জিএসপি নিয়ে বাংলাদেশকে সতর্কবার্তা ইউরোপীয় ইউনিয়নের

শ্রম অধিকারের পাশাপাশি মত প্রকাশ, সমাবেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার তাগিদ

শ্রম অধিকারের পাশাপাশি মত প্রকাশ, সমাবেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার তাগিদ

শুধু শ্রম আইন সংশোধন আর শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠা করলেই হবে না। নিশ্চিত করতে হবে মানবাধিকারও। যেখানে বিরোধীদের মত প্রকাশ এবং সমাবেশের স্বাধীনতা থাকবে। তবেই ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) অব্যাহত থাকবে বাংলাদেশের পণ্যে জিএসপি সুবিধা। এমন তথ্যই উঠে এসেছে ইইউ’র এক প্রতিবেদনে।

মানবাধিকার, শ্রম অধিকার, পরিবেশ, জলবায়ু ও সুশাসনের ওপর আন্তর্জাতিক মানকে সম্মান জানানোর শর্ত সাপেক্ষে জিএসপি সুবিধা দেওয়া হয়। এ সুবিধার কারণেই বাংলাদেশের পণ্যের বড় রপ্তানি গন্তব্য হয়ে উঠেছে ইইউ। বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট পণ্য রপ্তানির প্রায় ৪৫ শতাংশ গেছে ইইউভুক্ত ২৭ দেশে।

গত ২৪ নভেম্বর বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও কম্বোডিয়ার জিএসপি বিষয়ক অগ্রগতি রিপোর্ট প্রকাশ করে ইইউ। 

ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিবেদনে নিষেধাজ্ঞার হুমকি না থাকলেও আছে বেশ কিছু সর্তকীকরণ এবং পরিত্রাণের পরামর্শ। বাংলাদেশ প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়, ইইউতে জিএসপি সুবিধা অব্যাহত রাখতে হলে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তি বাস্তবায়ন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সমাবেশ ও সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতার সুরক্ষা এবং নাগরিক সমাজের দায়িত্ব পালনের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির কথা। 

নির্যাতনের অভিযোগ, অন্যায় আচরণ, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের বিষয়ে তদন্তের আহ্বান জানানো হয়। 
বাংলাদেশকে শ্রমনীতি বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ মান নিশ্চিত করার কথা বলেছে ইইউ।

ইউরোপীয় কমিশনের মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতি বিষয়ে মূল উদ্বেগগুলো হচ্ছে—ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন, ট্রেড ইউনিয়নের প্রতিনিধি নির্বাচন এবং অবাধে ট্রেড ইউনিয়নের কার্যক্রম চালানোর অধিকারের আইনি বাধা; ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের জন্য ন্যূনতম সদস্যের প্রয়োজনীয়তা এবং রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) ট্রেড ইউনিয়নের অনুপস্থিতি। মূল্যায়নে এসব বাধা দূর করার তাগিদ দেওয়া হয়। পাশাপাশি কারখানা ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যগত সুরক্ষার ঘাটতি সমাধানের কথা বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে সহিংসতা, হয়রানি, বরখাস্ত, অপর্যাপ্ত তদন্ত, মামলা ও কর্মীদের গ্রেপ্তারের মতো ইউনিয়নবিরোধী কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া শ্রম পরিদর্শনে সক্ষমতা ও সামর্থ্যের ঘাটতি দূর করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। শিশু ও জোরপূর্বক শ্রমের বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে ইউরোপীয় কমিশনের এ প্রতিবেদনে।

সাম্প্রতিক সময়ে জিএসপি সুবিধা পাওয়া তিন দেশ—বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া ও মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়িয়েছে ইইউ। কারণ হিসেবে ইইউ বলছে, দেশগুলোতে মৌলিক মানবাধিকার ও শ্রম অধিকারের মানদণ্ডের প্রতি সম্মান দেখানোর ঘাটতির বিষয়টি জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও সুশীল সমাজের প্রতিবেদনে প্রমাণিত। ইইউ বলেছে, মানবাধিকার ও শ্রম অধিকারের প্রতি সম্মান জানাতে ব্যর্থ হলে সুবিধাভোগী দেশগুলো তাদের জিএসপি সুবিধা হারাতে পারে।

প্রায় ৩০ পাতার ওয়ার্কিং পেপারে মিয়ানমারে সামরিক সরকারের ওপর আরও কঠোর হওয়ার বার্তা দেয়া হয়েছে।  পাশাপাশি বলা হয়েছে, পরিস্থিতির উন্নতি না হলে জিএসপি সুবিধা ফেরত পাবে না কম্বোডিয়া।