কারা হেফাজতে ১৩ নেতা–কর্মীর মৃত্যু

ময়নাতদন্ত, অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে কি না: জানতে চান হাইকোর্ট

ময়নাতদন্ত, অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে কি না: জানতে চান হাইকোর্ট

কারা হেফাজতে বিএনপির ১৩ জন নেতা–কর্মীর মৃত্যুর অভিযোগ তদন্তে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানবাধিকারের রক্ষক বা কর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করে কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে রিটের শুনানি মুলতবি করেছেন হাইকোর্ট। সোমবার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এক সপ্তাহের জন্য শুনানি মুলতবি করেন।

শুনানিকালে রিট আবেদনকারীর আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, এগুলোর (ঘটনাগুলোর) মধ্যে ময়নাতদন্ত হয়েছে কয়টির? ইউডি কেস (অপমৃত্যুর মামলা) হয়েছে কি না—তথ্যগুলো দেন। সম্পূরক আকারে দিতে পারেন।

কারা হেফাজতে গত কয়েক মাসে বিএনপির ১৩ জন নেতা–কর্মীর মৃত্যুর অভিযোগ নিয়ে ঘটনাগুলো তদন্তে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানবাধিকারের রক্ষক বা কর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করে কমিটি গঠন ও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা চেয়ে ১১ ফেব্রুয়ারি রিটটি করা হয়। বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল আবেদনকারী হয়ে ওই রিটটি করেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী কায়সার কামাল ও মো. মাকসুদ উল্লাহ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।

শুনানিকালে আদালত বলেন, এ বিষয় নিয়ে (যে ঘটনাগুলো নিয়ে রিট) রিট চলে কি না? তখন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, রিট চলে। আদালত বলেন, এগুলোর মধ্যে ময়নাতদন্ত হয়েছে কয়টির? অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে কি না? তখন এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, আরেকটি বাড়তি দায়িত্ব। তারা অপমৃত্যুর মামলা করবে না? তখন আদালত বলেন, তারা করুক বা না করুক—তথ্যগুলো দেন। চাইলে সম্পূরক আকারে দিতে পারেন।  

একপর্যায়ে আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, কে মরেছে, সাদা না কালো—এটি দেখার দরকার নেই। এই ঘটনাগুলোয় সবারই লজ্জিত হওয়া উচিত যে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। এসব বন্ধ হওয়া উচিত।

‘অপারেশন ক্লিন হার্ট’ নামে ২০০৪ সালের অভিযানের প্রসঙ্গ তুলে ধরে শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, সবাই জানে যে ২০০৪ সালে অপরেশন ক্লিন হার্ট হয়েছিল। সেখানে কয়েক শ লোকের হার্ট ক্লিন হয়ে গিয়েছিল। ধরার পর বিকেল বেলায় হার্ট ক্লিন হয়েছে, এরপর রাতের বেলাই দাফন করা হয়েছে। তখন সরকার (তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার) এটাকে উপভোগ করেছে, আইন করেনি। ২০১৩ সালে আইন হয়েছে। আবেদনকারী পক্ষ যেগুলো বলেছে, সে বিষয়ে প্রতিকারের জন্য আইন আছে।

২০১৩ সালের নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন তুলে ধরে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, আবেদনকারী পক্ষের উদ্বেগ, যুক্তি বা কিছু বলার থাকলে—তিনি প্রতিটি জায়গায় (যেখানে ঘটেছে) মামলা করতে পারেন। আইন তাকে এই অধিকার দিয়েছে। উনি (রিট আবেদনকারী পক্ষ) নিজেই তা করতে পারেন। উনারা (রিট আবেদনকারী পক্ষ) কী চেষ্টা করেছে রিপোর্ট আনার? উনারা মেডিকেল রিপোর্ট আনুক। পরে আদালত বলেন, এক সপ্তাহের জন্য মুলতবি করা হলো।

এর আগে ৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির নেতা রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেন, ‘গত তিন মাসে কারাগারে নির্যাতনে বিএনপির ১৩ নেতার মৃত্যু হয়েছে।

এরপর ১৩ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তারা (বিএনপি) বলুক, তালিকা দিক, কারা কারা মারা গেছে এবং তারা কোথায় কোথায় বিএনপির কী দায়িত্বে ছিল।’