বিশেষজ্ঞ রুবাবা দৌলা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

হাইব্রিড প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত আলোচনায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, আমি আমাদের উদ্বেগের কথা বলার আগে এ কথা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমরা বাংলাদেশের নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়টিকে শ্রদ্ধা করি। আমরা উদ্বিগ্ন যে, ডাটা সুরক্ষা আইন যদি ডাটা স্থানীয়করণের প্রয়োজনীয়তাকে কঠোরভাবে অনুসরণ করার শর্ত দিয়ে অনুমোদন করা হয় বা আইনে পরিণত করা হয়, তাহলে বর্তমানে বাংলাদেশে কাজ করছে এমন কিছু মার্কিন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের বাজার ছেড়ে যেতে বাধ্য হতে পারে। একইভাবে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম পরিচালনার ক্ষেত্রে যদি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহারকারীদের তৈরি করা কনটেন্ট বা বিষয়বস্তুর কারণে অপরাধের দায় নিয়ে ফৌজদারি আইনের মুখোমুখি হতে হয় তাহলে তারা এখানে তাদের ব্যবসায় বিনিয়োগ করা থেকে বিরত থাকবে। এর পরিণতি বাংলাদেশের জন্য খুবই নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

তিনি বলেন, এখানে প্রায় ২ হাজারেরও বেশি স্টার্টআপকে ব্যবসা ছেড়ে দিতে হতে পারে। প্রতিদিন যে কোটি কোটি বাংলাদেশি ব্যবহারকারী তাদের সেবা নিচ্ছেন, তারা আর এই সেবাগুলো পাবেন না। ব্যবসাকে আকর্ষণ করার জন্য উদ্ভাবনের সংস্কৃতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এ জন্য অনলাইন উন্মুক্ত ও স্বাধীন হওয়া দরকার জানিয়ে তিনি বলেন, আর সেই সূত্রে পরবর্তী যে বিষয়টি আলোচনায় চলে আসে তা হলো মানবাধিকার। যুক্তরাষ্ট্র ব্যবহারকারী ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সুরক্ষার জন্য অনলাইন বিষয়বস্তু পরিচালনার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে এবং এটি কোনো সহজ কাজ নয়। তবে আমরা অনলাইন প্ল্যাটফর্মের যে খসড়া আইন দেখেছি সেখানে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে এমন অনলাইন কনটেন্ট বা বিষয়বস্তুর সংজ্ঞার বিস্তৃত পরিসর নিয়ে আমাদের উদ্বেগ রয়েছে।

মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, আমরা সাম্প্রতিক ঘোষণার বিষয়ে উদ্বিগ্ন যে, ১৯১টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ব্লক করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সমালোচনা গ্রহণ করার সক্ষমতা এবং অপ্রীতিকর বক্তব্য হলেও বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করা শক্তিশালী গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য। যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস নাগরিক সমাজের অনেক সংস্থা এবং সাংবাদিকদের কাছ থেকে এই আইন বিষয়ে শুনেছে। তাদের ভয় হলো, এই নিয়ম ও আইন মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতাকে সীমিত করবে।

তিনি বলেন, ডাটা সুরক্ষা আইনের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। আমরা উদ্বিগ্ন যে, ডাটা সুরক্ষা আইনের সর্বশেষ খসড়ায় একটি স্বাধীন ডাটা তদারকি কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা রাখা হয়নি এবং এই আইনে ফৌজদারি শাস্তি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যদিও আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে প্রতিটি দেশ তাদের স্থানীয় প্রেক্ষাপটকে অবশ্যই বিবেচনায় রাখবে। কিন্তু আমরা বাংলাদেশসহ সকল দেশকে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট আন্তর্জাতিক মানদণ্ডগুলো সমুন্নত রাখার আহ্বান জানাই।

ঢাকার ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা এবং আইনের প্রয়োগ নিয়ে ভারসাম্য খুঁজতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা বাংলাদেশের সংবিধানে বলা রয়েছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা কার্যকরী গণতন্ত্র ও সকল ধরনের মানবাধিকারের জন্য জরুরি। আর যেহেতু মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা রয়েছে, এখানে ডিজিটাল নিরাপত্তার মত আইন রয়েছে, ফলে বাংলাদেশে এ নিয়ে কথা বলার কারণ রয়েছে।