আলেমদের ছেড়ে দাও, নইলে গদি থাকবে না: হেফাজত আমীর

আলেমদের ছেড়ে দাও, নইলে গদি থাকবে না: হেফাজত আমীর

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেছেন, সময় শেষ হয়ে এসেছে। আলেমদের আর জেলে রাখতে পারবেন না। আজকে বন্দি আলেমের মুক্তির দাবি গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। আমি সরকারকে বলবো, যদি নিজেদের ভালো চান, অবিলম্বে কারাবন্দি সকল আলেমকে মুক্তি দিন। হয়রানি বন্ধ করুন। না হলে অবস্থা করুণ হবে। যদি গদি টেকাতে চাও। অতি দ্রুত আলেমদের মুক্তি দাও। জাতির কাছে ক্ষমা চাও। নিজেদের মুক্তির পথ বের করো।

শনিবার (২২ জুলাই) রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে কাজী বশির মিলানায়তনে শায়খুল হাদিস পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত মাওলানা মামুনুল হকসহ কারাবন্দি সকল ওলামায়ে কেরামের মুক্তি, দেশব্যাপী আলেম ওলামাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং আলেমদের মধ্যে বৃহত্তর ঐক্য প্রতিষ্ঠায় করণীয় নির্ধারণে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

হেফাজত আমীর আরো বলেন, এই দেশ স্বাধীন হয়েছে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ইনসাফ কায়েমের জন্য।

অথচ দেশে ন্যায় ও ইনসাফ কল্পনাও করা যায় না। সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ, বল প্রয়োগের মাধ্যমে দেশকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিবেন না। সমঝোতার মাধ্যমে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করুন।

তিনি বলেন, আলেমরা আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পরও মুক্তি পাচ্ছে না। নতুন মামলা দিয়ে আটকিয়ে রাখা হচ্ছে। কঠোর গোয়েন্দা নজরদারি ও প্রশাসনিক চাপ প্রয়োগ করে দেশের কওমি মাদরাসাগুলোকে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় রাখা হয়েছে। জুমার খুতবা ও ওয়াজ-মাহফিল নিয়ন্ত্রণ করার বারবার চেষ্টা হয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের ধর্মীয় ও নাগরিক স্বাধীনতাও খর্ব করা হয়েছে।

সমাবেশের সভাপতি ও শায়খুল হাদীস পরিষদের সভাপতি মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, আজকে ওলামায়ে কেরামদের ঘর থেকে বের হওয়া কষ্টকর। বের হলেই গ্রেপ্তার করা হয়। গোটা দেশ আজ কারারুদ্ধ। শুধু মামুনুল হক নয়, গোটা দেশকে কারারুদ্ধ অবস্থা থেকে বের করতে হবে। আমাদের যেটুকু সামর্থ আছে তা নিয়ে নামতে হবে। আপনারা যদি বাঁচতে চান অতি দ্রুত কারাবন্দিদের মুক্তি দেন। সরকারকে সতর্ক করবো। এখনো সময় আছে। মুক্তি দেন। অন্যথায় আপনাদের মুক্তি মিলবে না। যারা ইসলামের বিপক্ষে অবস্থান নিবেন। তাদের বিরুদ্ধে আলেমরা গর্জে উঠবে। এসময় কর্মসূচি ঘোষণা করে তিনি বলেন, আমাদের প্রথম কর্মসূচি হলো মামুনুল হকসহ আলেমদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ৩০শে আগস্ট প্রধানমন্ত্রী ও জেলা উপজেলায় স্মারকলিপি দেয়া হবে। কথা না শুনলে রাজপথে নামতে বাধ্য হবো।

সমাবেশে হেফাজত ইসলামের মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমান বলেন, আমার বিশ্বাস আজকে ঐক্য হয়ে গেছে। সকল আলেমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কারাবন্দি ওলামাদের মুক্তি চায়। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে আলেমদের মুক্তি করা যাবে না। আজকে আলেমদের হাজিরা দিতে দিতে নাজেহাল অবস্থা। আমরা চাই মামলা প্রত্যাহার করা হোক। তাদের হাজিরা থেকে মুক্ত দেয়া হোক। আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে মামুনুল হককে মুক্ত করতে চাই। মুক্ত করে ছাড়বো।

