এ কী করলেন তুরিন আফরোজ!

এ কী করলেন তুরিন আফরোজ!

ঢাকা, ৯ মে (জাস্ট নিউজ) : একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার আসামি জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সাবেক মহাপরিচালক ওয়াহিদুল হকের সঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজ গোপনে বৈঠক করে স্পর্শকাতর তথ্য সরবরাহ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনার জেরে ট্রাইব্যুনালের সব ধরনের মামলা থেকে তুরিন আফরোজকে অব্যাহতি দিয়েছেন প্রসিকিউশন। একইসঙ্গে তাকে প্রসিকিউটরের পদ থেকে অপসারণ করার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা যায়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘ড. তুরিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, এক আসামির কাছে মামলার স্পর্শকাতর কিছু তথ্য সরবরাহ করেছেন তিনি।’

‘যাবতীয় নথি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি’
প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম বলেন, ‘গত ৭ মে চিফ প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজকে সংশ্লিষ্ট ওয়াহিদুল হকের মামলা থেকে অব্যাহতি দেন। তারপর গত ৮ মে তাকে প্রসিকিউশনের সব দায়দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেন। চিফ প্রসিকিউটরের দুটি চিঠি এবং ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা তার (তুরিন আফরোজ) সঙ্গে আসামির কথোপকথনের (গত বছরের ১৮ ও ১৯ নভেম্বরের) সিডিসহ যাবতীয় নথি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি।’ এখন এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দায়িত্ব হলো মন্ত্রণালয়ের।
অভিযোগ প্রমাণ হলে তুরিনকে বিধি মোতাবেক বরখাস্ত করা হতে পারে। এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপও নেওয়া হতে পারে। এছাড়া অভিযোগ প্রমাণিত হলে বার কাউন্সিল বাতিল করতে পারে তার পেশাদারি সনদ।

তুরিনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

‘আমাকে কেউ বরখাস্ত করেনি’
অভিযোগের বিষয়ে ব্যরিস্টার তুরিন আফরোজ এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কোনো কথা বলব না। আমার ফেসবুক পেজে এ বিষয়ে আমি বক্তব্য দিয়েছি আপনি সেটাই আমার বক্তব্য হিসেবে নিতে পারেন।’

ফেসবুকে তুরিন আফরোজ লিখেছেন, ‘আমাকে নিয়ে একটি অতি উৎসাহী দৈনিক পত্রিকাতে একটি বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশিত করা হলে সোশ্যাল মিডিয়াতে তা ভাইরাল করে আমাকে নিয়ে নানা কুৎসা রটনা করা হচ্ছে। এটাও বলা হচ্ছে যে আমাকে প্রসিকিউটর পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এই বিষয়ে আমার সুস্পষ্ট বক্তব্য :

১। আমি এখনও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর পদে বহাল আছি। আমাকে কেউ বরখাস্ত করেনি।

২। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে ৮(২) ধারা অনুযায়ী ট্রাইব্যুনালের একজন প্রসিকিউটারের একজন তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করার এখতিয়ার রয়েছে। সুতরাং যে কোনো মামলাতে তদন্ত করার এখতিয়ার আমার আছে। আর তদন্ত করতে গেলে নানা রকম কৌশল অবলম্বন করতে হয়। সুতরাং আমি তদন্তের স্বার্থে যে কোনো প্রয়োজনীয় কৌশল গ্রহণ করতে পারি।

৩। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আমি এই পর্যন্ত প্রসিকিউটর হিসেবে যা কিছুই করেছি তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবহিত ছিলেন।

৪। আমাকে নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা সত্য নয়। যেহেতু বিষয়টি এখন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে দেখছেন তাই সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে এই মুহূর্তে বিষয়টি নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তদন্ত শেষ হলে আমি আমার বক্তব্য সর্ব সম্মুখে প্রকাশ করব। আশা করি সেই পর্যন্ত আমার শুভাকাঙ্ক্ষী ও সমালোচকগণ ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করবেন।’

আলোচনায় ওয়াহিদুল হক
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) এবং পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হককে গত ২৪ এপ্রিল গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন ট্রাইব্যুনাল তাকে কারাগারে পাঠান। ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তার নাম মতিউর রহমান।

ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে,গত বছরের ১১ নভেম্বর ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে করা মামলাটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজকে। এর এক সপ্তাহ পর তিনি ওয়াহিদুল হককে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে সাক্ষাৎ করতে চান। তাঁকে যে কোনো দিন আটক করা হতে পারে বলেও তিনি কথোপকথনের সময় জানান। প্রথমে নির্ধারণ হয় ১৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হকের গুলশানের বাসায় তাঁদের সাক্ষাৎ হবে। এ সময় ড. তুরিন আফরোজ জানান,সহকারী ফারাবী বিন জহির অনিন্দকে নিয়ে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বোরকা পরে তাঁরা দুজন ওয়াহিদুল হকের বাসায় যাবেন। পরবর্তী সময়ে সাক্ষাতের স্থান পরিবর্তন হয়। তারা গুলশানে অলিভ গার্ডেন নামের একটি রেস্তোরাঁয় সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তারা প্রায় তিন ঘণ্টা মামলার নথিপত্র নিয়ে আলোচনা করেন। তখন মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হককে তুরিন আফরোজের সহকারী ফারাবী বলেন, ‘আপনি যে পদে ছিলেন,তাতে তো ২০-২৫ কোটি টাকা এমনিতেই ক্যাশ থাকার কথা।’ এ সময় ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ এবং তাঁকে গ্রেপ্তারের আদেশের অনুলিপি নিয়েও আলোচনা হয় বলে জানা গেছে।

তদন্ত সংস্থা জানায়, ওয়াহিদুল হক মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলেন। ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বরে দেশে ফিরে দুই বছর পর পুলিশে যোগ দেন। নব্বইয়ের দশকে তিনি জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার দায়িত্ব পান। এর পর গত শতকের শেষ দিকে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হন। ১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ রংপুর ক্যান্টনমেন্টে পাঁচ থেকে ছয়শ নিরস্ত্র বাঙালি ও সাঁওতালের ওপর মেশিনগান দিয়ে গুলি চালিয়ে হত্যা ছাড়াও মানবতাবিরোধী নানা অপরাধের সঙ্গে ওয়াহিদুল হকের সম্পৃক্ততার তথ্য প্রাপ্তির পরই তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানায় সংশ্লিষ্ট তদন্ত সংস্থা।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সরকারের পক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য প্রসিকিউটর হিসেবে ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজকে ২০১৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ দেয় সরকার। পরে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী এবং বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনা করেন তুরিন আফরোজ। সূত্র: এনটিভি অনলাইন

(জাস্ট নিউজ/ডেস্ক/একে/২১১৯ঘ.)