দেশে ১০ কোটি টাকার বেশি সম্পদ আছে ২৮,৯৩১ জনের  

দেশে ১০ কোটি টাকার বেশি সম্পদ আছে ২৮,৯৩১ জনের   

 

২০২১ সালে দেশে ৫০ কোটি ডলার বা ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি পরিমাণের সম্পদ আছে—এমন ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ২১। আর করোনা মহামারির মধ্যেও ২০২১ সালে দেশে ১০ কোটি টাকার বেশি সম্পদধারী ব্যক্তির সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৪৩ শতাংশ। তখন মোট ২৮ হাজার ৯৩১ জনের সম্পদ ছিল ১০ লাখ থেকে ৫০ লাখ ডলারের মধ্যে (১০ কোটি ৭০ লাখ থেকে ৫৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা)।

ক্রেডিট সুইস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তৈরি করা তথ্যভান্ডারের সর্বশেষ প্রকাশিত ২০২২ সালের সংস্করণে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

তবে ২০২১ সালে দেশে ১০ কোটি টাকার বেশি সম্পদধারী ব্যক্তির সংখ্যা ৪৩ শতাংশ বাড়লেও ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয় ১৯ শতাংশ। শঙ্কার কথা হচ্ছে, দেশের ধনীর সংখ্যা বাড়লেও জিডিপির সাপেক্ষে রাজস্বের অনুপাত বাড়ছে না।

এ ছাড়া ২০২০ সালের শেষে দেশে ১ মিলিয়ন ডলার (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী ১০ কোটি ৭০ লাখ টাকার সমপরিমাণ) বা এর বেশি সম্পদের মালিক ছিলেন ৩০ হাজার ৫৫৯ জন। ২০২০ সালে এ সংখ্যা ছিল ২১ হাজার ৩৯৯।

তথ্যভান্ডার অনুযায়ী, ২০২১ সাল শেষে দেশে ৫০ কোটি ডলারের বেশি (৫ হাজার ৩৫০ কোটি টাকার বেশি) সম্পদ ছিল ২১ ব্যক্তির কাছে। এ সময় ১০ থেকে ৫০ কোটি ডলারের (১ হাজার ৭০ কোটি থেকে ৫ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা) সম্পদ ছিল ৪৩ ব্যক্তির। এ ছাড়া ৫-১০ কোটি ডলারের (৫৩৫ কোটি থেকে ১ হাজার ৭০ কোটি টাকা) সম্পদ ছিল ৩৯ ব্যক্তির হাতে। ৪০০ ব্যক্তির হাতে ছিল ১-৫ কোটি ডলারের (১০৭ কোটি থেকে ৫৩৫ কোটি টাকা) সমপরিমাণ সম্পদ। ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি ডলারের (৫৩ দশমিক ৫ কোটি থেকে ১০৭ কোটি টাকা) সমপরিমাণ সম্পদ ছিল ১ হাজার ১২৫ জনের।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত দেশের ১ লাখ ৬ হাজার ৫২০টি ব্যাংক হিসাবে কোটি টাকা বা তার চেয়ে বেশি অর্থ ছিল।
কিন্তু এ তো গেল আনুষ্ঠানিক অর্থনীতির হিসাব। যে দেশের শ্রমশক্তির ৮০ শতাংশের বেশি অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করে, সেই দেশে কোটিপতির প্রকৃত সংখ্যা কত, তার হিসাব পাওয়া প্রায় অসম্ভব বলেই মনে করেন বিশ্লেষকেরা। অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতির লেনদেন ব্যাংকিং বা আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে হয় না।

ক্রেডিট সুইসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২১৭টি দেশ ও অর্থনৈতিকভাবে স্বতন্ত্র অঞ্চলের (হংকংয়ের মতো বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল) সম্পদের বণ্টন সংশ্লিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে এই তথ্যভান্ডার তৈরি করা হয়েছে। এটা তৈরি হয়েছে তিন ধাপে। প্রথম ধাপে সংশ্লিষ্ট দেশ ও অঞ্চলগুলোর গড় সম্পদের বণ্টন হিসাব করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশের সরকারি সংস্থার খানা জরিপের তথ্য ব্যবহার করেছে তারা। যেসব দেশের খানা জরিপের তথ্য পাওয়া যায়নি, সেই দেশগুলোর অর্থনৈতিক পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে সম্পদের বণ্টন গাণিতিকভাবে বের করা হয়েছে। অনেক দেশেরই আবার পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট উপ-অঞ্চলের গড় সম্পদ, জিডিপির অনুপাত, বিভিন্ন উপাত্তের ভিত্তিতে রিগ্রেশন অ্যানালাইসিসসহ পরিসংখ্যানের বিভিন্ন পদ্ধতির প্রয়োগ করা হয়েছে।

ধনী বাড়লেও কর বাড়ছে না

পৃথিবীতে যেসব দেশের কর-জিডিপির অনুপাত সবচেয়ে কম, বাংলাদেশের তাদের অন্যতম। দেশে এই হার মাত্র ৯ শতাংশ। এ কারণে দেশের সরকারি ব্যয়ও অনেক কম। দক্ষিণ এশিয়ায় শুধু ভারত ও নেপালের রাজস্ব আয় জিডিপির অনুপাতে ২০ শতাংশের কাছাকাছি।

রাজস্ব-জিডিপির অনুপাত সবচেয়ে কম হওয়ার পাশাপাশি আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, দেশের রাজস্বের ৬৫ শতাংশ পরোক্ষ কর থেকে আসছে, বাকি ৩৫ শতাংশ আসছে প্রত্যক্ষ বা আয়কর থেকে। এতে দেশে বৈষম্য বাড়ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। যদিও সরকার এই হার উল্টে দেওয়ার কথা ভাবছে।

গত ১০ বছরে দেশে প্রত্যক্ষ করের অনুপাত ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। কিন্তু দেশ থেকে যে হারে অর্থ পাচার হয়, তাতে সরকার বিপুল রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তবে দেশের কর-জিডিপির অনুপাত আনুষ্ঠানিক অর্থনীতির আকারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ টমাস পিকেটি সাম্প্রতিক এক ব্লগে লিখেছেন, ২০ শতকে যুক্তরাষ্ট্রের অনুক্রমিক করব্যবস্থা (যার যত বেশি আয়, তার করহার তত বেশি) অত্যন্ত সফল ছিল। ১৯৩০-৮০ সাল পর্যন্ত সে দেশের সবচেয়ে ধনী মানুষের আয়কর ছিল ৮০-৯০ শতাংশ। ঠিক সেই সময় যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তখন সে দেশে আজকের মতো বৈষম্য ছিল না এবং শিক্ষায় তারা সবচেয়ে এগিয়ে ছিল।

এ জন্য পিকেটির মত, শতকোটি ডলারের মালিকদের ওপর ৮০-৯০ শতাংশ করারোপ করা হোক। আর সেই অর্থের বড় অংশ সরাসরি দরিদ্র দেশগুলোতে পাঠানো হোক।