গণতন্ত্রহীনভাবে উন্নয়নকে টেকসই করা যায় না: ড. দেবপ্রিয়

গণতন্ত্রহীনভাবে উন্নয়নকে টেকসই করা যায় না: ড. দেবপ্রিয়

গণতন্ত্রের ধারণা হলো- কাউকে পেছনে রাখা যাবে না। রাষ্ট্রের দৃষ্টিতে সব নাগরিক সমান। এটি পরিষ্কার- উন্নয়নকে টেকসই করতে গণতন্ত্র দরকার। গণতন্ত্রহীনভাবে উন্নয়নকে টেকসই করা যায় না। এটিকে সুষম করা যায় না। ভারসাম্যপূর্ণভাবে নেয়া যায় না। যখন গণতন্ত্র থাকে না তখন উগ্রবাদ আসে, স্বৈরাচারের আবির্ভাব ঘটে। অনেক ক্ষেত্রে কর্তৃত্ববাদ আসে- নির্বাচিত ও অনির্বাচিতভাবে। কথাগুলো বলছিলেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার পর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। দৈনিক সমকালকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, উন্নয়ন ও গণতন্ত্রকে প্রতিস্থাপন শুধু বিভ্রান্তিকর নয়, বিরক্তিকরও।

এটা যাঁরা বলেন তাঁরা আধুনিক উন্নয়নের ব্যাপারে ওয়াকিবহাল নন। আবার গণতন্ত্রের তাৎপর্য ও কার্যাবলি সম্পর্কেও পরিষ্কার ধারণা নেই তাঁদের। সাধারণভাবে বলি, বৈশ্বিক উন্নয়নের ব্যাপারে যে আন্তর্জাতিক ঐকমত্য হয়েছে, এটা এসডিজি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নামে পরিচিত। আমাদের প্রধানমন্ত্রী ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে এতে স্বাক্ষর করেছেন। সেখানে পরিষ্কার বলা আছে- উন্নয়নের ধারণার সঙ্গে যদি মানবাধিকার, মানুষের মর্যাদাবোধ, জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ নির্বিশেষে সম্মান না থাকে, তাহলে সেটি প্রকৃত উন্নয়ন নয়। পূর্ণাঙ্গ উন্নয়নের যে ধারণা, তার মধ্যে গণতন্ত্র ও সব মানুষের সমান অধিকারের কথা উল্লেখ আছে বলেই বলা হয়েছে- কাউকে পেছনে রাখা যাবে না।

গণতন্ত্রে কিছুটা ছাড় দিয়ে উন্নয়নে অগ্রাধিকারের প্রশ্নে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, মনে রাখা দরকার, এসব দেশের কর্তৃত্ববাদী বা এককেন্দ্রিক সরকার নির্বাচিত কিনা। যদি নির্বাচিত হয়ে থাকেন, তাহলে অনেক ধরনের নমনীয়তা পান। যেমন ভারতে নরেন্দ্র মোদি সরকারের কার্যক্রমের সঙ্গে যাঁরা দ্বিমত পোষণ করেন, তাঁরা এ বিষয়ে দ্বিমত করেন না- তিনি নির্বাচিত। দ্বিতীয়ত, গণতন্ত্রে ঘাটতির জায়গাটি প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মাধ্যমে পূরণ সম্ভব। অর্থাৎ তার আমলাতন্ত্র কোনো ধরনের দুর্নীতির সঙ্গে জড়াবে না। তার সর্বোচ্চ রাজনৈতিক নেতৃত্ব কলুষমুক্ত থাকবে। এ বিষয়গুলো তাকে দলীয় ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করতে হবে। যেমন চীনে কেন্দ্রীয়ভাবে একদলীয় সরকার হলেও দলের অভ্যন্তরে বা স্থানীয় সরকারের মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা হয়। দল বা স্থানীয় সরকারে গণতন্ত্র চর্চার মধ্য দিয়ে যে কেউ নেতৃত্বে ও কেন্দ্রীয় সরকারে আসতে পারে। আমাদের আরও নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষণ করা উচিত। তা না হলে অর্ধসত্য থেকে যায়। ওই দেশগুলোতে শাসকদের কোনো না কোনো ধরনের বৈধতা নিয়ে থাকতে হয়। সেটি নির্বাচনী বৈধতা হতে পারে, স্থানীয় সরকারের বৈধতা হতে পারে, রাজনৈতিক দলের ভেতরে গণতন্ত্রের বৈধতা হতে পারে।

