সরকারি গমের গাড়িতে পাওয়া গেল কংক্রিট ও বালুর বস্তা, গ্রেপ্তার ৩

সরকারি গমের গাড়িতে পাওয়া গেল কংক্রিট ও বালুর বস্তা, গ্রেপ্তার ৩

চুয়াডাঙ্গায় বিদেশ থেকে আমদানি করা গমভর্তি কাভার্ড ভ্যান ও ট্রাক থেকে বালুর বস্তা ও কংক্রিট উদ্ধারের ঘটনায় মামলা হয়েছে। এতে ১২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। গতকাল সোমবার মধ্যরাতে সদর উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় মামলাটি করেন।

গতকাল পুলিশের হাতে আটক ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানগুলোর চালকদের তিন সহকারীকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তারা হলেন ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার ভাণ্ডারিয়া এলাকার হোসেন আলী (২২), খুলনা মহানগরীর ৭ নম্বর ঘাট এলাকার রবিউল ইসলাম (২১) ও হৃদয় হোসেন (১৮)। মামলার অন্য ৯ আসামি হলেন তিন পরিবহন ঠিকাদার এবং কাভার্ড ভ্যান ও ট্রাকের ছয়জন চালক। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। গম বহনে ব্যবহৃত কাভার্ড ভ্যান ও ট্রাকগুলোকে পুলিশ হেফাজতে আছে।

সদর উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম জানান, মামলায় মূল বক্তব্য হিসেবে বলা হয়েছে, ‘৫ ফেব্রুয়ারি সকাল নয়টার দিকে গাড়ি খালাসের জন্য পয়েন্টে যায়। একজন ট্রাকচালককে জিজ্ঞেস করি কেবিনে গম লুকিয়ে রেখেছে কি না। সে রাখেনি বলে জানায়। কিন্তু কেবিন পরীক্ষা করে দেখা যায়, সেখানে তিনটি ও হুডের ওপর আরও চারটিসহ মোট সাতটি বালুর বস্তা। এভাবে বাকি গাড়িগুলো পরীক্ষা করে বালুর বস্তা ও কংক্রিটের টুকরা পাওয়া যায়।’

এ দিকে সদর উপজেলা খাদ্যগুদামে অবশিষ্ট দুটি ট্রাক থেকে গতকাল রাতে গম খালাস করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ছয়টি গাড়িতে মোট ৩ হাজার ৭৭১ কেজি গম ওজনে কম পাওয়া গেছে। প্রতি কেজি গমের মূল্য ৬০ টাকা হিসেবে মোট ২ লাখ ২৬ হাজার ২৬০ টাকার গম কম পাওয়া গেছে বলে হিসাব করা হয়েছে।

কর্মকর্তারা বলেন, এসব গাড়ি থেকে উদ্ধার করা ২৮টি বালুর বস্তা ও কংক্রিটের ওজন ১ হাজার ৪৮৮ কেজি। সংঘবদ্ধ চক্রটি বিশেষ কায়দায় গম সরিয়ে ফেলার পর বালুর বস্তা ও কংক্রিটের টুকরা গাড়ির গোপন স্থানে লুকিয়ে রাখলেও তা ছিল চোরাই গমের তুলনায় প্রায় তিন ভাগের একভাগ।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) এ কে এম শহিদুল হক বলেন, তিনজন পরিবহন ঠিকাদারের ছয়টি গাড়িতে করে খুলনার ৪ নম্বর ঘাট থেকে গমগুলো চুয়াডাঙ্গা সদর খাদ্যগুদামে আনা হয়। প্রাথমিক তথ্যানুযায়ী পরিবহন ঠিকাদারদের যোগসাজশে চালক ও চালকের সহকারীরা আত্মসাতের জন্য সরকারি গম চুরি করেন। গতকাল দুপুরে পুলিশের হাতে আটক চালকের তিন সহকারীর দেওয়া তথ্য ও পুলিশের অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করা হয়েছে।

আমদানি করা গমভর্তি কাভার্ড ভ্যান ও ট্রাক থেকে বালুর বস্তা ও কংক্রিটের টুকরা উদ্ধারের ঘটনায় গঠিত দুটি কমিটি তদন্ত করছে। জেলা প্রশাসনের গঠন করা চার সদস্যের তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক হলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. নাজমুল হামিদ। আজ মঙ্গলবার সকালে তিনি বলেন, ‘পুলিশের হাতে আটক চালকের তিন সহকারী এবং সদর উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলামের জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। সরেজমিন পরিদর্শন করে আলামত দেখা হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খানের কাছে জমা দেওয়া হবে।’

খাদ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক আলমডাঙ্গা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবদুল হামিদ বলেন, আজ তদন্ত প্রতিবেদন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাছে জমা দেবেন।