প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যেসব দেশ নিষেধাজ্ঞা (স্যাংশন) দেবে, তাদের কাছ থেকে কোনো কিছু কিনবে না বাংলাদেশ। এ ব্যাপারে তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন।
আজ এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর সম্পর্কে গণমাধ্যমকে অবহিত করতে আজকের এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বেসরকারি টেলিভিশন ডিবিসি নিউজের প্রধান সম্পাদক মোহাম্মদ মঞ্জুরুল ইসলাম প্রশ্ন করেন, ‘বাংলাদেশকে যারা স্যাংকশন (নিষেধাজ্ঞা) দিচ্ছে তাদের সঙ্গে কেনাকাটা বন্ধ করবেন বলে বক্তব্য এসেছে। সে ক্ষেত্রে কি ভীত হওয়ার কোনো কারণ আছে?’
এর জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন করেন, ‘আমাদেরকে কী কারণে স্যাংকশন (নিষেধাজ্ঞা) দিল?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সারা বিশ্ব জঙ্গিবাদে জর্জরিত, সবাই আতঙ্কগ্রস্ত। সে সময় আমাদের দেশে একটিমাত্র ঘটনা ঘটেছে হোলি আর্টিজানে। অনেকে বলছিল, এটা বাংলাদেশ একা সামাল দিতে পারবে না। কিন্তু আমাদের তো ২৪ ঘণ্টাও লাগেনি। তার মধ্যেই আমরা মানুষ জীবিতও উদ্ধার করলাম, যারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের ওপরও আমরা আঘাত হানতে পেরেছি।’
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, ‘বাংলাদেশে আর এ রকম বড় ঘটনা ঘটতে পারেনি। কারণ, আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি ও এতভাবে কাজ করেছে যে আর কোনো ঘটনা ঘটাতে পারেনি। যাদেরকে দিয়ে সন্ত্রাস দূর করলাম। এর পরে স্যাংকশনটা কিসের জন্য? সে জন্যই তো আমার প্রশ্ন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি এ জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এবং আমাদের অর্থ মন্ত্রণালয়কে, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে বলে দিয়েছি, আমরা যে বিদেশ থেকে জিনিস ক্রয় করি, সেখানে একটি ক্লজ (ধারা) থাকবে—যারা আমাদের ওপর স্যাংকশন দেবে তাদের কাছ থেকে কোনো কিছু কেনাকাটা করব না। এতে সংকটের, ভয়ের কী আছে?’
বাংলাদেশ এখন আর কারও ওপর নির্ভরশীল না বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা উৎপাদন করে সে সমস্যার সমাধান করতে পারি। সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। দেশের সাধারণ মানুষ জেনে গেছে, তাদের যেখানে যত অনাবাদি জমি, তারা চাষ করছে।’
এত দুশ্চিন্তার কী আছে—এমন প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কথা নাই বার্তা নাই, ওমনি স্যাংকশনের ভয় দেখাবে। আর আমরা ভয়ে চুপ হয়ে বসে থাকব, কেন? আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। যারা আমাদেরকে সপ্তম নৌবহরের ভয় দেখিয়েছিল, সেটাও পার করে বিজয় অর্জন করেছি। এ কথা ভুললে চলবে না। এই আত্মবিশ্বাসটা নিয়ে চলতে হবে। এক বেলা খেয়ে থাকব, তাতে অসুবিধা নাই।’
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নে শেখ হাসিনা বলেন, দুর্ভাগ্যের বিষয়টা হলো দেশের কিছু মানুষই বাংলাদেশের বদনাম করে। তাদের স্বার্থ রক্ষা, তারা যে কত রকমের দুর্নীতি, অপকর্ম, মানি লন্ডারিং—কত কিছুর সঙ্গে জড়িত, সেগুলো তো সাংবাদিকেরা খুঁজে বের করেন না। বের করলে দেখা যাবে সেখানে অনেককেই পাওয়া যাবে। এরাই বাংলাদেশের বদনাম করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু লেবার লিডার (শ্রমিকনেতা) আছেন। নিজেরা খাবেন–দাবেন, ভালোভাবে চলবেন, দামি গাড়িতে চলবেন। পরিবেশ নিয়ে আন্দোলন করেন। মামলা করেন, মামলা করে কয়টা মামলার রায় পাওয়া গেছে? প্রত্যেক মামলার পরে আসে নেগোসিয়েশন (সমঝোতা)। নেগোসিয়েশন মানেই তো আদান–প্রদান। আয়েশে থেকে বাংলাদেশের বদনামটা করে আসে।
উর্বর ভূমির দেশ বাংলাদেশ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের মানুষ অনেক শক্তিশালী। আমাদের নারীসমাজ, যুবসমাজ, সাধারণ মানুষ প্রত্যেকে কাজ করে। নিজেরা কাজ করে নিজেরা খাব।’