উন্নয়নের সঙ্গে বৈষম্যও বাড়ার বিষয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, হ্যাঁ, চীনের সবচেয়ে বড় উন্নয়নের সময় বৈষম্যও বেশি বেড়েছে। যদি ৯০ ও ২০০০ দশক দেখেন- এমডিজি যখন হয়েছে, এ সময় চীনে উন্নয়ন যেমন হয়েছে, বৈষম্যও বেড়েছে। কাজেই আমাদেরও মনে রাখতে হবে কোন ধরনের উন্নয়নের কথা বলছি। মেগা প্রকল্প, নাকি পিছিয়ে পড়া মানুষের সুরক্ষার কথা বলছি।

সরকারের মেগা প্রকল্প ও সামাজিক সুরক্ষার আওতা বাড়ানোর দাবির প্রশ্নে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, প্রথম কথা হলো, সামাজিক সুরক্ষা খাতে আপনি কী পরিমাণ টাকা দিচ্ছেন। জিডিপির ২ শতাংশের বেশি নয়। এর মধ্যে ১ শতাংশ আবার সরকারি কর্মকর্তাদের অবসর ভাতা। তার মানে, আপনি ১ শতাংশের কম এ খাতে ব্যয় করছেন। বাংলাদেশের ২৪ শতাংশ মানুষ এখনও দারিদ্র্যসীমার নিচে। অতিমারি-উত্তর এটি ৩০ শতাংশ। ৩ হাজার ডলার হয়েছে মাথাপিছু আয়, আর ভাতা দেওয়া হচ্ছে ৪ ডলার। তাহলে ৩ হাজার আর ৪ ডলারে কীভাবে সাম্য হলো? তারপর দেখেন, আপনি ২০টি মেগা প্রকল্পে যে অর্থ ব্যয় করেন, এর অর্ধেকও স্বাস্থ্য খাতে করছেন না। ২০টি প্রকল্পের সমান অর্থ আপনি পুরো জাতির শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের জন্য দেন। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের দিকে তাকালে দেখা যাচ্ছে, খাতওয়ারি সাম্য হচ্ছে না। গড় জাতীয় আয়ের সঙ্গে মিলছে না।

সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচকে উন্নয়নের বিষয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এটা অস্বীকার করি না। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষা-স্বাস্থ্যের বিস্তৃতি ঘটানো, সামাজিক সুরক্ষার ক্ষেত্রে অল্প হলেও অগ্রগতি হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় উন্নয়ন হয়েছে। রেমিট্যান্স বেড়েছে, রপ্তানিও সচল ছিল। ২০৪১ সালে আমাদের উন্নত দেশের কাতারে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এগুলো যদি করতে হয় তাহলে আমরা যে পদ্ধতি বা চরিত্রের উন্নয়ন করে এসেছি, এর পরিবর্তন দরকার। আরও সুষমভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষকে এগিয়ে নিতে হবে। লাতিন আমেরিকার দেশগুলো মধ্যবিত্তের ফাঁদে আটকে আছে। অনিয়ন্ত্রিত নগরায়ণ যদি হয়; বায়ুদূষণ ও পরিবেশ বিপর্যয়ের ব্যাপারগুলো যদি থাকে; স্থানীয় সরকার যদি দুর্বল থাকে; যদি দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তাহলে আমাদেরও ফাঁদে আটকে থাকতে হবে। গণতান্ত্রিক জবাবদিহি, প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা এবং পিছিয়ে পড়া মানুষের উন্নয়ন- এ তিনটি বিষয়ে যদি কাঠামোগত পরিবর্তন করা না যায়, তাহলে সাফল্য আসবে না। বরং নানা ধরনের সংকটের মুখে পড়তে হবে।

