বৈদেশিক লেনদেনে চাপে পড়েছে বাংলাদেশ

বৈদেশিক লেনদেনে চাপে পড়েছে বাংলাদেশ

ডলার সংকট এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ায় আর্ন্তজাতিক ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি মুডি’স বাংলাদেশের ক্রেডিট রেটিং বা ঋণমান কমিয়েছে। মঙ্গলবার সিঙ্গাপুর থেকে মুডি'স ইনভেষ্টর সার্ভিস এ রেটিং প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারের দীর্ঘমেয়াদি বন্ড ইস্যুর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের রেটিং ‘বিএ৩’ যা থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ‘বি১’। তবে আউটলুক বা ভবিষ্যতের জন্য আভাস হচ্ছে ‘স্থিতিশীল’।

কোনো দেশের ক্রেডিট রেটিং বিনিয়োগকারীদেরকে সে দেশের সম্ভাবনা ও ঝুঁকি সম্পর্কে একটি ধারণা দেয়। ঋণমান হলো- কোনো দেশের ঋণ পরিশোধের যোগ্যতা। ঋণমানের মূল্যায়ন থেকে কোনো দেশের ঋণ পরিশোধের ঝুঁকি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। ‘বি১’ রেটিং আগের রেটিংয়ের চেয়ে তুলনামূলক ঝুঁকিপূর্ণ এবং এটি নিম্ন ও মধ্যম ক্যাটাগরির। সবচেয়ে উচু মানের রেটিং হলো ‘এএএ’।

মুডি’সের পর্যালোচনায় বলা হয়, বাংলাদেশের বহিস্থ: ঝুঁকি বেড়েছে এবং তারল্য ঝুঁকি রয়েছে। এর সঙ্গে চলমান সংকটের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক বিভিন্ন দুর্বলতাও দেখা যাচ্ছে। কিছুটা উন্নতি হলেও ডলারের সংকট রয়ে গেছে। এ কারণে বিদেশের সঙ্গে লেনদেনে বাংলাদেশ চাপে পড়েছে। এর ফলে আমদানিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে এবং জ্বালানি সংকট তৈরি হয়েছে।

পর্যালোচনায় আরও বলা হয়, বৈদেশিক মুদ্রার বিভিন্ন রকম দর এবং সুদের হারের ওপর সীমা আরোপ নানা জটিলতা তৈরি করছে। এছাড়া অর্থনীতির আকারের তুলনায় নিম্ন রাজস্ব আয় সরকারের নীতি বাস্তবায়নে বাধার সৃষ্টি করছে। একই সঙ্গে ঋণ পরিশোধের সামর্থ্যকে দুর্বল করে দিচ্ছে এবং টাকার পতন পতন ঘটাচ্ছে। সংস্থাটি মনে করছে, আগামী দুই থেকে তিন বছর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে থাকবে।

তবে মুডি’স আশা করে, বৈদেশিক ঋণ এ চাপ কমাতে সহায়তা করবে। উন্নয়ন সহযোগীদের সহজ শর্তের এবং কম সুদের ঋণ এক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করবে। এ কারণে ভবিষ্যৎ ‘ স্থিতিশীল’ থাকবে বলে তারা ধারণা করছে। তারা আরও আশা করে, তৈরি পোশাক রপ্তানি নির্ভর অর্থনৈতিক কার্য্রক্রম চলমান থাকবে। সংস্কার কার্যক্রমের ফলে রাজস্ব সংগ্রহের উন্নতি হবে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকনোমিষ্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, নতুন রেটিংয়ের কারণে বৈদেশিক উৎস থেকে অর্থায়ন গ্রহণে সুদের হার এবং আমদানির ক্ষেত্রে এলসি খোলায় বিদেশি ব্যাংকের কাছ থেকে থার্ড পার্টি গ্যারান্টি পেতে ‘ফি’ আরও বাড়তে পারে। বাংলাদেশি ব্যবসায়িদের নতুন করে ঋণ দিতে অনাগ্রহী হতে পারে বিদেশি প্রতিষ্ঠান।

তিনি বলেন, সভরেন ক্রেডিট রেটিং কোনো দেশের ব্যবসা ও অর্থায়নের ঝুঁকি সম্পর্কে ধারণা দেয়। রেটিং কমানোর অর্থ হলো- মুডি’স মনে করছে, বাংলাদেশে আগে ব্যবসা বা অর্থায়নের ঝুঁকি যতটা ছিল, তার থেকে বেড়েছে। প্রথমত, এ রেটিংয়ের কারণে প্রথমে দেশের ভাবমূর্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। দ্বিতীয়ত, বৈদেশিক বাণিজ্যে স্বল্প মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে ‘দেশের ঝুঁকি’ নামে একটি প্রিমিয়াম যোগ হয়। এ কারণে এমন অর্থায়নে সুদহার বাড়তে পারে। এর ফলে ব্যবসার খরচ বাড়বে।