ভাইয়ের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলার ১২ দিন পর মুখ খুললেন এমপি তানভীর হাসান

ভাইয়ের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলার ১২ দিন পর মুখ খুললেন এমপি তানভীর হাসান

বড় ভাই গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনিরের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলার ১২ দিন পর মুখ খুললেন টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের এমপি তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনির। আজ সোমবার টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এই মামলাকে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

তানভীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হত্যা মামলায় অভিযুক্ত খান পরিবারের সন্তানেরা তাঁদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন। এই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই ‘মাদকাসক্ত’ এক নারীকে দিয়ে গোলাম কিবরিয়ার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামলা করা হয়েছে।

একটি বেসরকারি টেলিভিশনের নাম উল্লেখ করে তানভীর হাসান বলেন, ‘ওই টেলিভিশনের মালিকের আত্মীয় টাঙ্গাইল-২ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী। তাই তাঁরাও আমাকে হেয় করার জন্য এই ষড়যন্ত্রে যুক্ত হয়েছেন।’

সংবাদ সম্মেলনে তানভীর আরও বলেন, ‘প্রায় ৯ বছর আগে আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদকে হত্যা করেন চিহ্নিত সন্ত্রাসী খান পরিবারের সন্তানেরা। সেই হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে বিভিন্ন সময় আন্দোলন করায় ওই পরিবারের কাছে আমরা শত্রু হয়েছি। সেই সূত্র ধরে তারা বিভিন্ন সময় আমাদের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার শুরু করে। বিএনপি নয়, আওয়ামী লীগের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা খুনি মোশতাকের অনুসারীরা আমার পরিবারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন। তাঁরা বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ব্যাহত করতে চান।’

৫ এপ্রিল রাতে টাঙ্গাইল সদর থানায় টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গোলাম কিবরিয়ার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করে এক কিশোরী (১৭)। মামলায় ওই কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মামলায় গোলাম কিবরিয়ার স্ত্রী নিগার আফতাবকেও আসামি করা হয়েছে।

মামলায় ওই কিশোরী অভিযোগ করে, গোলাম কিবরিয়া তার আত্মীয় ও পূর্বপরিচিত। গত ১৭ ডিসেম্বর তাকে শহরের আদালতপাড়ায় নিজের বাড়ির পাশের একটি ভবনে গোলাম কিবরিয়া ডেকে নেন। সেখানে তিনি তাকে ধর্ষণ করেন ও আপত্তিকর ছবি তুলে রাখেন। পরে আপত্তিকর ওই ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করা হয় বলে ওই কিশোরী মামলায় অভিযোগ করে। একপর্যায়ে ওই কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। বিষয়টি গোলাম কিবরিয়া জানার পর গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ দিতে থাকেন। তবে কিশোরী রাজি না হওয়ায় গত ২৯ মার্চ তাকে শহরের আদালতপাড়ায় গোলাম কিবরিয়ার শ্বশুড়বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে একটি কক্ষে ওই কিশোরীকে গোলাম কিবরিয়া আবার ধর্ষণ করেন।

গোলাম কিবরিয়ার বিরুদ্ধে এই মামলাকে ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করেন ছোট ভাই সংসদ সদস্য তানভীর হাসান। এ ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তদন্ত চলছে। তিনি দোষী প্রমাণিত হলে আমিও তাঁর শাস্তি চাই। তবে এই মামলাকে কেন্দ্র করে একটি কুচক্রী মহল আবার টাঙ্গাইলকে অশান্ত করতে চায়। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ওই নারীকে গোলাম কিবরিয়া গত ১৭ ডিসেম্বর ধর্ষণ করেন। এতে ওই নারী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছেন। কিন্তু ডাক্তারি পরীক্ষায় দেখা গেছে তিনি ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা।’

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মামুনুর রশিদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র সাহা, সাবেক বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মাহমুদ তারেক, সাবেক সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক এলেন মল্লিক, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক হোসেন, শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ রৌফ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ফজলুল হক বীর প্রতীক, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা।

আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা শ্রমিক লীগের যুগ্ম সম্পাদক পৌর কাউন্সিলর আমিনুর রহমান, পৌর কাউন্সিলর কামরুল হাসান, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহানুর রহমান, গোপালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মোমেন, ভূঞাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক তাহেরুল ইসলাম, ভূঞাপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম, ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি বালা মিয়া, সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক মাহতাব, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছিমা বাছিত প্রমুখ।