ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং সিলেটে

ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং সিলেটে

রমজান। তীব্র গরম। হাঁসফাঁস অবস্থা। তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি। তীব্র অস্থিরতায় কাটছে সময়। এই অবস্থায় লোডশেডিং। সিলেটে ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং হচ্ছে। ইফতার কিংবা সেহরী কোনো সময়ই লোডশেডিংয়ের কবল থেকে বাদ যাচ্ছে না। গত তিনদিন ধরে সিলেটে এই অবস্থা বিরাজমান। ঈদ বাজারের ব্যবসায়ীরা হয়ে পড়েছেন ত্যক্ত-বিরক্ত।

অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ একটাই খোলা বলে জানিয়েছেন বিদ্যুতের কর্মকর্তারা। তাদের মতে- বুধবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। অফিস আদালত বন্ধ হয়ে পড়লে অতিরিক্ত লোডের কবলে পড়তে হবে না। অনেক বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা সম্ভব হবে। সিলেটের বিদ্যুৎ কর্মকর্তারা গতকাল বিকালে জানিয়েছেন, সিলেট নগর ও এর আশপাশের এলাকায় ৬০ ভাগ লোডশেডিং করতে হচ্ছে। কিন্তু গতকাল ছিল রোববার। বুধবার আসতে তিনদিন বাকি। এই সময়ে ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং সিলেটের মানুষের জীবযাত্রাকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। শহর কিংবা গ্রাম সবখানেই বিদ্যুতের ভোগান্তিতে দিশাহারা মানুষ। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, গতকাল সিলেট বিভাগে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৪৯৭ মেগাওয়াট। কিন্তু পাওয়া গেছে ৩১০ মেগাওয়াট। এতে প্রায় ১৮৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ লোডশেডিং করতে হয়েছে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিভাগীয় হিসাব অনুযায়ী এ তথ্য। শুধুমাত্র বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের হিসাব বলছে- সিলেট বিভাগের ১৯৭ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে পাওয়া গেছে ৮৮ মেগাওয়াট। ১০৯ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হয়েছে। সিলেট জেলায় এই হিসাবে দেখা গেছে- চাহিদা ১৫৭ মেগাওয়াট। মাত্র ৬৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া গেছে। ৯৪ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের এই তথ্য বলে দিচ্ছে- গতকাল সিলেটে চাহিদার অর্ধেক বিদ্যুৎ পায়নি মানুষ। হঠাৎ করে লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান কর্মকর্তা মো. আব্দুল কাদির মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ৩টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিপর্যয় ঘটেছে। এতে করে সংকট তীব্র হয়েছে। তবে এ সমস্যা দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তিনি জানান- বিদ্যুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে বুধবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। অফিস-আদালত বন্ধ হয়ে পড়লে দ্রুতই পরিস্থিতির উন্নতি হবে। এতে প্রায় ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে- বিদ্যুতের এই অবস্থার কারণে সিলেটজুড়ে ত্রাহী ত্রাহী অবস্থা। রাতে ঘুম নেই, দিনে ব্যবসা নেই- এমন অবস্থায় পড়েছেন সিলেটের মানুষ। এ নিয়ে গতকাল বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির নেতৃত্বে কথা বলেছেন চেম্বার নেতাদের সঙ্গে। দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার তাগিদ দেয়া হয়েছে ব্যবসায়ীদের তরফ থেকেও। দোকান মালিক সমিতি সিলেট জেলার সদস্য সচিব আব্দুর রহমান রিপন জানিয়েছেন, বছরে এক ঈদ পান ব্যবসায়ীরা। গত ৩ দিন ধরে বিদ্যুতের মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কারণে ব্যবসা বাণিজ্যে ভাটা পড়েছে। তিনি বলেন, পরিস্থিতির উন্নতি না ঘটাতে পারলে, মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠবে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে পারে। এজন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের আশু দৃষ্টি কামনা করেন। বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে যানবাহন পড়েছে জ্বালানি সংকটে। বিশেষ করে সিএনজিচালিত যানবাহনগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও গ্যাস পাচ্ছে না।

লোডশেডিংয়ের কারণে পাম্প বন্ধ রাখতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পাম্প মালিকরা। একদিকে রমজান, অন্যদিকে গরমের উত্তাপ। এমন পরিস্থিতিতে গত কয়েকদিন ধরেই সিলেটে বিদ্যুৎ থাকছে না ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ইফতারের সময় যেমন বিদ্যুৎ চলে যায় তেমনি রাতে সেহেরির সময়ও হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায়। দিনরাত মিলিয়ে ৮-১০ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না সিলেটবাসী। এতে চরম ভোগান্তিতে আছেন সিলেটের মানুষ। বিউবো সিলেট-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শাহ-ই-আরেফিন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তার ডিভিশনে ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দরকার। কিন্তু সরবরাহ করা হয়েছে ১৭ মেগাওয়াট। ঘাটতি ১৩ মেগাওয়াট। ফলে বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ সিলেট-২ এর অওতাভুক্ত এলাকায় অনির্ধারিত লোডশেডিং হচ্ছেই। আর সরবরাহ কম থাকায় গ্রাহকদের পক্ষ থেকে তোপের মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের। হঠাৎ করে অতিরিক্ত গরমের কারণে জেনারেশন ফল্ট এবং ঈদের কারণে চাহিদা বেড়ে যাওয়াও বিদ্যুৎহীনতার কারণ। গরমের কারণে বাসাবাড়ি, মার্কেট, অফিস পাড়ায় এসির ব্যবহার বেড়ে গেছে। আসন্ন ঈদের কারণে মার্কেট শপিংমলগুল দীর্ঘ সময় খোলা থাকছে। পাশাপাশি এখনো অফিস আদালত, কলকারখানা বন্ধ হয়নি তাই বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গেছে।