গুলশানে বহুতল ভবনে আগুন, মৃত্যু ১

গুলশানে বহুতল ভবনে আগুন, মৃত্যু ১

গুলশানে একটি বহুতল ভবনে আগুনে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে লাগা এই আগুন চার ঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট। ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে আহত হয়েছেন অন্তত ৩ জন। জীবিত উদ্ধার করা হয় ২২ জনকে। লাফিয়ে পড়ে আহত একজনকে হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন । অগ্নি নির্বাপন ও উদ্ধার কাজে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সেনা ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা অংশ নেন।

রাত ১১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার কথা জানান ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাঈন উদ্দিন। তিনি বলেন, আমি আশ্বস্ত করতে চাই আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তিন জন বার্ন ইউনিটে আছে, একজন মারা গেছে। তিনি আরও বলেন, প্রথমে পানির সোর্স ছিল না, আমরা যে পানি এনেছি সেগুলো দিয়ে কাজ চালিয়েছি। এরপর বিভিন্ন জায়গা থেকে পানি নিয়েছি।

এর আগে গতরাত সন্ধ্যা ৭টার দিকে গুলশান-২ নম্বরের ১০৪ নম্বর রোডের ১২ তলা ভবনের ৭ম তলায় আগুন লাগে।

আগুন লাগার পর ভবনের সপ্তম তলা থেকে চার জন লাফিয়ে পড়েন। এর মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়। মানারাত স্কুলের পাশে আবাসিক ওই ভবনের নিচ তলা বাদে উপরের ১২ তলায় ছয়টি ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটে কয়েকটি পরিবারের বসবাস। আগুন ছড়িয়ে পড়লে ভবনের বিভিন্ন তলায় অনেকে আটকা পড়েন। আগুন থেকে বাঁচতে তারা আকুতি জানাতে থাকেন। ব্যালকনি থেকে কয়েকজনকে লাফিয়ে নিচে পড়তে দেখা যায়। প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি ইউনিট আগুন নেভাতে যোগ দেয়। পরে একে একে ১৯টি ইউনিট সেখানে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আগুন থেকে বাঁচতে একটি তলা থেকে অন্তত চারজন নিচে লাফ দেন। তাদের একজন ঘটনাস্থলেই মারা যান। অন্য তিনজনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেয়া হয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান, রাত ১০টার দিকে ৩০ বছর বয়সী একজন পুরুষের মৃতদেহ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি ভবন থেকে লাফিয়ে পড়েছিলেন।

কীভাবে ওই ভবনে আগুনের সূত্রপাত তা এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিসের গণমাধ্যম বিভাগের কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম বলছেন, ভবনটির পেছনদিকে ও মাঝখানে আগুন দেখা যাচ্ছিল। তবে ভবনটির অবস্থান এমন জায়গায় যে আমাদের উঁচু মইগুলো নাগাল পাচ্ছিল না। আরো এক ভবন পরে থেকে ফায়ার সার্ভিসের উঁচু মই দিয়ে উপরের তলাগুলোতে পানি দিতে হয়েছে। রাতে আগুন নেভার আগেই সেখানে উপস্থিত হন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনিও আগুন নেভাতে সমস্যা হওয়ার কথা বলেন। রাত ১১টার দিকে সরজমিনে দেখা যায়, ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে। ভবনের ভেতরে তল্লাশি চালান ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। কয়েক ধাপে সেখান থেকে ২২ জনকে উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে পুরুষ ৯, মহিলা ১২ জন এবং একটি শিশু।

রাত ১১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে এলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের ভেতরে ঢুকতে দেখা যায়। তবে তখনো ভবনের কয়েকটি তলা থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছিল। উদ্ধারকর্মীরা জানান, তখনো ভবনের ভেতরে কয়েকজন আটকা ছিলেন। এ ছাড়া অনেকে ছাদে আশ্রয় নেন। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা জানান, ১১ তলা থেকে তারা ১৩ জনকে উদ্ধার করেছেন।

অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে সেখানে ভিড় করেন উৎসুক মানুষ। বাড়তি মানুষের চাপে সেখানে ফায়ার কর্মীদের কাজ করতে বেগ পেতে হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, আগুন লাগার পর ভবনের প্রধান ফটক খুলে দেয়া হয়নি। এতে আগুন নেভানো ও উদ্ধার কাজ বিঘ্নিত হয়।