কমছেই না পেঁয়াজের ঝাঁজ, চড়া সবজি, চাল ও আলুর বাজার

কমছেই না পেঁয়াজের ঝাঁজ, চড়া সবজি, চাল ও আলুর বাজার

পেঁয়াজের ঝাঁজ যেন কমছেই না। দামে সেঞ্চুরি ছুঁয়েছে কয়েকদিন হলো। সবজির বাজারও চড়া। অধিকাংশ সবজির দামই ৬০ টাকার উপরে। পাঙাস ও তেলাপিয়া মাছের দামতো সাধারণের নাগালের বাইরে চলে গেছে। এছাড়া মোটা চাল, ডাল, আলু কিনতেও নগরবাসীকে গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। ক্রেতাদের একই প্রশ্ন-এভাবে প্রতিটি জিনিসের দাম বাড়ছে কেন? কমবেই বা কবে? রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সাধারণ ক্রেতারা খাদ্যপণ্য কিনছেন প্রয়োজনের অর্ধেক করে। তাতেও মিলছে না স্বস্তি। ক্রেতারা বলছেন, এখন বাজারে আসতেই ভয় করে। এক হাজার টাকায় দুই দিনের বাজার করা যায় না।

এজন্য রাস্তায় বিক্রি হওয়া নিম্নমানের সবজিগুলো কিনতে হয়। অনেক সময় কম দাম পাওয়ার আশায় বাজার ভাঙার মুহূর্তে সবজি ও মাছ কিনতে আসার কথা জানিয়েছেন তারা।

এদিকে বাজারে বেশি দামেই বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। গত সপ্তাহে পণ্যটির দাম প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা থাকলেও আজ তা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। দাম কমবে কি-না সে নিয়েও আশঙ্কা রীতিমতো। অন্য সবজির বাজারও চড়া। বড় সাইজের প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। এছাড়া বাজারে ফুলকপি ৬০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা, করলা ৮০-১০০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা, মরিচ ১৬০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, আলু ৪৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে কলমি শাক প্রতি আঁটি ১৫ টাকা, পাটশাক প্রতি আঁটি ১৫ টাকা, বরবটি প্রতি কেজি ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পুঁইশাক মান অনুযায়ী বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা কেজি দরে। এটি শুক্রবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষিমার্কেট কাঁচাবাজারের চিত্র।

ওদিকে মাছের দামও সাধারণের নাগালের বাইরে। বাজারে বড় সাইজের পাঙাস বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকায়। ইলিশ মাছ কেজিপ্রতি ১০০০ টাকা, রুই ৪০০ টাকা, কই ২৫০ টাকা, ট্যাংরা ৭০০ টাকা, শিং ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২৪০ টাকা এবং চিংড়ি মাছ বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৬৫০ টাকায়।

অন্যদিকে চলতি সপ্তাহে খুচরা পর্যায়ে সব ধরনের মসুর ডালের দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। গত সপ্তাহেও প্রতি কেজি মোটা মসুর ডাল ৯০ থেকে ৯৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। সেই ডালের কেজি এখন ৯৫ থেকে ১০৫ টাকা। মাঝারি দানার মসুর ডালের কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায় উঠেছে। আর ভালো মানের, অর্থাৎ সরু দানার মসুর ডালের কেজি পড়ছে এখন ১৩৫ থেকে ১৪৫ টাকা। গত সপ্তাহে এই ডালের খুচরা দাম ছিল ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা কেজি।

মোটা চালের দামও বেড়েছে। গুটি স্বর্ণা জাতের মোটা চাল বেশিভাগ দোকানে পাওয়া যাচ্ছে না। পাইজাম ও বিআর-২৮ চাল এখন মানভেদে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহে ৫২ থেকে ৫৮ টাকার মধ্যে ছিল।

তবে মাংসের দাম অপরিবর্তীত রয়েছে। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৮০ টাকায়, লেয়ার মুরগি ৩৮০ টাকায়, সোনালী মুরগি ৩৫০ টাকা আর দেশি মুরগি প্রতি কেজি ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকায় আর খাসির মাংস প্রতি কেজি ৯৮০ থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কথা হয় মিরপুর-২ এ বাজার করতে আসা বেলায়েত হোসেনের সঙ্গে। কয়েকটি দোকানে দরদাম করতে দেখা গেল। বললেন, আমি বেশি করে পেয়াজ কিনি। কারণ কখন দাম বাড়ে তার ঠিক নেই। কিন্তু ইদানিং আর বেশি করে কিনতে পারি না। এখন দুই একদিন পর পর একটু একটু করে কিনি। প্রতিবেলা পাতে মাছ অথবা মাংস রাখলেও এখন মাছ খাওয়াও কমিয়ে দিয়েছি। সবজির কথা কী বলবো। সেটাও দিনকে দিন নাগালের বাইরে যাচ্ছে।

হারুনুর রশিদ মজুমদার। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। বাজার করছিলেন কাওরান বাজারে। তবে তিনি ফুটপাথে যে অর্ধপচা বা কিছুটা নষ্ট হয়েছে এমন সবজি থেকে কিছু কেনার চেষ্টা করছিলেন। ইতিমধ্যে তিনি কিছু কম দামে কাঁচা মরিচ কিনতে পেরেছেন। করুণ মুখে বললেন, কম দাম পাওয়ার আশায় বাজার ভাঙার মুহূর্তে সবজি ও মাছ কিনতে আসি। যেই জিনিস আগে কখনো কিনতে হয়নি সেই জিনিস এখন কিনতে হচ্ছে। লজ্জায় কাউকে এসব বলাও যায় না।

তিনি বলেন, আমাদের ইনকাম তো বাড়েনি। তিন সদস্যের পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকি। তাতেও চলতে পারি না। দাম কোন হিসেবে বাড়ছে সেটাও ধরতে পারি না। কারো কাছ থেকে উত্তর পাই না। আগে যে পরিমাণ বাজার সদাই করতাম, এখন তার অর্ধেক করেও কুলাতে পারি না।

এদিকে কাওরান বাজারে সবজি কিনতে আসা এক সংবাদকর্মী বলেন, বাজারে আসতেই ভয় করে। বাজারে এলে নিমিষেই দুই-এক হাজার টাকা শেষ হয়ে যায়। এক হাজার টাকায় দুই দিনেরও বাজার করা যায় না। সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।