চট্টগ্রামে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ, সর্বোচ্চ মৃত্যু ও আক্রান্ত

চট্টগ্রামে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ, সর্বোচ্চ মৃত্যু ও আক্রান্ত

চট্টগ্রামে চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১২ জন। এর মধ্যে চলতি মাসে (জুলাই) মারা গেছেন তিন জন। এটি গত তিন বছরের প্রথম ছয় মাসে সর্বোচ্চ মৃত্যু। এ বছরের শুরু থেকে বুধবার (০৫ জুলাই) পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬৬১ জন। গত তিন বছরের প্রথম ছয় মাসে এটি সর্বোচ্চ সংক্রমণ।

মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বুধবার (০৫ জুলাই) সকাল ৮টা পর্যন্ত ৪৮ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ সময়ে মারা গেছেন একজন। বর্তমানে ১২৬ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে গত ১ জানুয়ারি থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৬১ জন। একই সময়ে ২০২২ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ২৫ জন। ২০২০ সালে পাঁচ জন এবং ২০২১ সালে কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হননি। আগের বছরগুলোতে একই সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যাননি।

চলতি বছর আক্রান্তদের মধ্যে জানুয়ারিতে ৭৭, ফেব্রুয়ারিতে ২২, মার্চে ১২, এপ্রিলে ১৮, মে ৫৩, জুনে ২৮২ এবং জুলাইয়ে ১৯৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে নগরীতে ৪৬১ জন ও উপজেলায় ২০০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৩৩৮, নারী ১৬৯ ও শিশু ১৫৪ জন। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন ১২ জন। এর মধ্যে জুলাই মাসে তিন, জুন মাসে ছয় এবং জানুয়ারিতে মারা গেছেন তিন জন। যা মৃত্যুর দিক থেকে গত তিন বছরের প্রথম ছয় মাসে সর্বোচ্চ।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি)-এর সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ‘চট্টগ্রামে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ। এ বছর জানুয়ারি থেকে সারা বছরই ডেঙ্গুর প্রকোপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আক্রান্তের হারের দিক থেকেও অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি। যা রীতিমতো আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠেছে। এমন পরিস্থিতি থাকলে সামনে ডেঙ্গু সংক্রমণ আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিআইটিআইডিতে যেসব রোগী ভর্তি হচ্ছেন এর মধ্যে নগরীর ইপিজেড, উত্তর কাট্টলী, নিউ মনসুরাবাদ ও আকবর শাহ এলাকা থেকে বেশি রোগী আসছেন। কী কারণে এসব এলাকায় এবার ডেঙ্গু রোগী বেশি, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নজর দিতে হবে। ডেঙ্গু একটি এডিস মশাবাহিত রোগ। এই রোগ থেকে রক্ষায় এডিস মশা ধ্বংস করতে হবে। একইভাবে যেসব স্থানে এডিস মশা জন্মায় সেসব স্থান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে হবে।’

বিআইটিআইডি সূত্র জানায়, এই হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য পৃথক কর্নার তৈরি করা হয়েছে। প্রথমে ১০টি বেড নিয়ে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য পৃথক বেড করা হয়। রোগী বেশি হওয়ায় শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি করে ২০টি করা হয়। এর মধ্যে ১০টি পুরুষ এবং ১০টি নারীদের জন্য।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ‘প্রতিদিনই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হচ্ছেন রোগীরা। এবার আক্রান্তের হার অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি। যা আতঙ্কের বিষয়। দিন দিন আক্রান্তের হার বাড়ছে। ডেঙ্গু হচ্ছে মশাবাহিত রোগ। ডেঙ্গু কমাতে হলে মশা নিধন করতে হবে। মশা নিধনের জন্য ইতিমধ্যে সিটি করপোরেশনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। মশা নিধন কর্মসূচি জোরদার করা না হলে এবার ডেঙ্গু পরিস্থিতি অন্যান্য বছরের তুলনায় ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।’

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র আফরোজা জহুর বলেন, ‘সিটি করপোরেশন মশা নিধন কর্মসূচি পালন করছে। নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে এই কর্মসূচি চলমান আছে। আমাদের চারপাশে যেসব জায়গায় এডিস মশা জন্মায় সেসব জায়গায় যাতে এডিস মশা জন্মাতে না পারে, সে ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হতে হবে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও নগরবাসীর সমন্বিত উদ্যোগে এডিস মশার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বিশেষ করে পরিষ্কার ও বদ্ধ পানি এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র। তাই বসতবাড়ির আশপাশে ডাবের খোসা, ফুলের টব, ছাদবাগান ও ফ্রিজের নিচের ট্রেতে তিন দিনের বেশি পানি যাতে জমে না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাসাবাড়ি, ছাদ-আঙিনা নিজ নিজ উদ্যোগে পরিষ্কার রাখতে হবে। এটি সবার দায়িত্ব।’