বাংলাদেশ ও পাকিস্তানসহ বিশ্বজুড়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায় যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানসহ বিশ্বজুড়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায় যুক্তরাষ্ট্র

পাকিস্তানে নির্বাচন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেছেন-বাংলাদেশ ও পাকিস্তানসহ বিশ্বের সর্বত্র অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। আগামী ৮ই ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানে জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচন। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশের ওপর যেমন ভিসা নিষেধাজ্ঞার মতো চাপ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তানের ক্ষেত্রে তেমনটা হচ্ছে না। এ তথ্য তুলে ধরে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করলে বেদান্ত প্যাটেল ওই মন্তব্য করেন। ওই সাংবাদিক জানতে চান-গত কয়েক মাস ধরে আপনাকে এবং ম্যাথিউ মিলারকে বহুবার বলতে শুনেছি যে, আপনারা অবাধ নির্বাচন চান। পাকিস্তানে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছেন আপনারা। কিন্তু আমি একটি বিষয় শুনিনি। পাকিস্তানে নির্বাচনের আর মাত্র দুই সপ্তাহ বাকি। এমনকি বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে পাকিস্তানে সবচেয়ে সম্মানীত রাজনীতিবিদদের অন্যতম জাভেদ হাশমিকে। আমি বলতে চাই ভুলে গেছেন (সাবেক প্রধানমন্ত্রী) ইমরান খান ও তার সমর্থকদের।

ইমরানকে দেয়ালের সঙ্গে মিশিয়ে ফেলা হয়েছে পুরোপুরি। তাকে বলা হচ্ছে বিপথগ্রস্ত হিসেবে। তিনি খুব জনপ্রিয়। গত ২৫ বছরে আমি শত শত দুর্নীতির রিপোর্ট প্রকাশ করেছি। কিন্তু পাকিস্তানে যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে তা নিয়ে আপনারা একবারের জন্যও নিন্দা জানাননি। আপনারা শুধু সেখানে একটি অবাধ নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছেন। পাকিস্তানে কি ঘটছে সেদিকে কি দৃষ্টি দেবেন আপনারা?

এ প্রশ্নের জবাবে বেদান্ত প্যাটেল বলেন, আমাকে কিছু বিষয়ে কথা বলতে হবে। প্রথমত, পাকিস্তানের ভবিষ্যত নেতা নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেবেন পাকিস্তানি জনগণ। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি আমাদের আগ্রহ অব্যাহত থাকবে। একটি মুক্ত ও স্বাধীনগণমাধ্যম যে সুস্থ গণতন্ত্রকে ভিত্তি করে গড়ে তোলা অত্যাবশ্যকীয় প্রতিষ্ঠান, তা নিয়েও আমরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছি না। এতে সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়। আমরা বিশ্বাস করি অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচন কভারিং করায় সাংবাদিকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা, স্বাধীনভাবে সমাবেশ এবং সংবাদ মাধ্যমের ওপর কোনো বিধিনিষেধ থাকলে তার বিরুদ্ধে আমরা অব্যাহতভাবে উদ্বেগ জানাই। পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের স্বঘোষিত লক্ষ্য হলো একটি পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ নির্বাচন। সেক্ষেত্রে এমন হলে তা হবে বেমানান।

এ পর্যায়ে তার কাছে আবার প্রশ্ন করা হয়-শুক্রবার পাকিস্তান সফরে আসছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। যেসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রতা, খুব শক্তিশালী মিত্রতা আছে, সেসব দেশে তিনি সফরে যান না। পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র। বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের যে পরিস্থিতি এবং সেখানে যা ঘটছে তার প্রেক্ষিতে ইরানকে দেয়ার মতো কি বার্তা দেবেন আপনারা?

এ প্রশ্নের জবাবে বেদান্ত প্যাটেল বলেন, অবশ্যই এ বিষয়ে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ ও তাদের পররাষ্ট্র বিষয়ক কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু বিশ্বজুড়ে যেকোনো দেশের উচিত হবে ইরানকে তার অসৎ কাজ বন্ধ করা এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির কাজ বন্ধ করতে আহ্বান জানানো। লোহিত সাগরে তাদের কর্মকাণ্ডে আন্তর্জাতিক সমুদ্রপথ এবং বৈধ বাণিজ্য অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। এসব কর্মকাণ্ডে সমর্থন দেয়া বন্ধ করতে ইরানকে চাপ দিতে যেকোনো দেশকে আমরা স্বাগত জানাবো।

তার কাছে আরও জানতে চাওয়া হয়-বৃহস্পতিবার পাকিস্তানি পররাষ্ট্র সচিব একই রকম ঘটনায় তৃতীয়বার ঘোষণা দিয়েছেন। কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পর পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব ভারতকে আন্তঃজাতীয় হত্যাকাণ্ডের জন্য ভারতকে দায়ী করেছেন। আমার মনে হয় না এটা ভারত সরকারের নীতি। এসব আন্তঃদেশীয় হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে কি হচ্ছে অথবা কি চলছে?

বেদান্ত প্যাটেল এ বিষয়ে বলেন-সুনির্দিষ্ট এই রিপোর্ট সম্পর্কে আমি অবহিত নই। এ বিষয়ে পাকিস্তান সরকার এবং ভারত সরকারের কাছে জানার জন্য বলতে পারি।

তার কাছে আবার প্রশ্ন করা হয়-গত বছর সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষণা করে বাংলাদেশ ইস্যুতে ভিসা নিষেধাজ্ঞার বিষয়। যখন পাকিস্তান ইস্যু এসেছে তখন কেন আপনারা একই ঘোষণা দিচ্ছেন না? কেন দুটি দেশের ক্ষেত্রে এই ভিন্ন আচরণ করা হচ্ছে?

বেদান্ত প্যাটেল বলেন, আমি মনে করি না এক্ষেত্রে ভিন্নভাবে দেখা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, প্রতিটি দেশ আলাদা। সেখানকার বিষয়ে প্রিভিউ করতে পারবো না এখান থেকে। তবে আবারও বলি, আমরা বাংলাদেশ এবং অবশ্যই পাকিস্তানসহ বিশ্বজুড়ে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চাই।