আওয়ামী লীগের প্রতি একান্ত অনুগত চুপ্পু হচ্ছেন দেশের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট

আওয়ামী লীগের প্রতি একান্ত অনুগত চুপ্পু হচ্ছেন দেশের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট

আওয়ামী লীগের প্রতি একান্ত অনুগত মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু হতে যাচ্ছের বাংলাদেশের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট। রবিবার তাকে মনোনয়ন দিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। প্রধান বিরোধীদল বিএনপিসহ দেশের অন্য কোনো দল প্রেসিডেন্ট পদটির জন্য মনোনয়ন জমা দেয়নি। আর তাই একতরফাভাবেই বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হতে যাচ্ছেন সাবেক বিচারক, দুদক কমিশনার এবং ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দিন চুপ্পু।

আগামী ২৩শে এপ্রিল বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ঢাকার আগারগাঁওয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কার্যালয়ে মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের মনোনয়নপত্র দাখিল করে।

সোমবার ১৩ই ফেব্রুয়ারি প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাছাই হবে, এবং মনোনয়ন প্রত্যাহার করা যাবে ১৪ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

এরপর আইন অনুযায়ী সংসদ ভবনে ১৯শে ফেব্রুয়ারি সংসদ সদস্যদের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবার কথা।

সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি প্রার্থী দেবে না বলে আগেই জানিয়েছে।

আইনানুযায়ী রাষ্ট্রপতি পদে একক প্রার্থী থাকলে এবং মনোনিত প্রার্থী তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করলে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।

যেহেতু এই মূহুর্তে সংসদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে, সে কারণে দলটির এই মনোনীত প্রার্থীরই পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি নির্বাচিত হলে নির্বাচনের দিন থেকে পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হবেন।

মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন পত্র জমা দেয়ার পর নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তার পরিচিতি তুলে ধরেন।

মি. কাদের বলেছেন, মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন পেশায় একজন আইনজীবী এবং তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের একজন সদস্য।

দুই হাজার এগারো সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

তিনি ২০০৬ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসর নেন।

তিনি ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) ক্যাডার সার্ভিসে যোগ দেন এবং ১৯৯৫ সালে জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত হন।

তাকে ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। বর্তমানে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

সংবাদ ব্রিফ্রিংয়ে কাদের বলেছেন, সাহাবুদ্দিন ১৯৭১ সালে পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন।

ছাত্র জীবনে তিনি পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং ১৯৭৪ সালে পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

কাদের বলেন, ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর সামরিক আইনে তিনি তিন বছর কারাগারে বন্দি ছিলেন।

পরবর্তীতে তিনি শেখ মুজিব হত্যা মামলায় আইন মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিযুক্ত সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

সর্বশেষ ২০২২ সালে সাহাবুদ্দিন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

ইসলামি ব্যাংকের ওয়েবসাইটে দেয়া তার জীবন বৃত্তান্ত অনুযায়ী মি. সাহাবুদ্দিন ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে জেএমসি বিল্ডার্স লিমিটেডের প্রতিনিধিত্ব করেন।

সাহাবুদ্দিন ১৯৪৯ সালে পাবনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।

তিনি ১৯৭৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার এমএসসি ডিগ্রী লাভ করেন।

একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৫ সালে তিনি আইন বিষয়ে ডিগ্রি লাভ করেন।

তিনি ১৯৮০-১৯৮২ সাল পর্যন্ত দৈনিক বাংলার বাণীর সাংবাদিক হিসেবেও কাজ করেন।

সাহাবুদ্দিন ২০০৬ সালে শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান এবং ২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

চাকরির সময়কালে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির সদস্য, বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান এবং আরও অনেক কিছু সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।