গণতন্ত্র মঞ্চের রোড মার্চে পদে পদে বাধা হামলা

গণতন্ত্র মঞ্চের রোড মার্চে পদে পদে বাধা হামলা

ঢাকা থেকে দিনাজপুর-রংপুর অভিমুখে দ্বিতীয় দিনের রোডমার্চ করেছে বিএনপি’র সঙ্গে আন্দোলনে থাকা জোট গণতন্ত্র মঞ্চ। গতকাল সকালে সিরাজগঞ্জের সদর উপজেলায় রোডমার্চ শুরুর আগে সংবাদ সম্মেলন করে দলটি। এদিন সকালে সিরাজগঞ্জ শহরের মুক্তির সোপানে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিলেও বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল মোড় গোলচত্বর এলাকায় সমাবেশ করে গণতন্ত্র মঞ্চ।

নেতারা জানান, আওয়ামী লীগ ও প্রশাসনের বাধার কারণে তারা মুক্তির সোপানে সমাবেশ করতে পারেননি। তাই শহরের বাইরে হাটিকুমরুলে গিয়ে তাদের সমাবেশ করতে হয়েছে। এরপর বিকালে বগুড়ার শিবগঞ্জের মোকামতলায় পূর্বনির্ধারিত সমাবেশের স্থান পরিবর্তন করে জয়পুরহাট সড়কের মোড়ে অস্থায়ী মাছের বাজার এলাকায় সমাবেশ করে গণতন্ত্র মঞ্চ। শিবগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ একই স্থানে সমাবেশ ডাকায় পুলিশের অনুরোধে এই সিদ্ধান্ত নেয় তারা। বগুড়ায়ও বাধা এবং হামলার শিকার হয়েছে রোডমার্চের গাড়ি।

গতকাল রোডমার্চের অংশ হিসেবে সংবাদ সম্মেলন ও সমাবেশ থেকে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশের নামে তাদের সমাবেশে পদে পদে বাধা দিচ্ছে। যেখানেই গণতন্ত্র মঞ্চ সমাবেশ ডাকে সেখানেই আওয়ামী লীগ পাল্টা শান্তি সমাবেশ ডাকে। নেতারা বলেন, তারা আমাদের সমাবেশ বানচাল করতে চায়।

তারা পুলিশ দিয়ে দমন-পীড়ন করে হামলা মামলা দিয়ে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি করেছে। আজকে সমস্ত বিরোধী দলের উপরে এই অত্যাচার চলছে। বিরোধী দল আন্দোলন করেছে, তাদের ওপর অত্যাচার চলছে।

গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, আমরা বিভিন্ন জায়গায় সমাবেশ করার জন্য পুলিশের অনুমতি চেয়েছি। আওয়ামী লীগ সমাবেশ করবে এ কারণে আমাদের অনুমতি দিচ্ছে না। সিরাজগঞ্জে সমাবেশ কর‍তে পারছি না আওয়ামী লীগের বাধার কারণে। আওয়ামী লীগ বাধা দিচ্ছে আর পুলিশ তা কার্যকর করছে। কৌশলে তারা সমাবেশের অন্যত্র জায়গার কথা বললেও বাস্তবে আওয়ামী লীগ যে বাধা দিচ্ছে সেই বাধা তারা কার্যকর করছে। এটাই বর্তমানে পুলিশের ভূমিকা।

তিনি বলেন, করাতিপাড়ায় আমরা সমাবেশ করবো তা আগে থেকেই ঘোষণা করেছি। সেটা পুলিশ জানে। আওয়ামী লীগ সেখানে হঠাৎ করে শান্তি সমাবেশ ঘোষণা করলো- তাই পুলিশ সেখানে আমাদের অনুমতি দেয়নি। পুলিশকে অন্য জায়গায় সমাবেশ করার ব্যবস্থা করতে জানালে সেটাতেও অপারগতা প্রকাশ করেছে।

আওয়ামী লীগের সহযোগী হিসেবে পুলিশ কাজ করছে দাবি করে জোনায়েদ সাকি বলেন, যারা হামলাকারী, মহড়া দেয় তাদের ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থাই তারা গ্রহণ করছে না। বিরোধী দলের কণ্ঠ দমন করা, সভা-সমাবেশে বাধা দেয়া, মিছিলে হামলা দেয়া এই কাজগুলো আওয়ামী লীগ করছে আর তার সহযোগী হিসেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে।

গণতন্ত্র মঞ্চের প্রধান সমন্বয়ক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, আমরা রোডমার্চে বিভিন্ন জায়গায় বাধার সম্মুখীন হয়েছি। টাঙ্গাইলেও হয়েছি, সিরাজগঞ্জেও হলাম। তারা আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে দিচ্ছে না, তারা বাধা তৈরি করছে। সরকার এতটাই জনবিচ্ছিন্ন, বেসামাল ও এতটাই অস্থির, এতটাই তারা আতঙ্কের মধ্যে আছেন যে, কোনো গণতন্ত্র মঞ্চের মতো সবারই একটা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ, শান্তিপূর্ণ রোডমার্চ, শান্তিপূর্ণ অবস্থান তারা করতে দিতে চান না।

তিনি বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চ সরকারের পরিবর্তন চায়, শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন চায়। পাশাপাশি আইন ব্যবস্থা, নির্বাচন ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সব কিছুর সংস্কার করতে হবে। সমাবেশে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমরা মিটিং করবো সেখানে পাল্টা মিটিং দেয়। আমরা ঢাকা থেকে যেখানে যেখানে মিটিং করতে চাই সেখানে তারা করতে দিচ্ছে না।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ভোট খেয়ে ফেলেছে। কোনো ধরনের ভোট দিতে দেয় না। দেশের একটা মানুষ নাই যে, আওয়ামী লীগকে দেখতে পারে। বিদেশের বড় বড় গণতন্ত্রের দেশগুলোও বলছে তোমরা সুষ্ঠু ভোট করো। আগে অত্যাচার করতো র‍্যাব তাই র‍্যাবের উপরে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এবার সুষ্ঠু ভোট কর‍তে যারা না চায়, জনগণের ভোট কেড়ে নেয় তাহলে তাদের কাউকে আমেরিকায় ঢুকতে দেয়া হবে না। তাদের ভিসা কেড়ে নেয়া হবে।

এদিন রোডমার্চে অংশ নিয়ে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ কায়সার, জেএসডি’র ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন পাটোয়ারীসহ গণতন্ত্র মঞ্চের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। এদিকে বগুড়ায় সমাবেশে করার স্থানে স্থানীয় যুবলীগ সমাবেশ করে। পরে অন্যস্থানে সমাবেশ করে গণতন্ত্র মঞ্চ। ওই সমাবেশ শেষে রোডমার্চের একটি গাড়ি হামলার শিকার হয়।