৩০ লাখ টাকার লোভে খুনিকে দিয়ে বাবাকে হত্যা

৩০ লাখ টাকার লোভে খুনিকে দিয়ে বাবাকে হত্যা

বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিম ব্যাংক থেকে ৩০ লাখ টাকা তুলেছিলেন। বোনদের ঠকিয়ে সেই টাকা আত্মসাতের লোভ করেন আব্দুল হালিমের ছেলে এইচ এম মাসুদ। এজন্য ৫ লাখ টাকায় ভাড়াটে খুনি দিয়ে বাবাকে খুন করান মাসুদ। মৃত্যু নিশ্চিত হতে ডিজিটাল প্রেসার মাপার মেশিন দিয়ে যাচাইও করেন। এরপর ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে সাজান ডাকাতির নাটক। গতকাল দুপুরে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে পিবিআই সদর দপ্তরে রুবেলকে গ্রেপ্তারের পর এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পিবিআই নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম। পিবিআই জানায়, গত ৩১শে জানুয়ারি রাতে বীর মুক্তিযোদ্ধা আ. হালিম নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় তার নিজ বাসায় খুন হন। এ ঘটনায় ১লা ফেব্রুয়ারি নিহতের জামাতা জাহের আলী ফতুল্লা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। গত শুক্রবার মামলাটির তদন্তভার দেয়া হয় পিবিআই’র এস আই মাজহারুল ইসলামকে। তদন্তভার গ্রহণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অটোরিকশাচালক রুবেলকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই।

মামলার তদন্তকারী এ সংস্থা জানায়, পাঁচ লাখ টাকার চুক্তিতে বৃদ্ধ হালিমকে খুনের মিশনে অংশ নেয় অটোরিকশাচালক রুবেল।

আর অটোচালকের গ্রেপ্তারের পর পরই খুনি মাসুদ দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন বলে জানা গেছে। তাকে দেশে ফেরাতে ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ পিবিআই পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম জানান, একমাত্র ছেলে এইচএম মাসুদ (৪২) এবং ছেলের স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে ফতুল্লার ধর্মগঞ্জ মাওলা বাজারে নিজ বাড়ির ২য় তলার ফ্ল্যাটে বসবাস করে আসছিলেন আ. হালিম। ৩১শে জানুয়ারি দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে বাদী জানতে পারেন, তার শ্বশুরবাড়িতে ডাকাতি হয়েছে। তিনি বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পান, শ্বশুর শয়নকক্ষের খাটে মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন। তখন হালিমের ছেলে মাসুদ জানায়, তার স্ত্রী-সন্তান বেড়াতে গেছে। রাত আনুমানিক ১০টার দিকে বাসার গেট বন্ধ করে হালিম ও মাসুদ খাওয়া-দাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়েন। এরমধ্যে ৩ জন তাদের ঘরে ঢুকে মাসুদের হাত-পা ও মুখ বেঁধে ৩২ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। এ সময় হালিম তাদের বাধা দিলে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ডাকাতরা। একপর্যায়ে মাসুদের চিৎকারে ভাড়াটিয়ারা এসে তার বাঁধন খুলে দেয়। ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটন নিয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় জানা যায়, নিহতের পরিবারের পূর্বপরিচিত অটোরিকশাচালক মো. রুবেল নিয়মিত তাদের বাজার করাসহ অন্য কাজকর্ম করে দিতেন। ঘটনার দিন রুবেলের অবস্থান নিহতের বাড়ির আশপাশে ছিল। এমনকি রুবেলকে ঘটনার ২ দিন পর থেকে ওই এলাকায় আর দেখা যায়নি।

সন্দেহ থেকে ১০ই ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে বোনের বাসা থেকে রুবেলকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ১১ই ফেব্রুয়ারি তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। রুবেলকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে পিবিআই জানায়, সম্পত্তি ভাগাভাগি এবং বাসায় রাখা নগদ টাকা একাই ভোগ করার হীনউদ্দেশ্যে বাবাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন মাসুদ। এজন্য সহায়তা করতে রুবেলকে ৫ লাখ টাকা দেয়ার চুক্তি করেন তিনি।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, ঘটনার রাত আনুমানিক ১০টার দিকে মাসুদ ফোন করে অটোচালক রুবেলকে ডেকে নেন। রুবেল বাসায় ঢুকে মাসুদের ঘরে অবস্থান নেন। রাত ১১টার দিকে বৃদ্ধ হালিম ঘুমিয়ে পড়লে তারা দু’জনেই তার রুমে যান। মাসুদ তার বাবার বুকের উপর উঠে হাত-পা চেপে ধরে এবং রুবেল হালিমের গলা চেপে ধরে। হালিম চিৎকার করতে চাইলে রুবেল বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে।

মৃত্যু নিশ্চিত হতে মাসুদ ঘরে থাকা ডিজিটাল ব্লাড প্রেসার মাপার যন্ত্র দিয়ে বাবার প্রেসার মেপে নেন। পরে কথা অনুযায়ী রুবেলকে ৫ লাখ টাকা ও সিসিটিভির ডিবিআর বক্স দিয়ে ঘর থেকে চলে যেতে বলেন। তবে যাওয়ার আগে ডাকাতির নাটক সাজাতে কাপড় শুকানোর দড়ি দিয়ে মাসুদের হাত-পা ও মুখ বেঁধে রুবেল বের হয়ে যান। পরে মাসুদের চিৎকারে তাদের অন্য ভাড়াটিয়ারা এসে মাসুদের বাঁধন খুলে দেন এবং সবার মধ্যে ডাকাতির ঘটনা হিসেবেই জানাজানি হয়। মনিরুল ইসলাম বলেন, চলে যাওয়ার সময় রুবেল ডিবিআর বক্সটি ভিকটিমের বাড়ির পেছনে ময়লার স্তূপে ফেলে দেন। যেটি রুবেলের দেখানো মতে সেটি উদ্ধার করা হয়। তার বাসা থেকে মাসুদের দেয়া ৫ লাখ টাকার মধ্যে ৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।