বর্তমান সরকারের ক্ষমতার পালাবদলে কি কাঠামোগত পরিবর্তন হবে এমন প্রশ্নে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশে যে দুটি বৃহৎ দল আছে, তাদের আর্থসামাজিক কর্মসূচির মধ্যে পার্থক্য সামান্য। আগে আমরা বলতাম, আওয়ামী লীগ কৃষিসমাজ, মধ্যবিত্ত, পেশাজীবী সমাজের দল। এখন তো আমরা এটি বলতে পারি না। ক্ষমতাসীনরা এখন নব্য ধনিকের দল। বিএনপিকে আগে আমরা মনে করতাম, আধুনিক, রপ্তানিমুখী ও বিকাশমান ধনিকের দল। এখন তারাও গ্রামীণ মধ্যবিত্তের কাছে পৌঁছানোর জন্য ধর্মীয় কার্ড খেলছে। এর বাইরে এখন দুই দলই একমত- অবকাঠামোগত উন্নয়ন লাগবে। দুই দলই বলে- মানবসম্পদের উন্নয়ন করতে হবে, রপ্তানির বৈধতা লাগবে, আঞ্চলিক সহযোগিতা লাগবে, শান্তিরক্ষী বাহিনী প্রেরণ করতে হবে, রেমিট্যান্সের বাজার উন্মুক্ত করতে হবে। অর্থনীতি ও কূটনীতির প্রশ্নে দুই দলের মধ্যে বড় ধরনের কোনো ব্যত্যয় আমরা দেখি না। সরকার পরিবর্তন হলে মেগা প্রকল্পের চরিত্রের পরিবর্তন হতে পারে বা একই প্রকল্প নতুন নামে চালু হতে পারে অথবা ওই প্রকল্পই থাকবে; শুধু সুবিধাভোগীর গোষ্ঠীটা বদল হবে। যে জায়গায় আগে আমরা সবচেয়ে বড় তফাত লক্ষ্য করতাম তা হলো, জাতীয়তাবাদের প্রশ্ন, রাষ্ট্রের সঙ্গে ধর্মের সম্পর্কের প্রশ্ন। দুঃখজনক হলেও সত্য, সে ক্ষেত্রে বর্তমান শাসক দল আগের অবস্থানে নেই। যাঁরা মনে করেন, সরকার পরিবর্তন হলে নীতিগত পরিবর্তন হয়ে যাবে- সে রকম দুশ্চিন্তার কারণ আমি দেখি না।

নীতি ও কাঠামোগত পরিবর্তন কীভাবে আসবে এমন প্রশ্নের জবাবে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, দেশে আসলে একটি নতুন রাজনৈতিক বোঝাপড়া প্রয়োজন। সবাইকে সেটা ধারণ করতে হবে। আমরা এ রকম একটি রাজনৈতিক বোঝাপড়া করেছিলাম এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময়। ওই সময় তিন জোটের পক্ষ থেকে আমরা একটি রূপরেখা তৈরি করেছিলাম। সংবিধানকে অক্ষত রেখে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনায় নির্বাচনের মাধ্যমে উত্তরণ ঘটিয়েছি। গণতন্ত্রের নতুন যুগে প্রবেশ করেছি। আমরা আরেকবার বোঝাপড়া করেছিলাম ১৯৯৬ সালে। আমরা সবাই মিলে একমত হয়েছিলাম- একটি ভালো নির্বাচন দরকার। সেটা হতে হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। কিন্তু ২০০৪-০৫ সালে বিচারপতিদের বয়স বাড়িয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণাটিকে কলুষিত করে ফেলা হলো। তখন ওই ধারণা অতিক্রম করে রাষ্ট্র্রের একাংশকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। আবার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে পুরো বোঝাপড়াটি অবলোপন করে দেওয়া হয়েছে। এর পর থেকে গণতন্ত্র সেই অর্থে মসৃণ গতিতে এগোতে পারেনি। দেশের জন্য এখন একটি নতুন রাজনৈতিক বোঝাপড়া প্রয়োজন।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ব্যবস্থার জন্য সবার সঙ্গে বোঝাপড়া। যদি সেই বোঝাপড়া ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচনও হয়, শান্তি আসবে না। নির্বাচনের মাধ্যমে যে-ই ক্ষমতায় আসুক- সংঘাত, সহিংসতা, দৌরাত্ম্য, বৈপরীত্য থেকেই যাবে। হবে না। কাজেই বৃহত্তর রাজনৈতিক অনুধাবন প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। এটি সবার স্বার্থেই দরকার। রাজনীতিবিদদের জন্য বিশেষভাবে দরকার। তা না হলে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা থেকেই যাবে।

রাজনীতিবিদদের পরামর্শ দিয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আমার যেটি মনে হয়, সবাইকে অনুধাবনের জায়গায় পৌঁছাতে হবে। দেখেন, কীভাবে হরতাল বন্ধ হলো। এটি এ জন্য বন্ধ হয়নি যে, হরতাল করার শক্তি কারও নেই। কিন্তু জনমানুষের কাছে আবেদন হারিয়ে ফেলেছে। রাজনীতিকদের মধ্যে যদি বোঝাপড়া না হয়, তাহলে রাজনীতির ক্ষেত্রেও ওইভাবে আবেদন চলে যাবে। একটি দেশে রাজনীতি যদি আবেদন হারিয়ে ফেলে, তাহলে আগে বিশ্বে দেখেছি স্বৈরশাসন আসত।

