সুপ্রিম কোর্টে সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের হামলার তদন্ত ও বিচার চায় সিপিজে

সুপ্রিম কোর্টে সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের হামলার তদন্ত ও বিচার চায় সিপিজে

বাংলাদেশে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের সময় সাংবাদিকদের ওপর পুলিশি হামলার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। বুধবার নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের কাছে এই আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। এতে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের দায়বদ্ধ করার দাবি জানানো হয়েছে।

সিপিজে’র বিবৃতিতে বলা হয়, ঘটনার দিন আওয়ামীলীগ এবং বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের মধ্যে মারামারি শুরু হলে আদালত প্রাঙ্গণে পুলিশ অন্তত ৯ সাংবাদিককে হেনস্তা করে। এ নিয়ে হেনস্তার শিকার পাঁচ সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেছে সিপিজে। তারা জানিয়েছেন, চলমান ওই সংঘাতের মধ্যে লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। ঢাকা পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার গণমাধ্যমকে বলেন, পুলিশ সংঘাত থামানোর চেষ্টা করলে সাংবাদিকরা ওই হট্টগোলের মধ্যে পড়ে যায়। ঘটনার পরদিন ১৬ই মার্চ সাংবাদিকদের কাছে এ নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন পুলিশের কর্মকর্তারা। কিন্তু ২৯শে মার্চ পর্যন্ত এ ঘটনার সঙ্গে যুক্ত কোনো পুলিশ সদস্যকে ঘটনার দায়ে অভিযুক্ত করা হয়নি।

সিপিজে-এর প্রোগ্রাম ডিরেক্টর কার্লোস মার্টিনেজ দে লা সেরনা পুলিশের ক্ষমা চাওয়াকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে তিনি বলেন, কমপক্ষে নয়জন বাংলাদেশী সাংবাদিকের উপর অফিসারদের হামলার জন্য শুধু ক্ষমা চাওয়া যথেষ্ট নয়। বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই সাংবাদিকদের উপর হামলাকারী অফিসারদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে এবং সাংবাদিকদের কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করা যেকোনো সরঞ্জাম ফেরত দিতে হবে।

পাশাপাশি পুলিশ সদস্যদের পুরোপুরি প্রশিক্ষিত করতে হবে যাতে তারা সাংবাদিকদের আক্রমণ করার পরিবর্তে সাহায্য করতে পারে।

এটিএন নিউজের সিনিয়র রিপোর্টার জাবেদ আখতারকে চড় মারার অভিযোগ উঠেছে দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। আখতার সিপিজেকে বলেন, তাকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়া হয় এবং বারবার সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার পরেও তাকে লাথি মারা হয়। আখতারকে সাহায্য করতে গেলে পুলিশ ইন্ডেপেনডেন্ট টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার জান্নাতুল ফেরদৌস তানভিকেও ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। ওই ঘটনায় আহত জাবেদ আখতারকে এরপর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়। তিনি তার কোমর ও মেরুদণ্ডে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। এ ঘটনার জন্য দুই কর্মকর্তা জাবেদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেও ২৯শে মার্চ পর্যন্ত তাদের কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

এটিএন বাংলার সিনিয়র ক্যামেরা অপারেটর হুমায়ুন কবিরকে ১০ থেকে ১৫ জন পুলিশ সদস্যের একটি দল লাথি মারে এবং বাঁশের লাঠি দিয়ে পেটায়। এসময় তিনি ওই সংঘাতের ভিডিও ধারণ করছিলেন। তিনি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও তাকে চড়-থাপ্পড় মারতে থাকে পুলিশ কর্মকর্তারা। কবির মাথায় আঘাত পায় এবং তাকে পেইনকিলার খেতে হয়।

মানবজমিন পত্রিকার সাংবাদিক মারুফ হাসানকে পাঁচ থেকে ছয় জন কর্মকর্তা মারধর করে। তিনি মাথা ও পিঠে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। মেসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে সিপিজেকে তিনি জানান, সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার পরেও তার ওপরে হামলা হয়েছে। এসময় তার মাইক্রোফোন কেড়ে নেয়া হয় এবং তাকে গালিগালাজ করা হয়। ২৯শে মার্চ পর্যন্ত মাইক্রোফোন ফেরত পাননি মারুফ হাসান। জাগো নিউজের সিনিয়র রিপোর্টার মোহাম্মদ ফজলুল হককে পাঁচ পুলিশ আক্রমণ করেন।

এছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলে সিপিজে জানতে পেরেছে যে, ঘটনার দিন আজকের পত্রিকার রিপোর্টার নুর মোহাম্মদ, বৈশাখী টেলিভিশনের ক্যামেরা অপারেটর ইব্রাহিম হোসাইন, কালবেলা পত্রিকার রিপোর্টার কবির হোসাইন এবং ঢাকা পোস্টের রিপোর্টের মেহেদি হাসান ডালিমও পুলিশের আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন। সিপিজে তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে।

প্রথম আলো’র ফটো সাংবাদিক শুভ্র কান্তি দাস সিপিজে’কে বলেন, পুলিশ কর্মকর্তারা তার শার্ট ধরে তার আইডি কার্ড দেখতে চান এবং তাকে গালাগালি করে ঘটনাস্থল থেকে চলে যেতে বলেন। এ নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র রয় নিয়াতিকে কল এবং মেসেজ করে সিপিজে। তবে সেখান থেকে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।