মালয়েশিয়ায় শতাধিক বাংলাদেশি শ্রমিকের দুর্দশা

মালয়েশিয়ায় শতাধিক বাংলাদেশি শ্রমিকের দুর্দশা

মালয়েশিয়ায় অসহনীয় দুর্দশার শিকার কমপক্ষে ১০০ বাংলাদেশি শ্রমিক। তাদেরকে কাজের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নেয়ার কমপক্ষে তিন মাস পর্যন্ত কাজ দেয়া হয়নি। ফলে কুয়ালালামপুরের চেরাসে এসব বাংলাদেশি কঠিন দুর্দশার শিকার। অভিবাসী বিষয়ক অধিকারকর্মী অ্যান্ডি হল এ কথা বলেছেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন মালয়েশিয়া কিনি। এতে বলা হয়, অ্যান্ডি হল এক রিপোর্টে লিখেছেন ১০৪ জন শ্রমিককে নিয়োগ করে চেরাস ভিত্তিক একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠান। কিন্তু গত বছর নভেম্বরে তারা মালয়েশিয়ায় পৌঁছার পর আছেন কর্মহীন।

রিপোর্টে আরও বলা হয়, মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য অতিরিক্ত ফি দিতে হয়েছে এসব শ্রমিককে। এর পরিমাণ ১৯৫০০ থেকে ২১৭০০ রিঙ্গিত পর্যন্ত। তাদেরকে ভাল থাকা এবং উচ্চ বেতনের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। শ্রমিকদের বেশির ভাগই এই অর্থ পরিশোধ করেছেন নানাজনের কাছ থেকে ধার দেনা করে।

ফলে তারা ঋণের ফাঁদে আটকে পড়েছেন। একজন শ্রমিকের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন অ্যান্ডি হল। তিনি বলেছেন, তার সামনে আর্থিক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়। তিনি সেজন্য পরিবারকে আর্থিক সাপোর্ট দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই আশা ভেঙেচুরে গেছে। তিনি বলেন, আমি এখন ঋণের ভারে ন্যূব্জ। টাকা ধার করার সময় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম প্রতিমাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা শোধ করবো। সেই টাকা এখন পাঠাতে পারছি না। পাওনাদাররা আমার পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে।

ওই রিপোর্টে বলা হয়, এসব শ্রমিক এখন একটি নির্জন স্থানে অবস্থান করছেন। শতাধিক এই শ্রমিকের ব্যবহারের জন্য আছে একটিমাত্র টয়লেট। তাদেরকে খাবার হিসেবে দেয়া হয় ভাত, ডাল, আলুভর্তা। তাও পর্যাপ্ত নয়। কখনও চারদিন পর্যন্ত খাবার দেয়া হয় না। একজন শ্রমিক অভিযোগ করেন, তাকে চারদিন পর্যন্ত খাবার দেয়া হয়নি। তার অপরাধ তিনি প্রত্যাশিত কাজের বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন। এর শাস্তি দেয়া হচ্ছে তাকে এভাবে। এ ছাড়া কোম্পানির প্রতিনিধিরা বা নিয়োগকারীরা তাদেরকে শারীরিক বা মৌখিক নির্যাতন করে বলে উল্লেখ করেন শ্রমিকরা।

অ্যান্ডি হল বলেন, শারীরিক নির্যাতন, মৌখিক নির্যাতন, শ্রমিকদেরকে ভীতি প্রদর্শন সেখানে আতঙ্কের ও অনিরাপত্তার এক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। তিনি আরও লিখেছেন, নিয়োগকারী প্রতিনিধিদের মধ্যে অন্যতম একজন বাংলাদেশি ‘বস’। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে শ্রমিককে হত্যার হুমকি সহ সন্ত্রাসী নানা রকম হুমকি দেয়ার।

মালয়েশিয়া পৌঁছার পর শ্রমিকদের পাসপোর্ট জব্দ করেছে নিয়োগকারীরা। এর ফলে এসব শ্রমিক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছেন। তারা তাদের অধিকার বা সাহায্যের জন্য কারো কাছে যেতে পারছেন না। এর প্রেক্ষিতে তাদেরকে রক্ষা করতে অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করা এবং নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি প্রয়োজন। এরই মধ্যে ১৮ জন শ্রমিককে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তেরেঙ্গগানুতে। সেখানে প্রায় ৩০০ শ্রমিকের সঙ্গে রাখা হয়েছে তাদেরকে। এসব শ্রমিকের বেশির ভাগই কর্মহীন এবং তাদের সঙ্গে কোনো ডকুমেন্ট নেই। অ্যান্ডি হল লিখেছেন, মানবসম্পদ বিষয়ক মন্ত্রী স্টিভেন সিম এবং মন্ত্রণালয়ের অন্য কর্মকর্তারা এসব অভিযোগের তদন্ত করছেন। যারা আইন লঙ্ঘনের জন্য দায়ী হবেন, তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়ার অঙ্গীকার করেছেন তিনি।