চুলা জ্বলছে না রাজধানীর অনেক এলাকায়

চুলা জ্বলছে না রাজধানীর অনেক এলাকায়

ঢাকা, ২০ মে (জাস্ট নিউজ) : রমজানে রাজধানীবাসীকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ করা হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা থেকে এমন ঘোষণায় অনেকেই আশান্বিত হয়েছিলেন; অন্তত নির্বাচনের বছরে এবারের রমজান ভালোভাবেই কাটবে। কিন্তু দুর্ভোগ যাদের নিত্যসঙ্গী, তাদের প্রত্যাশা কল্পনাই থেকে যায়। অন্তত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকাবাসীর ক্ষেত্রে তাই বলা যায়। রমজানের শুরুর দিন থেকেই নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ তো দূরের কথা, গ্যাসের অভাবে চুলাই জ্বলছে না কোনো কোনো এলাকায়। গ্যাস সঙ্কটের কারণে পবিত্র এ মাসে একনিষ্ঠভাবে সিয়াম পালন করার পরিবর্তে রান্নার জন্য গ্যাসের অপেক্ষায় থাকতে হয় তাদের। কখন গ্যাস আসবে, চুলা জ্বলবে এ দুশ্চিন্তায় কাটে সারাক্ষণ। সঙ্কটের কারণ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের একেকজন একেক কথা বললেও সমস্যাটি দেখার যেন কেউ নেই।

রাজধানীর শ্যামলী, আদাবর, খিলজী রোড, বাবর রোড, পরীবাগ, মীরপুর, কাজীপাড়া, পীরেরবাগ, শেওড়াপাড়া, আনসার ক্যাম্প, মগবাজার, মধুবাগ, রামপুরা, বনশ্রী, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, শ্যামপুর, মুগদা, স্বামীবাগ, শনিরআখড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় তীব্র গ্যাস সঙ্কট চলছে। এসব এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, দিনের বেলায় বলতে গেলে পাইপলাইনে গ্যাস থাকে না। ইফতারসামগ্রী নিয়ে অপেক্ষায় থাকেন অনেকেই। কিন্তু গ্যাস না থাকায় বাইরে থেকে সামান্য ইফতারি কিনে ইফতার করতে হয়।

আবার রাতে যে গ্যাস আসে, তা দিয়ে এক ঘণ্টার রান্নার কাজ চার ঘণ্টায়ও শেষ করা যায় না। এসব এলাকায় বসবাসকারীদের দুর্ভোগ এখন চরমপর্যায়ে চলে গেছে। কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেও কোনো সদুত্তর মিলছে না। রাজধানীতে গ্যাস বিতরণকারী কোম্পানি তিতাস থেকে বলা হচ্ছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি গ্যাস সরবরাহ করতে গিয়ে আবাসিকসহ শিল্পকারখানায় কম গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। আবার কেউ বলছেন, যেসব এলাকায় গ্যাস সরবরাহের পাইপলাইন পুরনো ও সরু ওইসব এলাকায় গ্যাসের চাপ কম থাকবে।

প্রকৃতপক্ষে গ্যাসের উৎপাদন চাহিদা অনুযায়ী না বাড়লেও অবৈধ সংযোগ বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। একজন গ্রাহক বলেন, দুই ইঞ্চি পাইপলাইন দিয়ে বৈধভাবে আগে গ্যাস সংযোগ নিয়েছিলেন ১০০ গ্রাহক। এখন ওই পাইপের সাথে অবৈধভাবে আরো প্রায় ৫০০ গ্রাহক গ্যাস সংযোগ নিয়েছেন। এর ফলে একই পাইপলাইন দিয়ে গ্যাস সরবরাহ করতে গিয়ে গ্যাসের চাপ কমে যাচ্ছে। এভাবেই গ্যাস সঙ্কট বেড়ে যাওয়ায় গ্রাহকের দুর্ভোগ চরম আকারে চলে গেছে।

