'ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ভয়ের সংস্কৃতি তৈরির হাতিয়ার, নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছে'

'ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ভয়ের সংস্কৃতি তৈরির হাতিয়ার, নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছে'

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন একটি বাজে আইন। আমরা যে উদ্ভট এক পৃথিবীতে বাস করছি তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ এ আইন। এ আইন সংশোধন নয়, বাতিল করতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ভয়ের সংস্কৃতি তৈরির হাতিয়ার। বর্তমানে রাষ্ট্র, সরকার এবং রাজনৈতিক দল মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। গোটা নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে।

মঙ্গলবার ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ আয়োজিত 'ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন: অভিজ্ঞতা ও শঙ্কা' শীর্ষক বিশেষ ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে আলোচকরা এসব মন্তব্য করেন। ওয়েবিনারে নির্দিষ্ট আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর এবং আটলান্টিক কাউন্সিলের অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো আলী রীয়াজ, মানবাধিকার কর্মী ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন, আর্টিকেল-১৯ এর পরিচালক (দক্ষিণ এশিয়া) ফারুক ফয়সাল, দি ডেইলি স্টার বাংলার সম্পাদক গোলাম মোর্তোজা এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল (ইউএসএ) এর বাংলাদেশ ও পাকিস্তান কান্ট্রি স্পেশালিস্ট সুলতান মুহাম্মদ জাকারিয়া।

প্রফেসর আলী রীয়াজ বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করা হয়েছে। এ আইন বাতিল করতে হবে। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, গোটা নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে। আইনি ও আইন বহির্ভূত কাঠামোর মধ্যে দিয়ে সামনে আরো ভয়াবহ সময় আসছে বলেও তিনি মনে করেন।

ব্যারিস্টার সারা হোসেন মনে করেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলাগুলো নিয়ে গণমাধ্যমে রিপোর্ট এর সংখ্যা খুবই কম। এসব মামলাগুলো নিয়ে কেন নিয়মিত রিপোর্ট দেখা যায় না প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, এক শ্রেণীর মিডিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে হয়রানির উদ্দেশ্যে করা মামলাগুলোকে আরো উস্কে দেয়।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করা হয়েছে বলে মনে করেন ফারুক ফয়সালও। আইনটির কোনো সংশোধন নয়, বরং পুরো আইন বাতিল চান গোলাম মোর্তোজা। তার মতে, সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে আইনটি নমনীয়ভাবে প্রয়োগ করা হবে- সরকার পক্ষ থেকে এ ধরনের কথায় আশ্বস্ত হয়ে সাংবাদিকরা নিজেদের নৈতিক অবস্থান হারিয়েছেন, কেননা আইন সবার জন্য সমান। এ আইন প্রয়োগ করে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করতে সরকার সফল বলেও তিনি মনে করেন।

আইনটিকে 'বাজে আইন' হিসেবে আখ্যা দেন সুলতান মুহাম্মদ জাকারিয়া। অন্যদিকে, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, আমরা যে উদ্ভট এক পৃথিবীতে বসবাস করছি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তার উৎকৃষ্ট এক উদাহরণ।

বিশিষ্ট সাংবাদিক ও অধিকারকর্মী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে সমাপনী বক্তব্য রাখেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, ব্যবহার, অপব্যবহার যাই হোক না কেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন থাকাটাই সমস্যা। এটা খড়গ হয়ে সবার মাথার উপর আছে। এ আইন ভয়ের সংস্কৃতি তৈরির হাতিয়ার। প্রথম আলো'র বিরুদ্ধে মামলার মাধ্যমে 'সেলফ সেন্সরশিপ' আরো জোরদার করা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, অবশ্য সরকার চাইলে যা খুশি তা করতে পারে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন না থাকলেও চলে। এ বিষয়ে তিনি ২০১৮ সালে তার বাসভবনে এবং তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের গাড়িবহরে হামলা নিয়ে কথা বলেন।