খুমেক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ওষুধের দোকানিদের দফায় দফায় সংঘর্ষ, আহত ২০

খুমেক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ওষুধের দোকানিদের দফায় দফায় সংঘর্ষ, আহত ২০

সত্তর টাকার ওষুধে সাত টাকা কম না নেয়ায় তুলকালাম কাণ্ড ঘটে গেল খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে। কলেজের কে-৩২ ব্যাচের একজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মেডিকেলের সামনের এক ওষুধের দোকানদার শতকরা ১০ টাকা কম না নেয়ায় সোমবার রাতে এ ঘটনাটি ঘটে। পরে দফায় দফায় হামলা, পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে খোদ পুলিশের সামনেই। মেডিকেল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খুমেক হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরাও যোগ দেয়। সর্বশেষ আল্টিমেটাম দিয়ে হামলাকারীদেরকে গ্রেফতারের দাবিতে হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। অপরদিকে, মেডিকেল শিক্ষার্থীদের হামলায় ওষুধের দোকানের মালিক-কর্মচারীসহ ১৫/২০ জন আহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী, ওষুধের দোকানদার ও মেডিকেল শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা যায়, সোমবার সন্ধ্যায় হাসপাতালের সামনের মেসার্স বিপ্লব মেডিসিন কর্ণারে একজন মেডিকেল শিক্ষার্থী কিছু ওষুধ কিনতে যান। সেখানে ওষুধের মোট মূল্য হয় ৭০ টাকা। কিন্তু ওই সত্তর টাকার ওষুধে শতকরা ১০ টাকা কমিশন দিয়ে ৬৩ টাকা রাখার অনুরোধ জানান সবুজ সরকার নামের ওই মেডিকেল শিক্ষার্থী। কিন্তু মাত্র ৭০ টাকার ওষুধে কোন কমিশন নেয়ার সুযোগ নেই জানালে এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে বাক-বিতন্ডা হয়। এর কিছুক্ষণ পর আরও কিছু মেডিকেল শিক্ষার্থীকে নিয়ে ওই দোকানে এসে অবৈধ ওষুধ বিক্রি হয়, ওষুধের দাম বেশি রাখা হয় এমন মন্তব্য করে কেন ওষুধের দাম কম রাখা হলো না এ জন্য চাপ দেয়া হয়।

একপর্যায়ে আশপাশের ওষুধের দোকানদাররা এগিয়ে আসলে উভয়পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। এ সময় মেডিকেলের তিন শিক্ষার্থী আহত হওয়ার খবর ক্যাম্পাসে পৌঁছালে আরও শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে ওষুধের দোকানের ওপর হামলা চালানো হয়। খবর পেয়ে সেখানে সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ওসির নেতৃত্বে একদল পুলিশ গেলে পুলিশের সামনেই ওষুধের দোকানদারদের দফায় দফায় হামলা চালায় মেডিকেল শিক্ষার্থীরা। পরে ওষুধের দোকানদারদের সাথে এলাকাবাসী একত্রিত হয়ে পাল্টা হামলা করলে সংঘর্ষ তুমুল আকার ধারণ করে। এ ঘটনার পর হাসপাতালের সামনের ওষুধের দোকানগুলো বন্ধ ছিল এবং পুরো এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল।

এদিকে সোমবার (১৪ আগস্ট) সাইফুল ইসলাম অন্তর ও মো. শামসুজ্জোহা সজীব এ প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে ওষুধ ব্যবসায়ী-শিক্ষার্থী সংঘর্ষের ঘটনার প্রতিবাদে চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দাবিতে কর্মবিরতির ডাক দেয়। বিজ্ঞপ্তিতে একই সাথে সংঘর্ষের ঘটনার জন্য তারা প্রশাসন, কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেছেন।

খুলনা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. মেহেদী নেওয়াজ সাংবাদিকদের জানান, ওষুধ কেনা নিয়ে এক দোকানীর সাথে খুলনা মেডিকেল শিক্ষার্থীর বাকবিতন্ডা ঘটে। একপর্যায়ে দোকানী তাকে মারধর করেন। বিষয়টি এরপর সে অন্য ছাত্ররা জেনে তারা ওষুধের দোকানে যায়। তখন ওষুধের দোকানীরা তাদেরকেও মারধর করে। এতে ১৫ জন ছাত্র আহত হয়েছে। ঘটনার বিচার ও হামলাকারীদের গ্রেফতারে ছাত্ররা আল্টিমেটাম দিয়েছে।

খুমেক হাসপাতালের ইন্টার্ণ চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি সাইফুল ইসলাম অন্তর ও সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জোহা সজিব বলেন, ওষুধের দোকানদারদের হামলায় একজন চিকিৎসকসহ সাতজন মেডিকেল শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এরা হলেন ডা. হাসিব, সবুজ সরকার, হাসান ফেরদৌস, মেহেদী, আসিফ, তাহসিন ও নাসির ফুয়াদ।

এছাড়া বাংলাদেশ কেমিস্টস্ এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির পরিচালক মো. জিল্লুর রহমান জুয়েল বলেন, মেডিকেল শিক্ষার্থীদের হামলায় ওষুধের দোকানের মালিক-কর্মচারীদের মধ্যে অন্ততঃ ১৫/২০ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৯ জনের নাম পাওয়া গেছে। এরা হলেন আল-আমিন, বিপ্লব, শাওন, ইসরাফিল, হৃদয়, সোহাগ, মোস্তফা ও মাসুদুর রহমান মাসুদ।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (সাউথ) শেখ ইমরান জানান, পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। হামলাকারীদের আটক করার চেষ্টা চলছে। মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ওষুধের দোকানের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।