বাড়ছে চালের দাম, মূল্যস্ফীতির স্থিতিশীলতা ধরে রাখা নিয়ে সংশয়

বাড়ছে চালের দাম, মূল্যস্ফীতির স্থিতিশীলতা ধরে রাখা নিয়ে সংশয়

গত ডিসেম্বরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি আগের মাসের তুলনায় সামান্য কমেছে। এ মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে হয়েছে ৯ দশমিক ৪১ শতাংশ, যা গত ৮ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এ তথ্য প্রকাশ করে। তবে বাজারে চালের দাম বাড়তে থাকায় মূল্যস্ফীতি যে সামান্য কমে স্থিতিশীল হয়েছে, তা কতটা ধরে রাখা যাবে তা নিয়ে সংশয় আছে।

সোমবার (১৫ জানুয়ারি) মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মুদ্রাস্ফীতি এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রধানমন্ত্রী সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোর জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের নির্দেশনা দিয়েছেন। বিশেষ করে আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে যাতে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং রোজায় যেসব পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়, সেগুলোর সরবরাহ যাতে স্বাভাবিক থাকে সে বিষয়ে কাজ করার জন্য তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন।

এর আগে দায়িত্ব নেয়ার পরই নতুন সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিকে সরকারের সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেন। আর খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার কথা বলেছেন। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, দেশে কোনো সিন্ডিকেট থাকতে পারবে না।

বিবিএসের তথ্যমতে গত বছরের অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। নভেম্বরে কমে হয় ৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ। গত এপ্রিলে এটি ছিল ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ। কিন্তু মে মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। ডিসেম্বরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমে হয়েছে ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ, আগের মাসে যা ছিল ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

কিন্তু চালের দাম বাড়তে থাকায় মূল্যস্ফীতি যে সামান্য কমে স্থিতিশীল হয়েছে, তা কতটা ধরে রাখা যাবে তা নিয়ে সংশয় আছে। আবার দুই মাস পর রোজা শুরু হবে। পর্যাপ্ত মজুত থাকার পরও খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ে চালের দাম রকমভেদে কেজিতে দুই থেকে ছয় টাকা পর্যন্ত বেড়েছে চালের দাম। এজন্য ধানের বাড়তি দরের অজুহাত দিচ্ছেন মিলাররা। তারা বলছেন, হঠাৎ করেই সরবরাহ কমে গেছে বাজারে। অন্যদিকে, খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা দুষছেন আড়তদার-মিলারদের।

ঢাকার বাজারেও এক সপ্তাহ আগে আগে যে মোটা চালের কেজি ৫০-৫২ টাকা ছিল, তা এখন বিক্রি হ হচ্ছে ৫৪-৫৫ টাকায়। মাঝারি মানের চালের কেজি ৫৫-৫৮ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬০-৬২ টাকা। আর মিনিকেট ও নাজিরশাইলের মতো সরু চাল ৬২-৭৫ টাকা থেকে বেড়ে ৬৮ থেকে ৮০ টাকা হয়েছে। কিছু বিশেষ ধরনের সরু চাল অবশ্য বিক্রি হচ্ছে আরো বেশি দামে।

এক মিলার বলেন, এখন চাল কেনাবেচা শুরু হয়েছে। সেক্ষেত্রে চালের মূল্য ২ থেকে ৩ টাকা বেড়েছে। এটা ধানের দর অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয়েছে। এক আড়তদার বলেন, যারা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক, তারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় আড়ৎ খুলেছে। সেগুলোতে চাল ও ধান মজুত করা শুরু করেছে তারা। ফলে উভয়েরই দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে।

বাড়তি দামের পেছনে মিলার আর বড় ব্যবসায়ীদের কারসাজি আছে বলে অভিযোগ খুচরা ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের। এক ব্যবসায়ী বলেন, মিলেই চালের দর বাড়তি। ওই দামেই আমাদের কেনা লাগছে। সেই অনুযায়ী বিক্রি করতে হচ্ছে। এক ক্রেতা বলেন, গত সপ্তাহের চেয়ে চলতি সপ্তাহে চালের মূল্য কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে। আর বস্তাপ্রতি ২০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এভাবে বাড়তে থাকলে তো আমরা চলতে পারবো না।

এই ভরা মৌসুমেও শীতের সবজির দাম বেশ চড়া। গোল আলুর কেজি এখন ৮০ টাকা, বেগুনের কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা, বড় আকারের লাউ প্রতিটি ১০০ টাকা, টমেটোর কেজি ৬০ থেকে ৯০ টাকা, শিম ৯০ টাকা কেজি, মটরশুটি কেজি ১৫০ টাকা কেজি, ফুলকপি বড় সাইজ ৬০ থেকে ৭০ টাকা প্রতিটি, কাঁচামরিচ ১০০ টাকা কেজি, নতুন দেশি পেঁয়াজ কেজি ১০০ টাকা। গরুর মাংসের দাম নির্বাচনের আগে ছিল ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি। এখন ৭০০ টাকার নিচে নেই।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন চালের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই৷ এ বছর ধানের ভালো উৎপাদন হয়েছে। আলুর দাম বেড়ে গেছে। খেজুরের দাম রোজা আসার আগেই বেড়ে গেছে। এটা ব্যবসায়ীদের কারসাজি। আর সামনে রোজা৷ পণ্য ঠিক সময়ে আমদানি করা না গেলে ব্যবসায়ীরা রোজার পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেবে। তারা সব সময় অজুহাত খোঁজে। এটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঠিকমতো কাজ করতে হবে। এখন নতুন মন্ত্রীরা কী করেন দেখি।

অর্থনীতিবিদেরা বলেছেন, মূল্যস্ফীতি সামান্য কমলেও এতে স্বস্তির কিছু নাই। তারা মনে করেন, চালের দাম কোনো কারণ ছাড়াই বাড়তে শুরু করেছে। আর চাল মূল্যস্ফীতিতে বড় ভূমিকা রাখে। সামনে রোজা৷ এই সময়ে ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে, বিশেষ করে আমদানি পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। বিবিএস মূল্যস্ফীতির যে হিসাব দেয় প্রকৃত মূল্যস্ফীতি আরো বেশি। নিম্নবিত্ত মানুষ খাদ্যপণ্যসহ যেসব পণ্য কেনে, তার দাম বেশি। ফলে তাদের ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ বেশি।