হেফাজত ইসলামের ঢাকা মহানগরের সাবেক সভাপতি ও সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জোনায়েদ আল হাবিব বলেন, রাস্তাঘাটে যাকে যেখানে পেয়েছে সেখানে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অনেককে নামাজ থেকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমি ১৯ মাস জেল খেটেছি। কি দোষ করেছিলাম। কি অন্যায় করেছিলাম। আমরা কি এদেশের ঘর জামাই। আমরা বন্যায় ভেসে আসিনি। আমরা যেখানে যাই ফুলের মালা দেয়া হয়। তোমরা যেখানে যাও সেখানে জুতার মালা দেয়া হয়। জনগণ তোমাদের বয়কট করেছে। শাপলা চত্বরের মতো আরেকবার ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামতে হবে। মাঠে না নামলে আলেমদের মুক্তি দিবে না। মুক্তি কাদের কাছে চাবো। যাদের ক্ষমতা হারানো দামামা বেজে গেছে। আমাদের যদি রাজপথে নামতে হয় আর পালানোর জায়গা পাবেন না।

সমাবেশে শায়খুল হাদিস পরিষদের সভাপতি তাফাজ্জুল হক আজিজ বলেন, ঐক্যের বিকল্প নাই। আমাদের একদফা হলো আলেম ওলামেদের মুক্তি। সরকারকে বলবো, আপনারা যদি সম্মানের সাথে বিদায় নিতে চান। তাহলে মামুনুল হকসহ সকল আলেমদের মুক্তি দেন। না হলে আন্দোলনের গণবিস্ফোরণ সৃষ্টি হবে। তখন আর সামাল দিতে পারবেন না।

খেলাফত মজলিস বাংলাদেশের আমীর মাওলানা ইসমাইল নূরপুরী বলেন, আমাদের ঐক্যের সূচনা হয়েছে। এই সরকার খুনি সরকার। ২০১৩ সালে হাজার হাজার আলেমদের শহীদ করেছে। এই সরকার পাগল হয়ে গেছে। তাদের পাবনা পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রী এক কথা মনে রাখবেন এক মাঘে শীত যায় না। আপনার আমাদের নেতাদের মুক্তি দিতেই হবে। না হলে গদি ছাড়তে হবে। সে সময় আর বেশিদূর নয়।

খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা জালালউদ্দিন বলেন, একদিন মামুনুল হক মুক্তি পাবে। কারাগার পড়ে থাকবে। একদিন আপনাদের পতন হবে। তখন আপনার কারাগারে যাবেন। কেউ ঠেকাতে পারবে না। কারণ জালেমদের আল্লাহ ক্ষমা করে না।

সদ্য কারামুক্ত হেফাজত ইসলামের সাবেক সহ সভাপতি মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন রাজি বলেন, আমরা যদি নিজেদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে পারি তাহলে দেশের এমন কোন সরকার নাই। আলেমদের বন্দি করে রাখবে। আমাদের মধ্যে ঐক্য নেই। তারা আমাদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। আমাদের ঐক্য নেই বলেই তারা সুযোগ নিচ্ছে। নিজের মধ্যে ঐক্যের ভিত মজবুত করতে পারলে তাহলে খাচা ভেঙে আমাদের নেতাদের মুক্ত করতে পারবো। বাংলাদেশে নিয়ে বিদেশীরা ছেলেখেলা করছে। আমি চাই সরকারের পরিবর্তন হোক। আমরা চাই যারাই ক্ষমতায় আসুক তাদের উলামাদের পক্ষে থাকতে হবে। ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তবেই আমরা তাদের আমরা সমর্থন দিবো।

হেফাজত ইসলামের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, আজকে আমেল ওলামাদের মুক্তি করতে না পারলে বাংলাদেশের অস্তিত্ব থাকবে না। তাদের মুক্ত করতে হলে কঠোর কর্মসূচি দিতে হবে। সোজা আঙ্গুলে ঘি ওঠে না। আঙ্গুল বাঁকা করতে হবে। তবেই সরকার বাধ্য হবে আলেমদের মুক্তি দিতে। রক্ত বহু দিয়েছি। আর রক্ত দিতে চাই না। এখন প্রতিশোধ নিতে চাই।

সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা ইসমাইল নূরপুরী, খেলাফত আন্দোলনের আমীর মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, খতমে নবুওয়ত সংরক্ষণ কমিটি বাংলাদেশের আমীর মাওলানা আব্দুল হামীদ পীর সাহেব মধুপুরী,জমিয়তে ওলামায়ে ইমলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, হাটহাজারী মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা শুআইব জমীরি, অভিভাবক পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা রফিকুর রহমান, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমীর মাওলানা আহমাদ আলী কাসেমী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমাদ, জমিয়তে ইসলাম বাংলাদেশের সহ সভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসূফী, জাতীয় দ্বীনি শিক্ষা বোর্ডের মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ আলী, ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা মোস্তফা তারেক হাসান প্রমুখ।