মিরপুরের পীরেরবাগ এলাকার শামীম হায়দার জানান, সকালে বলতে গেলে পাইপলাইনে কোনো গ্যাস থাকে না। এ অবস্থা সারা দিনই চলে। বিকেলের দিকে পাইপলাইনে সামান্য গ্যাস থাকে, তবে তা দিয়ে পানি পর্যন্ত ফুটানো যায় না। গ্যাস না থাকার কারণে তাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। সামর্থ্যবানেরা রাইস কুকার, কেউবা সিলিন্ডার দিয়ে ইফতারি তৈরি করছেন। সমস্যায় পড়েছেন নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত গ্রাহকেরা।

আদাবর আবাসিক এলাকার হালিমা আক্তার বলেন, ইফতারির সবকিছু আয়োজন করে বিকেলে রান্নাঘরে যান। কিন্তু গ্যাস না থাকায় চুলা জ্বালানো যায় না। ফলে ইফতারিও তৈরি করা হয়নি। তিনি জানান, সবচেয়ে বেকায়দায় পড়েছেন তার শিশু সন্তানদের নিয়ে। দিনের বেলায় সামান্য দুধ বা সুজি গরম করার মতোও গ্যাস থাকে না। স্বাস্থ্যকর নয় জেনেও বিস্কুটসহ তৈরি খাবার কিনে শিশুদের সামনে দিতে হচ্ছে। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আদাবর এলাকা থেকে বাসা বদল করে অন্য এলাকায় চলে যাবেন। তবে সামর্থ্য অনুযায়ী বাসা ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। এখন তিনি পড়েছেন উভয় সঙ্কটে।

রমজানের দুর্ভোগের বিবরণ দিতে গিয়ে শনিরআখড়া এলাকার সিরাজুল ইসলাম জানান, প্রথম রোজা থেকে তার বাসায় গ্যাস নেই। আগে টিমটিম করে চুলা জ্বলত। কিন্তু প্রথম রোজা থেকে গ্যাস পুরোপুরি উধাও হয়ে যায়। প্রথম ও দ্বিতীয় রমজান হোটেলের খাবার ও আত্মীয়স্বজনদের বাসা থেকে রান্না করে এনে রোজা রাখতে হয়েছে।

তিতাসের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দিনের বেলা যেখানে স্বাভাবিক সময় গ্যাসের চাপ ছয় পাউন্ড থাকে, সেখানে এখন আছে মাত্র দুই পাউন্ড। পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত শুক্রবার ২৬০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু প্রয়োজন ছিল ৩০০ কোটি ঘনফুটের বেশি। ওই সূত্র জানায়, আবাসিকে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করতে গত বৃহস্পতিবার থেকে ১৮টা বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ আছে। আর আগে থেকেই চারটা সারকারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। তার পরও গ্যাসের সঙ্কট চলছে।

এ দিকে রমজানে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সিএনজি স্টেশন ছয় ঘণ্টা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত আগে থেকেই নেয়া হয়েছে। গত শুক্রবার থেকেই বিকেল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সিএনজি ফিলিং স্টেশন বন্ধ রাখা হচ্ছে। এতে আবাসিক গ্যাসের চাপ একটু বাড়বে বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু প্রকৃত চিত্র এর বিপরীত। বিশেষ করে ইফতারসামগ্রী তৈরি করার আগে বেশির ভাগ এলাকায় গ্যাসের চাপ কমে যাচ্ছে, যা দিয়ে চুলা জ্বলছে না।

তিতাসের এক কর্মকর্তা জানান, গ্যাস সরবরাহ কম। এ জন্য চাপও কম। তবে জাতীয় গ্রিডে এলএনজি যোগ হলে এই সমস্যা থাকবে না। চট্টগ্রামে যখন এলএনজি যোগ হবে তখন পুরো গ্যাস রাজধানী ও এর আশপাশে দেয়া হবে। এলেঙ্গা থেকে সরাসরি রাজধানীতে গ্যাস ঢুকবে। তখন আর এই সমস্যা থাকবে না আশা করি। সুত্র: নয়াদিগন্ত।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/০৯৫৭ঘ.)