বগুড়ায় চাঁদরাতে থানার সামনে অটোরিকশা থামিয়ে অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে হত্যা

বগুড়ায় চাঁদরাতে থানার সামনে অটোরিকশা থামিয়ে অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে হত্যা

বগুড়ায় জনাকীর্ণ ব্যস্ত রাস্তায় অটোরিকশা থামিয়ে সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত এক অধ্যক্ষকে ছুরিকাঘাত করে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শুক্রবার চাঁদরাতে আনুমানিক পৌনে ১২টার দিকে বগুড়া শহরের কবি নজরুল ইসলাম সড়কে সদর থানার সামনে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর হামলাকারী যুবক রক্তমাখা চাকু উঁচিয়ে ব্যস্ত সড়ক দৌড়ে পালাচ্ছিলেন। এ সময় তাঁকে আটকাতে গিয়ে ছুরিকাঘাতে জখম হন এক পথচারী এবং জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) দুই সদস্য। পরে ডিবি পুলিশ ও লোকজন ধাওয়া করে চাকুসহ ওই যুবককে আটক করেন।

হত্যাকাণ্ডের শিকার রেজাউল করিম ওরফে পান্নার (৬৫) বাড়ি বগুড়া শহরের মধ্য ফুলবাড়ি এলাকায়। তিনি বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এবং গাইবান্ধা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ছিলেন। অন্যদিকে রক্তমাখা চাকুসহ আটক যুবকের নাম খায়রুল মেহেন্দী (৩৫)। তিনিও মধ্য ফুলবাড়ি এলাকার বাসিন্দা এবং পেশায় স্বর্ণশ্রমিক। ছুরিকাঘাতে আহত তিনজন হলেন পথচারীর আবদুর রউফ, ডিবি পুলিশের কনস্টেবলের শাহাদাৎ হোসেন ও গোলাম কিবরিয়া। তাঁদের শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বগুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, হত্যাকাণ্ডে একজনই অংশ নিয়েছেন। হামলাকারী যুবককে আটকের পর থানা হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই যুবক জানিয়েছে, জায়গাজমি নিয়ে বিরোধের জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। তাঁর দেওয়া তথ্যের যাচাই-বাছাই চলছে।

পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রেজাউল করিম ৯ দিন ধরে তাঁর এলাকায় মসজিদে ইতিকাফে ছিলেন। গতকাল ঈদের চাঁদ দেখা যাওয়ার পর মসজিদ থেকে বের হয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে শহরের সাতমাথায় আসেন। এরপর কেনাকাটা সেরে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকে করে সাতমাথা থেকে কবি নজরুল ইসলাম সড়ক হয়ে ফুলবাড়ির দিকে বাসায় ফিরছিলেন। পথে বগুড়া সদর থানার সামনে চাকু হাতে খায়রুল মেহেন্দী ইজিবাইক থামিয়ে পথ রোধ করেন। এরপর কিছু বুঝে ওঠার আগেই যাত্রীর আসনে থাকা রেজাউল করিমকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করেন। এ সময় পথচারীরা তাঁকে আটক করতে গেলে প্রথমে ছুরি হাতে ভয় দেখান মেহেন্দী। পরে তাঁকে ধাওয়া দিলে একজন পথচারী এবং ডিবি পুলিশের দুজন কনস্টেবলকেও চাকু দিয়ে ছুরিকাহত করে পালানোর চেষ্টা করেন। পরে ধাওয়া দিয়ে তাঁকে আটক করে পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন।

বগুড়া সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বাবু কুমার সাহা বলেন, ছুরিকাঘাতে আহত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রেজাউল করিমকে উদ্ধার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ পরিদর্শক আরও বলেন, আটক ব্যক্তির বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে। জমিজমা–সংক্রান্ত বিরোধের জেরে অধ্যক্ষকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আটক ব্যক্তি। এ ঘটনায় রেজাউল করিমের ছেলে বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এই মামলায় খায়রুল মেহেন্দীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

এ ঘটনার বিচার চেয়ে রেজাউল করিমের ছেলে এবং লংকাবাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেড বগুড়া জেলা শাখার ব্যবস্থাপক আবু রেজা আল মামুন বলেন, ‘আমার বাবার সঙ্গে জমিজমা নিয়ে কারও কোনো বিরোধ নেই এবং ছিল না। হাতেনাতে আটক ওই ব্যক্তি মিথ্যা কথা বলছেন। হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে আরও কেউ থাকতে পারে। এ দুর্ধর্ষ হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কারণ উদ্‌ঘাটন করে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও ফাঁসি চাই।’

এদিকে অধ্যাপক রেজাউল করিম হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি বগুড়া জেলা শাখা। সংগঠনের সভাপতি এ টি এম মাহবুবুল আলম হান্নান এবং সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহম্মেদ এক বিবৃতিতে হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করার মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন।