এপির রিপোর্ট

বাংলাদেশে উত্তেজনা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে

বাংলাদেশে উত্তেজনা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবিতে আন্দোলন করছে বিরোধী দল বিএনপি। শনিবার মহাসমাবেশ আহ্বান করে তারা। সেই সমাবেশ চলাকালে সহিংসতায় একজন পুলিশ সদস্য ও বিএনপির এক কর্মী নিহত হন। এতে বাংলাদেশে উত্তেজনা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করে আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দল। ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রোববার বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যু বাদ দেয়াসহ চারটি ইস্যুতে রাজি না হওয়া পর্যন্ত বিরোধী দলের সঙ্গে কোনো আলোচনা হবে না। তার দলের দাবি, নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত সরকারের প্রধান থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং নির্বাচন কমিশনে যেকোনো রকম পরিবর্তন প্রত্যাখ্যান করেন তারা। বার্তা সংস্থা এপির রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে এসব কথা লিখেছে অনলাইন গার্ডিয়ান।

এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে কর্তৃপক্ষ গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠিয়েছে। মিডিয়ার রিপোর্টে বলা হয়েছে, সহিংসতায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে তিনজন। এর মধ্যে রোববার রাজধানী ঢাকায় অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

হরতালে আহত হয়েছেন কয়েক ডজন মানুষ। পুলিশ বলেছে, শনিবার বিরোধী দলের লাখো নেতাকর্মীর সমাবেশ চলার সময় সহিংসতায় নিহত হয়েছেন একজন পুলিশ সদস্য। আহত হয়েছেন অনেকে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া বিষয়ক ডেপুটি কমিশনার ফারুক হোসেন বলেছেন, প্রায় ৯ ঘন্টা আটক রাখার পর খালেদা জিয়া নেতৃত্বাধীন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে রোববার। শনিবারের সহিংসতায় ১৩০০ মানুষের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হচ্ছে। স্থানীয় রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাতভর বিরোধী দলীয় বিভিন্ন নেতার বাড়ি ঘেরাও করে রাখা হয়।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে রোববার রাতে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে তোলা হয়। সেখানে তার জামিন আবেদন করা হলে কোর্ট তা প্রত্যাখ্যান করে জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। শনিবারের সহিংসতার সময় ভাংচুরের অভিযোগে তার জড়িত থাকার বিষয়ে আইনি পরবর্তী প্রক্রিয়া মুলতবি করে আদালত।

পুলিশের দাবি, শনিবারের সমাবেশ চলাকালে প্রধান বিচারপতির সরকারি বাসভবনে হামলা করেছে বিরোধী দলের একদল সমর্থক। এই মামলায় জড়ানো হয়েছে মির্জা ফখরুলকে। তাকে আটকের নিন্দা জানিয়েছে দল এবং মঙ্গলবার থেকে দেশের সড়ক ও গণপরিবহনে তিনদিনের জন্য অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।

ওদিকে রোববার হরতাল চলাকালে ঢাকায় নিরাপত্তা বৃদ্ধি করে পুলিশ। তা সত্ত্বেও কমপক্ষে তিনটি যানবাহনে আগুন দেয়া হয়েছে। এদিন ঢাকায় বিরোধী দলীয় একজন কর্মী এবং লালমনিরহাটে ক্ষমতাসীন দলের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। বলা হয়েছে, এদিন ঢাকা ও অন্য দুটি শহরে কমপক্ষে ৪২টি গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে। কমপক্ষে ১০০ জন আহত হয়েছেন। এদিন ঢাকা ও দেশের অন্য সাতটি জেলা থেকে বিরোধী দলের কমপক্ষে ২০০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এ ঘটনায় সব পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র। দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের সহকারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বলেছেন, সম্ভাব্য ভিসা নিষেধাজ্ঞার জন্য সব রকম সহিংস ঘটনা পর্যালোচনা করবে ওয়াশিংটন।

উল্লেখ্য, কয়েক দশক ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মধ্যে বিরোধ চলছে। কয়েক মাস ধরে শান্তিপূর্ণ সরকারবিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ করছে বিরোধী দল। এ সময়ে প্রধানমন্ত্রীর সরকারের ওপর চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিরোধীদের কণ্ঠকে দমন করার জন্য সরকারের সমালোচনা করেছেন সমালোচক ও অধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলো। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সেই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।

উন্নয়ন এজেন্ডায় জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় ফেরার আশা করছেন। তিনি বলেছেন, সংবিধানের অধীনে তার সরকারের তত্ত্বাবধানেই নির্বাচন হবে। কিন্তু বিরোধীদের দাবি শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুতি দিলেও নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। সম্প্রতি পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যেকোনো মূল্যে তাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যারা বাধাগ্রস্ত করবেন তাদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়ার হুমকি দিয়েছে যুযক্তরাষ্ট্র। এর আওতায় আসবেন আইন প্রয়োগকারী এজেন্সি, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের সদস্যরাও।