ঢাকায় বিএনপি নেতাকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ

ঢাকায় বিএনপি নেতাকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ

রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার টাউন হল এলাকায় বিএনপি নেতা আবদুর রশিদ সর্দারকে পিটিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে দলটি। গতকাল সকালে হরতালের সমর্থনে ঝটিকা মিছিল শেষে ফেরার পথে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পুলিশের সামনে থেকে রশিদকে তুলে নিয়ে যান বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে তাকে পিটিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় একটি নির্মণাধীন ৮ তলা ভবন থেকে নিচে ফেলে দেয়া হয়। এমন অভিযোগ করেছেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র সদস্য সচিব আমিনুল হক। তিনি বলেছেন, মো. আবদুর রশিদ আদাবর থানার ৩০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি’র স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক। মিছিল শেষে ফেরার সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আবদুর রশিদকে পিটিয়ে এবং নির্মাণাধীন একটি ভবনের ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করেন। 

মোহাম্মদপুর ক্লাবের সামনে কয়েকজন যুবককে অবস্থান করতে দেখা যায়। সার্বক্ষণিকভাবে ভবনটির সামনে নজর রাখছিলেন তারা। এবিজেড নামে একটি ডেভেলপার কোম্পানির নির্মাণাধীন ৮তলা ভবনের দায়িত্বে থাকা একজন জানান, ঘটনার পর থেকেই বাসার দারোয়ান ভয়ে বাসা ছেড়ে পালিয়েছেন। ভবনটিতে একজন প্রকৌশলী থাকেন। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সূত্র জানায়, সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ৯টার দিকে হঠাৎ করে এক ব্যক্তি দৌড়ে ভবনটির ভেতরে প্রবেশ করেন। পরে ৫-৬ জন মিলে তাকে ধাওয়া দেন। তারা জানতে চান ভেতরে কেউ প্রবেশ করেছে কিনা। তারা দায়িত্বরত একজনকে ধাক্কা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। এরপর ওপর থেকে একজনকে মারধর এবং চিৎকারের শব্দ শুনি। কিছুক্ষণ পর ভবনের ওপর থেকে নিচে ধপ করে কিছু একটা পড়ার শব্দ শুনতে পাই। এ সময় আমি ভয় পেয়ে পালিয়ে যাই। পরে এসে দেখি বাসার চারপাশ ঘিরে রেখেছে পুলিশ।

স্থানীয় এক নারী বাসিন্দা জানান, পাশেই আমাদের বাসা। সকাল ৯টার কিছু আগে হঠাৎ করে গুলির শব্দ শুনতে পাই। এরপর বাইরে বেরিয়ে দেখি বাসার সামনে মানুষজনের ভিড়। পরে কথা বলে জানতে পারি বিএনপি’র এক নেতা বাসাটিতে প্রবেশ করলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাকে মারধর করেন। একপর্যায়ে ছাদ থেকে ফেলে দেয়। কেউ বলছে ওপর থেকে পড়ে গেছে। আরেক বাসিন্দা জানান, হঠাৎ আগুন আগুন বলে চিৎকার শুনি। এরপর গুলির শব্দ। বাইরে এসে শুনি ককটেল ফাটানো হয়েছে। এ সময় কাছে এগিয়ে দেখি পরিস্থান নামে একটি পরিবহনে আগুন নেভাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস। এরপর ভবনটির সামনে দৌড়ে যাই। গিয়ে শুনি এক ব্যক্তিকে ওপর থেকে কয়েকজন যুবক ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিয়েছে। এভাবে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা প্রায় ১২টার বেশি সময় ধরে মরদেহটি ঘটনাস্থলে পড়ে ছিল। কেউ তাকে হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা করেননি। আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা পর মরদেহটি পুলিশ এসে নিয়ে যায়। 

ঘটনাস্থলে থাকা এক ভ্যানচালক বলেন, হঠাৎ দেখি দুজন ব্যক্তি বাসটি থামিয়ে আগুন দিয়েছে। এ সময় আমরা দৌড়ে গলির ভেতরে চলে যাই। এ সময় আমাদের সামনে দিয়ে এক ব্যক্তি ভবনের ভেতরে প্রবেশ করেন। কিছুক্ষণ পর শুনি তিনি ভবনের ছাদ থেকে লাফ দিয়ে পাশের ভবনে যাওয়ার সময় নিচে পড়ে মারা যান। অথচ লাফিয়ে পড়লে তার পেটের বাম পাশে গোল ছিদ্র হয়ে নাড়িভুড়ি বেড়িয়ে আসার কথা না। 

এদিকে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ জানিয়েছে, পরিস্থান পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয়ার অভিযোগে কয়েকজন ধাওয়া দেয়ার সময় নিজেকে বাঁচাতে একটি নির্মাণাধীন ভবনে প্রবেশ করেন বিএনপি নেতা আব্দুর রশিদ সর্দার। পরবর্তীতে সেখান থেকে পড়ে মারা যান তিনি। তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) আজিজুল হক মানবজমিনকে বলেন, ঘটনার পর স্থানীয়দের কাছ থেকে জেনেছি, নিহত ব্যক্তি বাসে আগুন দিয়েছেন। পরবর্তীতে স্থানীয়রা তাকে ধাওয়া দিলে আত্মরক্ষার্থে ওই ভবনে উঠেছিলেন। পরে পাশের কোনো ভবনে যাওয়ার সময় নিচে পড়ে যান বলে জেনেছি। এর আগে কি হয়েছে সে বিষয়ে তথ্য পাইনি। নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। তবে কীভাবে মৃত্যু হয়েছে বা তাকে মারধর করা হয়েছে কিনা সেটি তদন্ত করলে পাওয়া যাবে।