ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ ভোলায় ৮নং মহাবিপদ সংকেত জারি করা হয়েছে। জেলাটির সঙ্গে সকল প্রকার যান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে কেউ না এলেও আতঙ্কে রয়েছেন উপকূলের মানুষ।
‘মোখা’র তাণ্ডব থেকে দ্বীপবাসীকে রক্ষা করতে ভোলার উপকূলীয় এলাকার ঝুঁকিতে থাকা ১০ লাখের বেশি মানুষকে নিরাপদ আশ্রয় নিতে ৭৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছেন জেলা প্রশাসক। এছাড়া জেলায় মোট ৮টি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে ৯২টি মেডিকেল টিম। ১৩ হাজার ছয়শ’ জন স্বেচ্ছাসেবক ইতিমধ্যে মাঠে কাজ করছেন।
আজ শনিবার (১৩ মে) জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মো. তৌফিক-ই-লাহী চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করলেও এখন পর্যন্ত সাগর মোহনায় থাকা কোন মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনতে পারেননি জেলা প্রশাসন। মনপুরা উপজেলার কোন আশ্রয় কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত কোন মানুষ অবস্থান নেননি। এ ছাড়া চরফ্যাশন উপজেলার কুঁকড়ি মুকড়ি, ঢাল চর, চরতাজাম্মুল, ডেম্পেয়ার, চর জহিরুদ্দিন, মুজিব নগর ইউনিয়নের ঝুকিতে থাকা কোন মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্র এখনো আনা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া জেলার ৫ লক্ষ গবাদি পশুর জন্য কেল্লা রয়েছে মাত্র ৮ টি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের মতে ১০ ফিটের বেশি জোয়ার হলে গবাদি পশুগুলোই ঝুঁকিতে রয়েছে।
এ ছাড়া ভোল সদরের কাচিয়া ও গাজিপুরের মাঝের চর ও ভোলার চরের মানুষ এখনো অরক্ষিত রয়েছে। সিপিডি রাতভর নিরাপদে আসার মাইকিং করলেও কাজের কাজ হয়নি কিছুতে। তবে এখন পর্যন্ত আবহাওয়া ভালো থাকায় চরের মানুষ ঝড়ের পূর্বাবাস বিশ্বাস করতেই চাচ্ছেন না।
তবে জেলা প্রশাসক তোফিকে ইলাইহি চৌধুরি বলেন, ভোলায় ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবিলায় ঝড়ের আগে, দুর্যোগের সময় এবং দুর্যোগের পরবর্তী এই তিন ধাপের প্রস্তুতি নিয়ে রাখেছেন জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশসকের সম্মেলন কক্ষে ‘মোখা’ নিয়ে জরুরি সভায় পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম বিপিএম পিপিএম ছাড়াও বক্তব্য রাখেন, কোস্টগার্ডের অপারেশন অফিসার লেফটেন্যান্ট মেহেদী হাসান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তৌহিদুল ইসলামসহ জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তা ও সাংবাদিকরা। এছাড়া সিপিপি, রেডক্রিসেন্ট, পানি উন্নয়ন বোর্ড, পুলিশ, কোস্টগার্ড ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারাও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম বিপিএম পিপিএম মানবজমিনকে বলেন, জেলার সকল পুলিশ সদস্যের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ঢালচর, কুঁকড়িমুকড়ি মনপুরাসহ বিচ্ছিন্ন চরঞ্চলের পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ভবনগুলোকে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া গবাদি পশুর নিরাপত্তায় ইঞ্জিন চালিত নৌযান রাখা হয়েছে সেগুলো নিরাপদে সরিয়ে আনতে।
ভোলা জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা এস,এম, দেলোয়ার হোসাইন জানান, তাদের প্রস্তুতিতে কোন ঘাটতি নেই। ঝড়ের আগে ও পরের সকল করণীয় ঠিক করে রাখা হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদেরকে সঙ্গে মিটিং করে তাদেরকে সতর্ক থাকতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বিপদ সংকেতের মাইকিং চলছে। এ ছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকার জন্য বলা হয়েছে।
তবে কৃষকের পাকা ধান অর্ধেকেরও বেশি এখনো মাঠে রয়েছে। ধান ঘরে উঠাতে তেমন কোন কার্যকরি সহয়তা করতে দেখা যয়নি ভোলার কৃষি বিভাগকে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য মতে ভোলা জেলাকে ৮ নাম্বার মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ভোলার সাথে সকল প্রকার যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে বিআইডাব্লিউটিএ।
সকাল ৮ টা ৩০ মিনিটের দিকে আকাশ পরিষ্কার থাকলেও সর্বশেষ ৮টা ৫০ মিনিটের দিকে কিছুটা বাতাস শুরু হয়েছে এবং আকাশ দক্ষিণ দিক থেকে মেঘে ঢেকে আসছে। তবে ভোলা সদরের আকাশে এখনো সূর্যের আলো দেখা যাচ্ছে।