দেশের স্বৈরশাসন আসার সম্ভাবনার বিষয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এখনও উগ্রবাদী স্বৈরশাসন আছে অনেক দেশে। আফগানিস্তান তো বেশি দূরে নয়। বিভিন্ন ধরনের স্বৈরশাসন আসতে পারে। আপনি মিয়ানমারে দেখেন, ওখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ স্বৈরশাসন সংখ্যালঘিষ্ঠ মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচার করছে। এসব শাসকের প্রতি সাময়িক আকর্ষণ সৃষ্টি করে। তারা ক্ষমতায় এসে সবকিছুর পরিবর্তন ঘটাবে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে তার ফল ভালো হয় না। এগুলো তো আমরা দেখেছি। তাই আমাদের সাবধান হওয়া দরকার। কেউ ঠেকে শেখে, কেউ দেখে শেখে। আমার ভরসা, বাঙালি তো বুদ্ধিমান জাতি। তারা দেখেও এসেছে, ঠেকেও এসেছে। কাজেই শেখার ব্যাপার আছে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, কার্ল মার্ক্স বলেছেন- ধনতন্ত্রের গর্ভে ধনতন্ত্রের গোরখোদকরা জন্মায়। গত দেড় বছরে এ সরকারের প্রতিপক্ষ শক্তি হিসেবে নতুন মধ্যবিত্ত, শিক্ষিত যুবসমাজ দেখা যাচ্ছে। এই নতুন মধ্যবিত্ত খুবই গোলকায়িত। দেশীয় সামাজিক চিন্তাধারায় যেমন, তেমনই বৈশ্বিক যোগাযোগে আছে। তাদের ন্যায়-অন্যায়বোধ খুব পরিস্কার। সুশাসনের সুবিধা-অসুবিধা তারা বোঝে। তারা রাজনীতি করে না; কিন্তু অরাজনৈতিক নয়। আপনি যদি বিশ্বের দিকে তাকান দেখবেন, প্রথাগত রাজনীতিবিদরা মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারছেন না বিভিন্ন কারণে। তখন জনগণ বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি খোঁজে। আগে তারা সেনাশাসন খুঁজত। এখন এর বাইরে গিয়ে সামাজিক শক্তি খোঁজে। সবচেয়ে বড় উদাহরণ সুদান। লাতিন আমেরিকার অনেক দেশে নতুনভাবে বাম শক্তি আবার আসছে। চিলির মতো দেশে বাম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। দেখেন, থাইল্যান্ডে রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে যুবসমাজ কীভাবে আন্দোলন করছে। মিয়ানমারেও দেখেন। আমি তো মনে করি, মিয়ানমারে প্রবাসী সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করলে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হবে।

সামাজিক শক্তি বাংলাদেশে কী অবস্থায় আছে এমন প্রশ্নে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এখানে এই শক্তি হঠাৎ আসেনি। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে তারা সক্রিয় ছিল। আরও নিকটে এলে জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আন্দোলনে না এলে এ দেশে ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি ক্ষমতায় আসতে পারত? ২০০৬-০৭ সালে সৎ, যোগ্য প্রার্থীর কথা বলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভূমিকা রেখেছিল- এটা তো সত্য। বাংলাদেশের ইতিহাস হলো, যখনই নাগরিক শক্তি আর গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ প্রগতিশীল শক্তি এক হয়েছে তখন তারা ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পেরেছে। আর যখন তারা দুই ভাগে গেছে, তখন দেশে সমস্যার সমাধান জটিল হয়েছে।

নাগরিক সমাজের বিভক্তির বিষয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, নাগরিক শক্তি এক রকমের হয় না, বহুবিধ নাগরিক শক্তি আছে। যেসব দেশে কর্তৃত্ববাদী সরকার এসেছে, সেসব দেশে নাগরিক সমাজের কার্যকারিতা সংকুচিত হয়ে গেছে। আরেকটি বিষয় হলো, নাগরিক শক্তির মধ্যে একটি ভীতি কাজ করে- বিকল্পটি কী? তখন তারা সরকারের অংশ হয়ে যায়। নাগরিক শক্তি যদি তার স্বাধীন সত্তা হারায়, রাষ্ট্র্রের অংশ হয়ে যায়, তখন আবেদন হারায়।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, যদি সরকার পতন করতে গিয়ে বিরোধী অন্য শক্তির অংশ হয়ে যায়, তাহলেও নাগরিক শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। বাংলাদেশের নাগরিক শক্তির মূল চেহারা হলো- তারা '৭১-এর চেতনার মধ্যে থাকে; ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক; গরিব মানুষের পক্ষে; প্রগতিশীল চিন্তা করে। ওই ধারাটা এখনও আছে। কিন্তু বাস্তবতার কারণে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে তাদের দূরত্ব আরও গভীর হয়েছে। রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে নাগরিক শক্তি মিলিত হতে পারার পরিসর কমে গেছে। মুক্ত বাতাসে দু'জন লোক কথা বলবে- সেই আস্থার জায়গাটি নেই।