এএফপির রিপোর্ট

বাংলাদেশে রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটাতে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগ

বাংলাদেশে রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটাতে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগ

নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অচলাবস্থা কাটানোর উদ্যোগ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস থেকে বলা হয়েছে, দেশের বড় তিনটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে মিটিং আহ্বান করেছেন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।

জানুয়ারিতে বাংলাদেশে নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি এবং তার মিত্ররা বলেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ না করা পর্যন্ত এবং নির্বাচন তদারক করতে একটি নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত তারা নির্বাচন বর্জন করবে। ২৮শে অক্টোবর বিরোধী দলের মহাসমাবেশ পুলিশ পণ্ড করে দেয়ার পর থেকে বিএনপির বিরুদ্ধে বড় রকমের দমনপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। বিএনপি বলছে, তখন থেকেই তাদের প্রায় সব শীর্ষ নেতা ও কমপক্ষে ১১ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

দুই সপ্তাহ ধরে চলমান অবরোধ। দেশকে গ্রাস করেছে সহিংসতা। এমন সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস বলেছে, রাষ্ট্রদূত পিটার হাস তিনটি বড় রাজনৈতিক দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে মিটিং আহ্বান করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র চায় শান্তিপূর্ণ উপায়ে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন। সহিংসতা পরিহার এবং সংযম চর্চা করার জন্য সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে পারে যেকোনো দিন। তার আগে যুক্তরাষ্ট্র এমন উদ্যোগ নিয়েছে। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক প্রফেসর মোহাম্মদ তানজিমুদ্দিন খান বলেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এটা হলো রাজনৈতিক অচলাবস্থা ভাঙ্গাতে যুক্তরাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক ও সরাসরি উদ্যোগ। তিনি আরও বলেন, চলমান রাজনৈতিক সংকটের একটি সমাধান বের করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এ উদ্যোগ। এবার তারা তিন বড় দলের প্রতি শর্তহীন সংলাপের আহ্বানের মধ্য দিয়ে তাদের ভূমিকাকে একটি আনুষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। এ বিষয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও তৃতীয় বৃহৎ দল জাতীয় পার্টির কারো পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। কিন্তু এ মাসের শুরুর দিকে বিএনপির সঙ্গে যেকোনো সংলাপের কথা উড়িয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

যেহেতু প্রায় পুরো শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাই সংলাপে বিএনপির প্রতিনিধিত্ব কে করবেন তা পরিষ্কার নয়। বিএনপি বলেছে, ২৮শে অক্টোবর থেকে পুলিশ তাদের কমপক্ষে ১১,২৫০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে আছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জেলে থাকায় এবং তার ছেলে তারেক রহমান বিদেশে থাকায় দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন মির্জা ফখরুল। তবে সারাদেশে কী পরিমাণ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সে বিষয়ে কোনো পরিসংখ্যান দেয়নি পুলিশ। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ বলেছে, ২৮শে অক্টোবর থেকে তারা বিএনপির ২০০০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। সংঘর্ষে কমপক্ষে চারজন বিক্ষোভকারী এবং একজন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে বিএনপির দাবি সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ১৩ জন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ক্ষমতার ১৫ বছরে অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দেখাশোনা করছেন। কিন্তু গণতান্ত্রিকভাবে পশ্চাৎগামী হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পশ্চিমা দেশগুলো।